কভিড-১৯-এর ফলে সহায়তা কর্মসূচিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং মারাত্মক এ মহামারী মোকাবেলায় প্রধান অর্থনীতিগুলো তাদের মনোযোগ ভিন্ন খাতে দিচ্ছে। এছাড়া মাঝারি ও দুর্বল অর্থনীতিগুলোর রেমিট্যান্স প্রবাহও মারাত্মকভাবে কমেছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
নিউইয়র্কভিত্তিক জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ রিচার্ড গাওয়ান বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের ফলে আরো বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা বৃদ্ধি পাবে তার অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা আসলে অনেক দীর্ঘ নাটকের প্রথমাংশেই রয়েছি।
জাতিসংঘের মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস সেই মার্চের দিকেই অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার ওই আহ্বানে তেমন সাড়া দেয়নি বিবদমান পক্ষগুলো। যুদ্ধের হটস্পট ইয়েমেন, লিবিয়া ও সিরিয়াতে সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে।
লকডাউনের ফলে কূটনীতিক, শান্তিরক্ষী বাহিনী ও বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) প্রবেশে সমস্যা হচ্ছে। এতে বেসামরিক মানুষের জীবন বাঁচাতে গৃহীত মধ্যস্থতা পদক্ষেপগুলো বিঘ্নিত হচ্ছে।
ইয়েমেনে মহামারীর আগে থেকেই বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবসৃষ্ট বিপর্যয় চলছিল। বর্তমানে সেখানে লড়াই তীব্রতর হচ্ছে।
জাতিসংঘের ত্রাণবিষয়ক প্রধান মার্ক লৌকক গত সপ্তাহে জানান, সামনে দুর্ভিক্ষ আসছে। সহিংসতা ফের তীব্রতর হচ্ছে। অর্থনীতি ফের নড়বড়ে হয়ে পড়ছে। দাতব্য সংস্থাগুলোও প্রায় ভেঙে পড়ছে। তার সঙ্গে কভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
ব্রিটিশ এ কূটনীতিক জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে জানান, নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর ফলে রেমিট্যান্সের পরিমাণ কমেছে, যা ইয়েমেনের মতো দেশের জন্য ৭০ শতাংশ আয়ের উৎস ছিল।
সাম্প্রতিক এক জরিপের বরাতে তিনি আরো জানান, গত এপ্রিলের পর থেকে প্রায় অর্ধেকের মতো ইয়েমেনি পরিবারের আয় অন্তত ৫০ শতাংশ কমেছে।
ইয়েমেনকে অবিলম্বে সহায়তা না পাঠালে সেটা বিপর্যয়ের অতলে হারিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেন লৌকক।
কূটনীতিকরা বলছেন, সংঘাতপূর্ণ এলাকাগুলোতে মানবিক সহায়তা পাঠানো কমিয়ে দিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। কারণ তারা নিজেরাই কভিড-১৯-এর অর্থনৈতিক ধাক্কা মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে এজন্য পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় বড় আকারের বিনিয়োগে বাধ্য হচ্ছে।
গত জানুয়ারিতে বার্লিনের জার্মানির মধ্যস্থতায় আয়োজিত বৈঠকে বিশ্ব নেতারা লিবিয়ায় নয় বছর ধরে চলা সংঘাত বন্ধে ঐকমত্যে পৌঁছেছিল। কিন্তু গত মাসে বিভিন্ন পক্ষের ‘অভূতপূর্ব মাত্রার’ হস্তক্ষেপের নিন্দা করতে বাধ্য হয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস। রাশিয়া ও তুরস্ক গৃহযুদ্ধে বিবদমান পক্ষগুলোকে মদদ দিয়ে আসছে।
বিশেষজ্ঞরা লেবাননে চলমান সংঘাত নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। দেশটি বর্তমানে ১৯৭৫-১৯৯০ গৃহযুদ্ধ পরবর্তী সবচেয়ে মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বেপরোয়া মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে ক্ষুব্ধ লেবাননিরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছে।
জাতিসংঘের এক কূটনীতিক এএফপিকে বলেন, পুরো বিশ্বেই খুব হতাশাজনক ছবি দেখা যাচ্ছে। অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের জেরে সংঘাতপূর্ণ এলাকাগুলোতে সহিংসতা আরো বাড়তে যাচ্ছে।
সুত্র: এএফপি।