এ নিয়ে জেলায় ঝড়ে ১২ জনের প্রাণহাণির ঘটনা ঘটল। এর আগে বুধবার চৌগাছায় দুইজন, শার্শায় দুজন ও বাঘারপাড়ায় একজনের মৃত্যু হয়।
মণিরামপুর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, বুধবার রাতে ঝড়ের সময় গাছ পড়ে তার উপজেলার পাঁচজনের মৃত্যু হয়। বিষয়টি বৃহস্পতিবার বিকালে স্থানীয় প্রশাসনের নজরে আসে।
এরা হলেন- মণিরামপুর উপজেলার মশ্মিমনগর ইউনিয়নের পারখাজুরা গ্রামের ঋষিপাড়ার খোকন দাস (৭০) ও তার স্ত্রী বিজন দাসী (৬০), দফাদারপাড়ার ওয়াজেদ আলী (৫০) ও তার ছেলে মোহাম্মদ ইসা (১৫) ও আছিয়া বেগম (৭০)।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে মশ্মিমনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বলেন, ঝড়ের রাতে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বেরিয়ে গাছ চাপা পড়েন খোকন ও বিজন দাসী।
“নিরাপত্তার আশায় ঘর ছেড়ে খামারের মুরগীর খামারে অবস্থান নিয়েছিলেন ওয়াজেদ ও তার ছেলে ইসা। কিন্তু ওই ঘরের ওপরই গাছ পড়ে প্রাণ হারান বাবা-ছেলে।”
এছাড়া ঝড়ের সময় বারান্দায় ঘুমিয়ে ছিলেন বৃদ্ধা আছিয়া। ঝড়ে বারান্দার টালির ছাউনির উপর একটি গাছ আছড়ে পড়লে তাতে চাপা পড়ে তার মৃত্যু হয় বলে জানান আবুল হোসেন।
জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ বলেন, ঝড়ের কারণে বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় মণিরামপুরে পাঁজনের মৃত্যুর খবর আগে জানা যায়নি। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ শরিফীর আবুর সঙ্গে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে আরও মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারে বলে তিনি জানান।
মণিরামপুর থানার এসআই ফাতেউর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে তারা খবর পেয়ে এলাকায় যান। ততক্ষণে তিনজনের দাফন শেষ হয়েছে। বাকি দুইজনের সৎকারের কাজ চলছিল শ্মশানে।
গাছ চাপা পড়ে পাঁচ জনের মৃত্যুর ঘটনায় থানার এসআই দেবাশীষ একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন বলে জানান ফাতেউর।
এছাড়া শার্শায় ঝড়ের মধ্যে গাছ পড়ে ওই ইউনিয়নের জেলেপাড়ার গোপালচন্দ্র ও মহিপুরা গ্রামের মিজানুর রহমান মারা গেছেন বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার মণ্ডল জানান।
এর আগে যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাঁদপাড়া ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের খ্যান্ত বেগম (৪৫) ও তার মেয়ে রাবেয়া (১৩), বাগআচড়া ইউনিয়নের টেংরা গ্রামে মুক্তার আলি (৩৫), গোগা পশ্চিমপাড়ার ময়না খাতুন (২৫) এবং বাঘারপাড়ার বুদোপুর গ্রামে ডলি বেগমের (৪৮) মৃত্যুর খবর জানিয়েছিলেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
সুপার সাইক্লোন আম্পান শক্তি কিছুটা হারিয়ে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় রূপে বুধবার দুপুরের পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাত হানে। পরে রাতে এ ঝড় প্রবেশ করে বাংলাদেশে।
ঝড়ের মধ্যে প্রবল বাতাসে বহু গাছপালা ভেঙে পড়ে, ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েন দেশের অর্ধেকের বেশি গ্রাহক।
ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে এ পর্যন্ত আট জেলায় মোট ২২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, যাদের বেশিরভাগই ঝড়ে গাছ বা ঘর চাপা পড়ে মারা গেছেন।
এর মধ্যে যাশোরে ১২ জন, পিরোজপুরে ৩ জন, পটুয়াখালীতে ২ জন এবং ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, ভোলা, চাঁদপুর ও বরগুনায় একজন করে মারা গেছেন।