বিনিয়োগকারীর শেয়ার গায়েব করে দিল অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন

বিনিয়োগকারীর শেয়ার গায়েব করে দিল অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন লিমিটেডের বিরুদ্ধে এক বিনিয়োগকারীর বিপুল সংখ্যক শেয়ার গায়েব করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী ওই বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) এ বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন। আগামীকাল বুধবার (২ নভেম্বর) সকাল ১০টায় কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বিএসইসিতে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।





জানা গেছে, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার আগে ভুক্তভোগী এই বিনিয়োগকারীর কাছে শেয়ার হস্তান্তর করে অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন লিমিটেড। মোট ৯ জনের থেকে এসব শেয়ার যৌথ মূলধনী কোম্পানিগুলোর ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের (আরজেএসসি) মাধ্যমে হস্তান্তর করা হয়। যা বিএসইসিতে জমা দেওয়া কোম্পানিটির চূড়ান্ত প্রসপেক্টাসেও উল্লেখ ছিল। কিন্তু অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমতি পাওয়ার পর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারীর শেয়ার গায়েব করে দেয় কোম্পানি সংশ্লিষ্ট একটি চক্র। একটি সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে সাক্ষর জালিয়াতি করে আরজেএসসি থেকে শেয়ার স্থানান্তর করে নিয়ে যাওয়া হয় দুটি প্রতিষ্ঠানের বিও হিসাবে। এ প্রতিষ্ঠান দুটির মালিকানায় রয়েছে শেয়ারবাজারে বিতর্কিত কাজী সাইফুরের স্বার্থসংশ্লিষ্টরা। এর আগে বিভিন্ন অপরাধের দায়ে কাজী সাইফুরকে ২০১৪ সালে বিভিন্ন ধাপে জরিমানা করেছিল বিএসইসি। একইসঙ্গে দীর্ঘ সময়ের জন্য শেয়ারবাজারে নিষিদ্ধও করা হয়েছিল বিতর্কিত এই ব্যক্তিকে।





সূত্র মতে, ২০১৯ সালে মো. হারুন কামাল নামের ওই বিনিয়োগকারীর কাছে ২০ লাখ শেয়ার হস্তান্তর করে অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন লিমিটেডের মালিকপক্ষ। শেয়ারবাজারে কোম্পানিটি তালিকাভুক্ত হওয়ার পর কৌশলে এসব শেয়ার সরিয়ে নেওয়া হয়। হারুন কামালের শেয়ারের মালিক দেখানো হচ্ছে দুই প্রতিষ্ঠানকে। অর্থাৎ জালিয়াতির মাধ্যমে হারুন কামালের ২০ লাখ শেয়ার হাতিয়ে নেয় অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন লিমিটেড।





সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ৩ মার্চ মাসুদ কামালের নিকট মোট ২০ লাখ শেয়ার শেয়ার হস্তান্তর করে অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন। যাদের মালিকানা থেকে এসব শেয়ার মালিকানা হস্তান্তর করা হয়েছে তাদের মধ্যে, মিনহাজুল হাসানের ১০ লাখ শেয়ার, মো. মাহবুবুর রহমানের ২ লাখ ১৩ হাজার ৪৯৭টি শেয়ার, মো. রুহুল আজাদের ২ লাখ ৪৩ হাজার ৯৪৩টি শেয়ার, নাদিরা আক্তারের ২৭ হাজার ৮৩টি শেয়ার, ইউনিভার্সেল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের ২ লাখ ৪০ হাজার ৩৩১টি শেয়ার, কামাল হোসাইন মিয়ার ৩৫ হাজার শেয়ার, কাজী তারেক শামসের ৯০ হাজার শেয়ার, মো. ফরিদ আহমেদের ৯৩ হাজার ৬৫৫টি শেয়ার এবং মো. আসাদুজ্জামানের সাড়ে ৫৬ হাজার শেয়ার মো. হারুন কামালের নামে হস্তান্তর করা হয়।





ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী, অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন লিমিটেড ২০২০ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। তালিকাভুক্তির আগে ইস্যু ম্যানেজার বিএসইসিতে যে প্রসপেক্টাস জমা দেয় সেখানেও মো. হারুন কামালের নামে শেয়ার থাকার বিষয়টি উল্লেখ করা ছিল। তবে তালিকাভুক্তির পর এসব শেয়ারের মালিকানা দেখানো হচ্ছে দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- এনআরবি ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট এবং ইউনিভার্সেল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট।





বিএসইসিতে মো. হারুন কামাল অভিযোগ করার পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা চারটি অ্যাকাউন্টের ৯৭ লাখ ৬৫ হাজার ৪৮৫টি শেয়ার লকইন করার নির্দেশ দেয়। ২০২১ সালের ১ জুন অ্যাকাউন্টগুলোর শেয়ার লকইনের নির্দেশ দেওয়া হয়। যেসব অ্যাকাউন্টের শেয়ার লকইন করা হয়েছে- মো. হাসান ইউছুফ চৌধুরী (বিও আইডি: ১৬০৬০৬০০৬৭৮৫৬৪৪০), ইউনিভার্সেল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট (বিও আইডি: ১২০৫৯৫৫০০৬৪১১০১৮৯), বেঙ্গল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট (বিও আইডি: ১২০৫৯৫০০৬৭৪২২০২৩) এবং এনআরবি ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের (বিও আইডি: ১৬০৫৭৬০০৬২৪৫৫৩৫১)।





২০২১ সালের ১১ আগস্ট যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় থেকে বিএসইসিতে একটি চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, ২০১৯ সালের ৩ মার্চ ৮টি ওয়ান ওয়ান সেভেন ফরমের মাধ্যমে (সাবমিশন নম্বর: ২০১৯১৪১৮১৪) মো. হারুন কামালের নামে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে ১০ লাখ শেয়ার হস্তান্তর দেখানো হয়েছে, যা ১৮ এপ্রিলে রেকর্ডভুক্ত করা হয়েছে।





পরবর্তীতে আরও দুইটি সাবমিশনের মাধ্যমে (নং: ২০১৯২১৭২৫০ এবং ২০২০৩১০৭২৯) ২০ লাখ শেয়ার হারুন কামালের থেকে হস্তান্তর দেখানে হয়। যেসব প্রতিষ্ঠানের নামে শেয়ারগুলো হস্তান্তর করা হয় সেগুলো হলো: ইউনিভার্সেল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট, এনআরবি ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট এবং ইউনিভার্সেল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের নামে এখনো শেয়ার রেকর্ডভুক্ত করা হয়নি বলে যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের (আরজেসি) চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।





হারুন কামালের ২০ লাখ শেয়ার কিভাবে হস্তান্তর করা হয়েছে তার স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ওই তিনটি প্রতিষ্ঠানের কাছে জানতে চেয়েছে আরজেএসসি।





এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেনের কোম্পানি সচিব সোহরাব হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনভাবেই তাঁর মন্তব্য পাওয়া যায়নি।


আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

ফু-ওয়াং সিরামিকের লভ্যাংশ অনুমোদন
এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা
ডিএসইতে মোবাইল গ্রাহক-লেনদেন দুটোই কমেছে
বছরজুড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পেয়েছে ৯ কোম্পানি
পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ আজ
বছরের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে ৪০ শতাংশ
রবিবার পুঁজিবাজার বন্ধ থাকলেও চলবে দাপ্তরিক কার্যক্রম
লোকসানে ৮ খাতের বিনিয়োগকারীরা
সাপ্তাহিক রিটার্নে মুনাফায় ১০ খাতের বিনিয়োগকারীরা
খাতভিত্তিক লেনদেনের শীর্ষে প্রকৌশল খাত