দিনটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব ছিলেন আদর্শ বাঙালি নারীর প্রতিকৃতি। নির্লোভ, নিরহংকার ও পরোপকারী। পার্থিব বিত্তবৈভব বা ক্ষমতার জৌলুস কখনো তাকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সহধর্মিণী হয়েও তিনি ‘ফার্স্ট লেডি’ পরিচয়ে পরিচিত না হয়ে সব সময় সাদামাটা জীবনযাপন করতেন। তিনি গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করতেন। তিনি যে আদর্শ ও দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন, তা যুগে যুগে বাঙালি নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। আমি মনে করি, শুধু আমাদের দেশেরই নয়, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মেয়েরাও তার জীবনের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করতে পারবে।
দিবসটিতে সরকারি কর্মসূচি ছাড়াও আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন, এতিমদের মাঝে খাদ্য বিতরণ, আলোচনাসভা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক মিডিয়া বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে।
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল তার কবিতায় লিখেছেন, বিশ্বে যা কিছু চিরসুন্দর, কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। বেগম মুজিবের জীবনী বিশ্লেষণ করলে বিদ্রোহী কবির এ কবিতার যথার্থ প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায়। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব তার পিতামাতাকে হারান। ১৯৩৮ সালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি বঙ্গবন্ধুর শুধু সহধর্মিণীই ছিলেন না, ছিলেন সহযোদ্ধা ও কর্মপ্রেরণাদাত্রী। এ ত্যাগী নারী পরিবারের সব দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে জাতির সেবায় মনোনিবেশ করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। শুধু তা-ই নয়, রাজনীতির নানা দুঃসময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুকে দিয়েছিলেন গঠনমূলক পরামর্শ।
বঙ্গবন্ধুর সমগ্র রাজনৈতিক জীবনে ছায়ার মতো অনুসরণ করে তার প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অফুরান প্রেরণার উৎস হয়েছিলেন বেগম মুজিব। অনেক জটিল ও সংকটময় পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগিতা করেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে বাঙালির মুক্তিসংগ্রামকে এগিয়ে নিতে গৃহবন্দি অবস্থায়ও তিনি অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। আন্দোলন-সংগ্রামে বেগম মুজিব যে কর্তব্যনিষ্ঠা, দেশপ্রেম, দূরদর্শী চিন্তা, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন; এজন্য জাতির পিতার পাশাপাশি তিনিও চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
দিবসটি উপলক্ষ্যে আজ সকাল ৯টায় বনানী কবরস্থানে বঙ্গমাতার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, কুরআন খতম, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করবে আওয়ামী লীগ এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠন। বাদ জোহর আজিমপুর এতিমখানায় এতিমদের মাঝে খাদ্য বিতরণ করবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। বেলা ১১টা ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ‘বাঙালির মহীয়সী নারী শহিদ শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব’ শীর্ষক আলোচনাসভা এবং প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে শস্যবীজ বিতরণ করবে ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটি। বেলা ১১টায় জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে আলোচনাসভার আয়োজন করবে বন ও পরিবেশ উপকমিটি। একই সময় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ‘বঙ্গমাতা : শুদ্ধতম বাঙালি নারীর প্রতীক’ শীর্ষক আলোচনাসভার আয়োজন করবে যুবলীগ। দুপুর ২টায় বঙ্গবন্ধু অ্যঅভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মৎস্যজীবী লীগের আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। বিকাল ৪টায় একই স্থানে অসহায় ও দুস্থ নারীদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ করবে মহিলা আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী যথাযথ মর্যাদায় পালনে দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের আহ্বান জানিয়েছেন।