সে কারণে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে, মাস্ক ব্যবহার করে ও নাক-মুখ-চোখ স্পর্শ না করার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু মাস্ক ব্যবহারের ফলে নতুন করে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
মাস্কে ঢাকা পড়ছে গালের কিছু অংশ। কান আর চোখকে যদি ভাইরাস টার্গেট না করে তাহলে আর সমস্যা নেই, মুখের প্রায় অর্ধেকটাই মাস্কের আড়ালে চলে যাবে। কিন্তু চিরকাল যে নাক আর ঠোঁট খোলা হাওয়ায় মুক্ত পরিবেশে শ্বাস নিত, তা এত রাখঢাক সহ্য করতে পারছে না।
বেশি সময় ধরে মাস্ক ব্যবহারের ফলে নাক-মুখে ছোট লালচে ও গোলাপি ব্রন, র্যাশ উঁকি দিচ্ছে। খসখসে ত্বক, চুলকানি, ঠোঁটের চারপাশে লাল লাল গুটির মতো দাগ হচ্ছে। বয়ঃসন্ধিতেও ব্রনের সমস্যায় ভোগেননি যারা, তারাও মাস্ক ব্যবহারের ফলে সমস্যায় পড়েছেন।
ডারমাটোলজিস্টরা এই মাস্কঘটিত ব্রনের নাম দিয়েছেন ‘মাস্কনে’। অর্থাৎ মাস্কের কারণে যে ব্রন বা অ্যাকনে ।
নাক-মুখ ঢেকে রাখতে হচ্ছে সবাইকে। তাই মাস্ক পরিপাটিভাবে যত্ন না নিলেই বিপদ। একটানা মাস্ক পরে থাকলে নাক, মুখে খোলা হাওয়া খেলা করতে পারে না। ঘাম, ময়লা জমে র্যাশ হতে শুরু করে। তার ওপর বার বার হাত দিয়ে মাস্কের কান ধরে কখনো নাকের উপরে তোলা, আবার কখনো থুতনির নীচে নামানো, এসবেই যত সমস্যা। পুরো নাক-মুখ জুড়ে লালচে দাগ, ব্রর একেবারে আসর পেতে ফেলে।
ডার্মাটোলজিস্টরা বলছেন, অনেকে আবার মাস্ক সরিয়ে বার বার মুখে হাত দেন, যার ফলেও হাতের ময়লা ঠোঁটে, নাকে লেগে যায়। মাস্ক চাপিয়ে দিলে ঘাম জমে সেই জায়গার ত্বকের বারোটা বেজে যায়।
এমনিতেই গরমের সময় ব্রনের সমস্যায় ভোগেন অনেকে। তার ওপর মাস্কে দীর্ঘক্ষণ মুখ ঢেকে রাখলে ত্বক আরো বেশি বিদ্রোহ ঘোষণা করে। চামড়া খসখসে, শুকনোও হয়ে যায় অনেকের।
বেশি চুলকালে সেই জায়গায় ব্রন ফেটে গিয়ে বিপত্তি দেখা যায়। তার উপর আবারো মাস্ক চাপানো মানে কাটা ঘায়ে লবণের ছিটে দেওয়ার মতো।
অ্যাগজিমা থাকলে বিপদ আরো
বার বার স্যানিটাইজার ঘষে ত্বক শুষ্ক হচ্ছে। হাতের ছাল উঠছে অনেকের। তার উপরে মাস্ক পরে মুখ ভর্তি মাস্কনে। ডার্মাটোলজিস্টরা বলছেন, যাদের ত্বক খুব শুষ্ক, সেনসিটিভ তাদের সমস্যা বেশি।
বিশেষ করে যদি অ্যাগজিমা থাকে বা অ্যালার্জিজনিত অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস, তাহলে ত্বকের যত্ন একটু বেশিই নিতে হবে। স্যানিটাইজার ব্যবহার করার পরে হাতে নিয়ম করে ময়শ্চারাইজার বা নারকেল তেল লাগাতে হবে। মুখে ভারী মেকআপ একদম নয়।
তৈলাক্ত প্রসাধনী এই সময় ব্যবহার না করাই উচিত। এর বদলে ত্বক অনুযায়ী হাল্কা ময়শ্চারাইজার, রোদে বের হলে সানস্ক্রিন (অবশ্যই ত্বকের ধরন অনুযায়ী) ব্যবহার করতে হবে। ছোট ছোট ব্রন ঠোঁট আর নাকের চারপাশে দেখা গেলে চন্দনের প্রলেপ দেওয়া যেতে পারে। তাতে জ্বালা বা চুলকানি অনেকটাই কমবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিমপাতাও খুব কাজে দেয় মাস্কনের সমস্যা রুখতে। নিমপাতা বাটা নাক বা মুখের চারপাশে লাগিয়ে রাখলে আরাম পাওয়া যায়।
মাস্কের যত্ন নিন
করোনাভাইরাসের যুগে শুধু ত্বকের যত্ন নিলেই চলবে না। মাস্কেরও যত্ন নিতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আগেই বলেছে, তিন-লেয়ার মাস্ক ব্যবহার করলে ভাইরাস আর নাক-মুখের সঙ্গে লুকোচুরি খেলতে পারবে না।
তিন-লেয়ার মাস্ক হোক, সার্জিকাল মাস্ক বা সুতির মাস্ক, যেটাই ব্যবহার করুন না কেন, নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা দরকার। মাস্কে যেন কোনোভাবেই সাবান বা ডিটারজেন্ট না লেগে থাকে। ধোয়ার পর রোদে রেখে ভালো করে শুকিয়ে নিতে হবে। অনেক সময় বাইরের ধুলো-ময়লা জমে থাকে মাস্কে।
নিয়মিত পরিষ্কার না করলে তা থেকে ত্বকের সংক্রমণ হতে পারে। তাছাড়া ব্যাকটেরিয়া, প্যাথোজেনও তো কিছু কম নেই বাতাসে। তারাও আটকে থাকে মাস্কের ভাঁজে। কাজেই পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর না রাখলে করোনা রুখতে গিয়ে শেষে ত্বকের রোগ এসে হানা দেবে।