বাজেটে অর্থের সরবরাহ বৃদ্ধি ও তামাক বিরোধী সংগঠনগুলোর দাবির মুখে এ দুটি খাতে সম্পূরক শুল্ক বাড়াতে চায় এনবিআর। ইতোমধ্যে এনবিআর থেকে প্রস্তুতকৃত বাজেট প্রস্তাবনায় এমন প্রস্তাব যুক্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে বাজেট প্রস্তাবের প্রকৃত সিদ্ধান্ত নেবে অর্থ মন্ত্রণালয়।
এনবিআরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে যেসব খাতে ক্ষতি কম হয়েছে ওইসব খাত থেকে সরকার ২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে রাজস্ব বাড়ানোর পরিকল্পনা নিচ্ছে। সরকার চাচ্ছে জনজীবনে সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এমন উৎসে করের বোঝা না চাপাতে। টেলিকম ও তামাক খাতসহ বেশকিছু খাতে করোনায় খুব বেশি প্রভাব পড়েনি। এসব বিবেচনায় এই খাতে সম্পূরক শুল্ক-কর কিছুটা বাড়ানোর চিন্তা করছে।
সূত্র জানায়, আসছে বাজেটে মোবাইল কল রেটে বিদ্যমান সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হতে পারে। অর্থাৎ নতুন করে ৫ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধি পেতে পারে। বর্তমানে এছাড়াও মোবাইল ব্যবহারকারীরা টকটাইম এবং ক্ষুদে বার্তায় ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও এক শতাংশ সারচার্জ রয়েছে।
আর মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের ভ্যাট প্রযোজ্য আছে ৫ শতাংশ। অর্থাৎ সম্পূরক শুল্ক বাড়লে মোবাইল ফোনে কথা বলা, এসএমএস পাঠানো ও ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচও বেড়ে যাবে। এক্ষেত্রে এনবিআরের যুক্তি হচ্ছে, সরকার করোনাভাইরাসের কারণে সাধারণ ছুটি আরোপের পর মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই হিসাবে এখান থেকে বড় আয় হতে পারে।
অন্যদিকে সিগারেট, বিড়ি, গুল ও জর্দাসহ তামাকজাত সামগ্রীর ওপর সম্পূরক শুল্ক বিভিন্ন ধাপে হতে পারে। বেশি রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনার অংশ হিসাবে এনবিআর সিগারেটের দামের স্ল্যাবগুলোও সংশোধন করতে পারে। তামাকবিরোধী সংস্থাগুলো স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকারক প্রভাব বিবেচনা করে তামাকজাত পণ্যের জন্য অতিরিক্ত শুল্কের দাবি করে আসছে।
এনবিআরের কাছে বাজেট প্রস্তাবগুলোতে সংগঠনগুলো অনুমান করেছিল যে, বাজেটে সিগারেটের জন্য নির্দিষ্ট কর এবং দ্বি-স্তরের মূল্য নির্ধারণের ব্যবস্থার মাধ্যমে এনবিআর প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করা সম্ভব।
বর্তমান দেশে মোট তামাক ব্যবহারকারী মানুষের সংখ্যা ৩ কোটি ৭৮ লাখের বেশি, যা মোট জনগোষ্ঠীর (১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব) ৩৫.৩ শতাংশ। এর মধ্যে প্রায় ৪৮ শতাংশ অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠী তামাক ব্যবহার করে, যা খুবই উদ্বেগজনক। এছাড়া ৪ কোটির বেশি মানুষেও ওপর ধূমপায়ীদের প্রভাব পড়ে।
এর আগে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরণের তামাক পণ্য উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন ও তামাকপাতা ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার এবং তামাক কোম্পানিগুলোকে দেয়া অনুমতিপত্র প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী যুগ্ম সচিব মোঃ খায়রুল আলম শেখ স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছিল, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তামাককে কোভিড-১৯ সংক্রমণ সহায়ক হিসাবে চিহ্নিত করে এর ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার কথা বলেছে।
ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, কিন্তু তামাক কোম্পানিগুলোকে দেয়া উৎপাদন, সরবরাহ, ও বিপণন করার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের অনুমতিপত্র পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থে করোনাভাইরাসজনিত কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় তামাক কোম্পানিকে প্রদত্ত অনুমতি প্রত্যাহারসহ সকল তামাক কোম্পানির উৎপাদন-সরবরাহ-বিপণন ও তামাকপাতা ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’'
এই বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ে একটি ভার্চুয়াল বৈঠকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবের পাশাপাশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা যোগ দেন। সেখানে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয় যে রাতারাতি এই খাত বন্ধ করে দেয়ার মতো সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না।
এর কারণ হিসাবে শিল্প সচিব মোঃ আবদুল হালিম বলেন, কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তারা তামাক পাতা ক্রয় করা যাবে না বলে বলছে। কিন্তু তামাক পাতার সঙ্গে অসংখ্য চাষী জড়িত। তাহলে তো ওই চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দ্বিতীয়ত হলো, আমরা যদি বৈধভাবে উৎপাদন বিপণন বন্ধ করে দেই, তার মানে এই নয় যে ধূমপায়ীরা ধূমপান করবেন না। তখন কালোবাজারি হবে, সরকার রাজস্ব হারাবে। আমরা তামাকের প্রসার বা প্রচারের পক্ষে নই। আস্তে আস্তে এটা কমিয়ে আনতে হবে। এটা একটা শিল্প, এখানে প্রচুর লোকজন কাজ করছে। সুতরাং এখান থেকে অন্যদিকে শিফট করতে গেলে, সময় নিয়ে নিয়ে, কৌশল ঠিক করে সেটা করতে হবে। এই শিল্প কোথায় যাবে, লোকগুলো কোথায় যাবে - সেটা একটা সময়ের ব্যাপার।