অর্থসংবাদঃ বর্তমানে তরুণদের মধ্যে বিজনেস করার মানসিকতা দেখা যায়, এক্ষেত্রে অনেকেই ব্যর্থ হয় এ বিষয়ে আপনার অভিজ্ঞতা থেকে যদি কিছু শেয়ার করতেন…
জয়ঃ এটা দেশের জন্য ভালো যে তরুণরা এখন কিছু করতে চায়। তবে ফাইন্যান্স অনেকটা বড় সমস্যার কারন হয়ে দাড়ায় সফল না হওয়ার ক্ষেত্রে। অন্যের দেখাদেখি নিজের সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া যারা শুরু করে তাঁরাই অধিকাংশ সময়ে ব্যর্থ হয়। বিজনেস করার নির্দিষ্ট কোন বয়স না থাকলেও ওই বিষয়ে পড়াশুনা করতে হবে এবং সঠিক জ্ঞান থাকতে হবে। যেকোন বিজনেস শুরু করতে গেলে নতুন একটা বিজনেসের দিকে যাওয়া ভালো। তা না করে যারা অন্যকে দেখা দেখি বিজনেসে শুরু করে তারাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সফল হয়না। আমাদের সবাই বলে আমরা স্টার্টআপ নিয়ে কাজ করতে চাই।ব্যাংগুলো বলে স্টার্টআপ যারা নিয়ে আসতেছে তাদের আমরা মোটিভেশন দিতে চাই। কিন্তু প্রথম ধাক্কায় যে বাধার সম্মুখীন হতে হয়, বলে আপনার কি অভিজ্ঞতা আছে? আর কাগজপত্র সমস্যা তো আছেই। তাতেই অনেকে হতাশ হয়ে ছেড়ে দেয়।
অর্থসংবাদঃ আপনি কিভাবে ব্যবসা শুরু করেন?
জয়ঃ আমি যখন ক্লাস সিক্স এ পড়ি তখন ঈদের সালামির টাকা দিয়ে ব্যবসার যাত্রা শুরু করি।আগে ঈদের সময় আমাদের গ্রামে মোবাইলের রিচার্জ কার্ডের সংকট দেখা যেত। তখন ৩০০ টাকার কার্ড ৩৫০ টাকা হয়ে যেত। আর এসময় থেকেই আমার বিজনেস শুরু হয়। আমার বিজনেসের জন্য বাবার থেকে কোন ক্যাশ টাকা নেইনি । আমার মধ্যে এক্টিভিটিস থাকার কারনে বাংলালিংক এর মাধ্যমে হ্যালো কলিং কার্ড এর একটি কোম্পানি ছিল সেটার স্টোর ডিসট্রিবিউশন পেলাম। তখন ক্লাস সেভেন এ পড়ি। আর যখন এইচএসসি তে পড়ি তখন ওয়ারিদের ডিসট্রিবিউশন এর মাধ্যমে বিজনেস শুরু করি । ওয়ারিদের থেকে আমাদের বিজনেস নিয়ে অনেক কিছু শেখানো হয়। যা আমার জন্য অনেক অভিজ্ঞতার ছিল।
অর্থসংবাদঃ আপনার ব্যবসায়ের প্রতিবন্ধকতা কি ছিল?
জয়ঃ ব্যবসা বড় করতে যখন ব্যাংক লোন নিতে চাই। আমার বয়স তখন কম হওয়াতে লোন পাইনা ।পরে বাবার নামে ব্যাংক লোনটা নিতে হয়। যখন ব্রিকফিল্ডের ব্যবসায় আসি তখনও একই সমস্যায় পড়তে হয়।ব্যংক থেকে বলা হয় আপনারতো এই ব্যবসার কোন অভিজ্ঞতা নাই আমরা কিভাবে আপনাকে ফাইনান্স করব। তখন আমি কষ্ট করে অন্য বিজনেস থেকে পুঁজি এনে ব্রিকফিল্ড করি। এটা কিন্তু নতুন একটা স্টার্টআপের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। আমি যখন ব্রিকফিল্ড করলাম। তখন ব্যাংক আমাকে ফাইনান্স করতে আসলো।
অর্থসংবাদঃ আপনার কি কি প্রতিষ্ঠান আছে? কত জনের কর্মসংস্থান সেখানে?
জয়ঃ আমার প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৪ শত মানুষের কর্ম সংস্থান। বিকাশ, বাংলালিংক, এয়ারটেল ডিসট্রিবিউশন এর ব্যবসা রয়েছে। এরপর প্রোডাকশনের ব্যবসা শুরু করি। আমার একটা ফ্যাশন হাউজ, ব্রিকফিল্ড, শিপিং লাইন্স এবং রাইসমিল ব্যবসা আছে।এছাড়া ভিন্নমাত্রার একটা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি আমার গ্রামে।
অর্থসংবাদঃ তরুণ যারা বিজনেস করতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলেন-
জয়ঃ যারা বিজনেস এ আসতে চায় এর আগে প্রোপার ফিজিবিলিটি চেক করে বিজনেস এ আসতে হবে। হয়তবা এটা বইয়ে পড়তে সুন্দর কিন্তু এটার ফিজিবিলিটি চেক করে দেখিনি। প্রথমে এটার পেছনে সময় এবং ফিজিবিলিটি চেক করে নিজের সক্ষমতার মধ্য থেকে শুরু করা উচিত। আর বিজনেস শুরুর আগে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও আগেই চেক করে নিতে হবে।
অর্থসংবাদঃ আপনার এপর্যন্ত আসতে কে অনুপ্রেরণা দিয়েছে?
জয়ঃ ছোটবেলা থেকেই আমার চিন্তা ছিল যে বিজনেস করব। তারপর আমার বাবা যেহেতু বিজনেসম্যান ছিলেন সেই সুবাদে তার থেকে অনুপ্রেরণা পাওয়া।
অর্থসংবাদঃ ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে থাকা অবস্থায় ব্যবসা কিভাবে সম্ভব? পড়াশুনায় কিভাবে সময় দিতেন?
জয়ঃ সময় ভাগ করে নিতাম। কত সময় পড়ব , কতটা সময় বিজনেস নিয়ে চিন্তা করব।এসবের একটা পরিকল্পনা করে কাজ করতাম। এখনো আমাকে সন্ধ্যার ও বেকার মনে হয়। কেননা সন্ধ্যার পর অফিস বন্ধ থাকে। তাই এই সময়টাতে ভাল কোন কিছু তৈরি করা যায় কিনা সেটাই চিন্তা করছি।
অর্থসংবাদঃ কারো সাহায্য ছাড়াই আপনি এতদূর আসলেন, কেমন অনুভব করেন?
জয়ঃ এটা অবশ্যই ভালো লাগে যে আমি চাক্রির পিছনে না ঘুরে মানুষের জন্য কর্ম সংস্থানের জায়গা তৈরি করেছি। ধ্যান-জ্ঞান, নেশা-পেশা হতে হবে বিজনেস। যখন আমি আন্ডার সেভেনটিন পর্যন্ত ক্রিকেট খেলতাম তখন ঘুমের মধ্যেও বল করতাম। কখনো আশা ছাড়া যাবে না। হয়তো এটার জন্যই এতটুকু সম্ভব হয়েছে।
অর্থসংবাদঃ গোপালগঞ্জে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ার অনুপ্রেরণা কে?
জয়ঃ এটার অনুপ্রেরণা আমার মা।আমার মা ৩৩ বছর শিক্ষকতা করেন। তিনি বাংলাদেশের বেস্ট টিচার হয়েছেন। সাড়ে তিন বছর জেলা শিক্ষা অফিসার ছিলেন। সারা বাংলাদেশের মধ্যে বেস্ট জেলা শিক্ষা অফিসার হয়েছেন। যখন মা অবসর এ গেলেন তখন আমাকে স্কুল প্রতিষ্ঠা করার জন্য সাহস যোগান। বর্তমানে প্লে থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদানের ব্যবস্থা আছে। আশা করছি ভবিষ্যতে কলেজ পর্যন্ত চালু হবে।
অর্থসংবাদঃ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
জয়ঃ আমরা শুধুমাত্র নম্বরের পিছনে দৌঁড়াই। স্বশিক্ষায় শিক্ষিত একটা বাচ্চাকে যেটা করতে হয় ঐ জায়গাটাতে মূলত পরিবার এবং সামাজিক একটা ঘাটতি আছে। এই জায়গাটাই উন্নতি করতে হবে। শিক্ষিত অনেক তরুণ গ্রাজুয়েশন শেষ করে হতাশায় ভোগে- এর কারন হলো সে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে কিন্তু স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হয়নি। আমি কেন অন্য জনের কাছে চাকরি নেব। আমার চিন্তা থাকবে আমি চাকরি দেব। আমি পেপার বিক্রি করি অথবা প্লেন বানাই আমাকে নিজেকে চেষ্টা করতে হবে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য। আমি একটা উদাহরণ দিয়ে থাকি- ৩০০ ফিট চওড়া একটা রাস্তার ২৯৯ ফিট ১০ ইঞ্চি রাস্তা খারাপ এবং ২ ইঞ্চি রাস্তা ভালো। আপনি যদি মোটর সাইকেল চালাতে পারেন তাহলে ২ ইঞ্চির উপর দিয়েই যাবে। এটা আপনার দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভর করবে।
অর্থসংবাদঃ ফ্যাশন, শিপিং লাইন্স, ব্রিকফিল্ড, অটো রাইসমিল এই যে ভিন্ন ভিন্ন ব্যবসা এগুলোর সমস্যা কিভাবে সমাধান করেন?
জয়ঃ যেকোন ব্যবসা শুরু করার আগে আমি এর রিক্স ফেক্টর টা আগে বের করি যে কি ধরনে সমস্যা হতে পারে এই ব্যবসায়। আর আমার বিজনেস একটার সাথে আরেকটার কোন সম্পর্ক থাকে না । প্রত্যেকটার জন্য ভিন্ন চিন্তা এবং কাজের ধরনও আলাদা।