অবশেষে সাতবারের ব্যালন ডি'অরজয়ী লিওনেল মেসি 'আনুষ্ঠানিকভাবে' জানিয়ে দিলেন, ২০২২ কাতার বিশ্বকাপই তার শেষ!
সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফুটবলার যে এমন সিদ্ধান্ত নেবেন, তা একপ্রকার নিশ্চিতই ছিল। দেখতে গেলে এলএম টেন আনুষ্ঠানিকভাবে সিলমোহর দিলেন।
২০১৪ বিশ্বকাপে মেসি ট্রফির অত্যন্ত কাছে এসেও ছুঁয়ে দেখতে পারেননি। জার্মানির ১-০ গোলে আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে হারিয়ে দিয়েছিল। এবার সেই আক্ষেপ ঘোচানোর সুযোগ তার সামনে।
মেসি সম্প্রতি আর্জেন্টাইন ক্রীড়া সাংবাদিক সেবাস্তিয়ান ভিগনোলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, 'কাতার বিশ্বকাপই আমার শেষ, নিশ্চিতভাবে এটা বলতে পারি। এই সিদ্ধান্ত আমি আগেই নিয়ে ফেলেছিলাম। '
আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে মেসির একমাত্র সাফল্য ২০২১ সালে ব্রাজিলকে হারিয়ে কোপা আমেরিকার শিরোপা জয়।
কাতার বিশ্বকাপে খেলতে নামলেই সেটা হয়ে যাবে তার পঞ্চম বিশ্বকাপ আসর। বয়সটাও তো বেঁধে রাখার মতো নয়, ৩৫ পেরিয়ে গেছে।
নভেম্বরের ২০ তারিখ কাতারে শুরু হচ্ছে দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ, বিশ্বকাপের মূল আসর। মেসি স্বীকার করে নিয়েছেন, ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ খেলতে নামার আগে দারুণ স্নায়ুচাপে ভুগছেন তিনি।
স্টার প্লাসের সঙ্গে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে লিওনেল মেসি বলেন, ‘অবশ্যই এখানে বেশ কিছু উদ্বেগ এবং স্নায়ুর চাপ কাজ করছে। কারণ, এটাই আমার শেষ বিশ্বকাপ। ’
এই প্রথম পিএসজির আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার বিশ্বকাপের পর তার ক্যারিয়ার নিয়ে সরাসরি মুখ খুললেন। তবে, মেসি এটা নিশ্চিত করেননি যে, কাতার বিশ্বকাপের পরপরই তিনি জাতীয় দল থেকে অবসরে যাবেন কি না। শুধু জানিয়ে দিলেন, এটাই তার শেষ বিশ্বকাপ। অর্থাৎ, ২০২৬ বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং মেক্সিকোয় তাকে দেখা যাবে না।
টানা ৩৫টি ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে কাতার যাচ্ছে আর্জেন্টিনা। ফলে বিশ্বকাপ নিয়ে এবার তাদের প্রত্যশাটাও আকাশছোঁয়া। তাছাড়া ব্রাজিলের মত শক্তিশালী দলকে হারিয়ে তারা কোপা আমেরিকার শিরোপা জিতেছিল।
মেসি জানিয়ে দিলেন, অনেকগুলো সুযোগ মিস করার পর এবার আর্জেন্টিনা একটা টার্নিং পয়েন্টে এসে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, ‘একটা বিশ্বকাপে যে কোনো কিছুই ঘটতে পারে। প্রতিটি ম্যাচই হয় খুব কঠিন। ফেবারিটরা সব সময় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারে না। ’
নিজেদের অবশ্য ফেবারিট ভাবছেন না মেসি। তিনি বলেন, ‘আমি জানি না, আর্জেন্টিনা ফেবারিট কি না। তবে, আর্জেন্টিনা সব সময়ই বিশ্বকাপ জয়ের দাবিদার। কারণ, দেশটির ফুটবল ইতিহাস। এখন তো বিশ্বকাপ জয়ের জন্য আরো বেশি দাবিদার। কারণ, আমরা এখন সে পথেই রয়েছি। তবে, আমরা ফেবারিট নই। আমি মনে করি, এখানে আরও দল আছে, যারা আমাদের ওপরে রয়েছে। ’
১৯৭৮ এবং ১৯৮৬ সালে দুটি বিশ্বকাপ জয় করেছে আর্জেন্টিনা। এরপর ১৯৯০ এবং ২০১৪ সালের বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছিল তারা। এবারের বিশ্বকাপে তারা রয়েছে গ্রুপ ‘সি’তে। ২২ নভেম্বর প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হবে সৌদি আরবের। এরপর তাদের বাকি দুই প্রতিপক্ষ মেক্সিকো এবং পোল্যান্ড।
নিজের অবস্থা নিয়ে মেসি বলেন, ‘শারীরিকভাবে আমি নিজেকে বেশ ভালো মনে করছি। এই বছর শুরুর আগে একটি ভালো একটি প্রি-মৌসুম কাটিয়েছি। যা আগের বছর আমি করতে পারিনি। ভালো শুরু করাটাই সবচেয়ে বড় কাজ। এখন যা করছি, তা হলো মানসিক দিকটাতে অনেক বেশি ফোকাস করা এবং নিজের মধ্যে ইচ্ছাশক্তিকে আরও বাড়িয়ে তোলা। ’
শেষের ঘোষণা তো দিয়েই দিলেন। তবে শেষের আগে আগামী মাস থেকে শুরু হতে যাওয়া বিশ্বকাপটা মেসি নিজের করে নিতে পারেন কি না, সেটাই দেখার অপেক্ষা।