দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) যেন কোনভাবেই পিছু ছাড়ছেনা বিতর্কিত কর্মকান্ডের। সম্প্রতি সময়ে ডিএসইর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি নিয়ে চরম বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এবার আরও নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে ডিএসই। একযুগ আগের বাতিল হওয়া বিতর্কিত সার্কুলার বাস্তবায়নে ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে চিঠি দিয়ে এখন ফের সমালোচনার মুখে প্রতিষ্ঠানটি। তবে এক্ষেত্রে বিএসইসিকেও জড়িয়েছে ডিএসইসি।
মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) ডিএসই থেকে এক যুগ আগের সেই আদেশ পরিপালন করতে ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানা গেছে।
সুত্র জানায়, বিএসইসির তৎকালীন কমিশনের চেয়ারম্যান জিয়াউল হক খন্দকার দেশের বাহিরে থাকাকালীন সময়ে ২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বর বিএসইসির তৎকালিন সদস্য (বর্তমান কমিশনার) মনসুর আলম একক সিদ্ধান্তে একটি বিতর্কিত আদেশ জারি করেন। পরবর্তীতে শোকজের কবলে পড়ে পদত্যাগও করতে হয় মুনছুর আলমকে। ফলে বিতর্কিত সেই সার্কুলার বাতিলও হয়। সেই আদেশকেই ডিএসই আবার বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে।
কি ছিল সেই আদেশে?
সেখানে বলা হয়, কোন বিনিয়োগকারী ব্রোকারেজ হাউজকে চেক প্রদান করলে তা নগদায়ন হওয়ার পূর্বে শেয়ার ক্রয় করলে তা ১৯৯৬ এর ১৬ (ক) ধারার লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করা হবে। অর্থাৎ, কোন বিনিয়োগকারী ব্রোকারেজ হাউজকে চেক দেওয়ার পর ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন না করা পর্যন্ত শেয়ার কেনায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
সুত্র জানায়, এই আদেশ জারির পরের দিনই (৭ ডিসেম্বর, ২০১০) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাধারণ সূচক ৫৪৬ পয়েন্ট কমে গিয়েছিল। এমতাবস্থায় আদেশটি বাতিল করেছিল বিএসইসি। আদেশ বাতিল করা হলেও সে সময় দেশের শেয়ারবাজারে ব্যাপক দরপতন চলতে থাকে।
জানা যায়, ২০১০ সালে এই আদেশ দিয়েছিল মূলত তৎকালীন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনসুর আলম। তৎকালীন চেয়ারম্যান জিয়াউল হক খন্দকার বিদেশ সফরে থাকায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছিলেন মনসুর আলম। দায়িত্ব পালনকালে জিয়াউল হক খোন্দকারের অনুমোদন ছাড়াই কমিশন সদস্য মনসুর আলম (যিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন) দু’টি নির্দেশনা জারির ব্যবস্থা করেন। এই দুই আদেশের মধ্যে একটি ছিল চেক প্রদানের পর টাকা উত্তোলন ছাড়া শেয়ার ক্রয় না করা।
এদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চিঠিতে যা বলা হয়েছে-
গ্রাহকের চেক জমার পর নগদায়ন না হওয়া পর্যন্ত কোন ব্রোকারেজ হাউজ শেয়ার ক্রয় আদেশ বাস্তবায়ন করতে পারবে না মর্মে নতুন করে ট্রেকগুলোকে চিঠি দিয়েছে ডিএসই। এক্ষেত্রে ২০১০ সালের সেই বিতর্কিত আদেশ পরিপালন করতে বলেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ।
সূত্র জানায়, গত ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চিফ রেগুলেটরি অফিসার ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) এসআরআই বিভাগের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় শেয়ার ক্রয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্রোকারেজ হাউজগুলোর কার্যক্রম নিয়ে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) ডিএসই থেকে সব ব্রোকারেজ হাউজকে চিঠি দিয়ে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গ্রাহকের চেক জমার পর নগদায়ন না হওয়া পর্যন্ত কোন ব্রোকারেজ হাউজ শেয়ার ক্রয় আদেশ বাস্তবায়ন করতে পারবে না।
এছাড়াও ব্রোকারেজ হাউজগুলো সমন্বিত গ্রাহক হিসাব বন্ধক রাখতে পারবে না। এমনকি সমন্বিত গ্রাহক হিসাব কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট ধারও দিতে পারবে না। এক্ষেত্রে সমন্বিত গ্রাহক হিসাব পরিচালনায় সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ আইন-২০২০ এর ৬ (২) ধারা পরিপালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সোমবার (১০ অক্টোবর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ‘ডিএসই এক্স’ ১১৯ পয়েন্ট হারিয়েছে। বড় পতনের পেছনে ডিএসই’র নেওয়া নতুন সিদ্ধান্ত অন্যতম বলেও জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা অর্থসংবাদকে বলেন, চেক দেওয়া আর নগদ অর্থ দেওয়া একই বিষয়।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, এই সিদ্ধান্তে ফিরে যাওয়া মানে ডিএসই আবারও একটি বিতর্কিত পথে যাচ্ছে। কারন এতে বিনিয়োগকারীরা হয়রানির শিকার হবে। তবে কেউ আবার ভিন্ন ভাবে দেখছে বিষয়টিকে। তারা বলছে অনেকেই চেকের মাধ্যমে শেয়ার ক্রয় করে পরবর্তীতে চেক ডিজঅনার করে ব্রোকারেজ হাউজের কর্মকর্তাদের যোগসাজসে।