বাংলাদেশের সব মাঠের তুলনায় জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পিচ সবসময়ই তুলনামূলক ব্যাটিং সহায়ক। গড়পড়তা এই মাঠে রান ওঠে বেশি। তবে ১০ ডিসেম্বর জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের যে পিচে তৃতীয় ওয়ানডে হয়েছে, তা আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় ছিল আরও ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি।
যেটাকে ব্যাটিং স্বর্গ বললেও বাড়াবাড়ি হবে না। বল চমৎকার গতি ও উচ্চতায় ব্যাটে এসেছে। মুভমেন্ট বা টার্ন কিছুই ছিল না। খুব ভালো জায়গায় বল ফেলা ছাড়া বোলারদের কারিশমা দেখানোর আসলে কোনো সুযোগ ছিল না। দুই ভারতীয় ইশান কিশান আর বিরাট কোহলি সেখানে ইচ্ছেমত চার ও ছক্কার ফুলঝুরি ছুটিয়েছেন। ৪৮ ঘণ্টা পর সেখানেই শুরু বাংলাদেশ আর ভারতের প্রথম টেস্ট।
চেতেশ্বর পূজারা, লোকেশ রাহুল, শুভমান গিল আর বিরাট কোহলির মত নামি ও সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যাটারের পাশাপাশি ভারতীয় শিবিরে উমেশ যাদব, মোহাম্মদ সিরাজের মতো দ্রুতগতির পেসার আর রবিচন্দন অশ্বিন ও অক্ষর প্যাটেলের মত কোয়ালিটি স্পিনার আছেন।
সেই দলের বিপক্ষে পেস কিংবা স্পিন সহায় পিচে খেলার অর্থ স্বেচ্ছায় বিপদ ডেকে আনা। নিশ্চয়ই বাংলাদেশ ম্যানেজমেন্ট তা চাইবে না। তাই ধরেই নেয়া হচ্ছে, প্রথম টেস্টের উইকেটও হবে ব্যাটিং সহায়ক।
এখন প্রশ্ন হলো, ব্যাটিংবান্ধব জহুর আহমেদ চৌধুরীর পিচে কেমন হবে বাংলাদেশের একাদশ? কজন ব্যাটার, কজন স্পেশালিষ্ট পেসার আর স্পিনারে সাজানো হবে সাকিবের দল?
টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে আজ সোমবার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম লাল বলে নেট হয়েছে জাতীয় দলের। যদিও তার আগে রোববার বিরতির দিন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুলকে নিয়ে একা ব্যাটিং প্র্যাকটিস করেছেন মুশফিকুর রহিম।
ভেতরের খবর, এখনও টিম কম্বিনেশন নিয়েই দ্বিধায় টিম ম্যানেজমেন্ট। মূল সংশয়ের জায়গা হলো বোলিং ডিপার্টমেন্ট। কজন স্পেশালিস্ট পেসার খেলানো হবে- ২ নাকি ৩ জন? তারা কারা? আবার অধিনায়ক সাকিবের সঙ্গে স্পিনার কোটায় থাকবেন কজন- দুই নাকি তিন? তা নিয়েও আছে দ্বিধা।
যদি দুজন পেসার খেলেন, তাহলে খালেদ আহমেদ আর এবাদত হোসেনের সম্ভাবনা যে কারো চেয়ে বেশি। তাসকিন সবে পিঠের ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফিরেছেন। তাকে এখনই টেস্টে খেলানোয় একটা ঝুঁকি থেকেই যাবে।
তাই খালেদের সাথে এবাদতই হতে পারেন বেস্ট অপশন। এর বাইরে তিন পেসার খেলানো হলে বাঁহাতি শরিফুল ইসলামও থাকবেন বিবেচনায়। তাসকিন আর শরিফুলের মধ্যে যার ফিটনেস ভালো থাকবে, তিন পেসারে দল সাজানো হলে তার সম্ভাবনাই থাকবে বেশি।
দুই স্পিনার ফর্মুলা অনুসরণ করলে অধিনায়ক তথা বাঁহাতি সাকিবের সঙ্গে অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ অটোমেটিক চয়েজ। আর তৃতীয় স্পিনার খেলাতে চাইলে তখন তাইজুল ইসলাম ঢুকে যাবেন। এর বাইরে ৭ ব্যাটার খেলানো একরকম নিশ্চিত।
এর মধ্যে অধিনায়ক সাকিব, অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম আর লিটন দাস পুরোই নিশ্চিত। বাকি পজিশনগুলোয় মাহমুদুল হাসান জয়, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক, এনামুল হক বিজয়, নুরুল হাসান সোহান, ইয়াসির আলী চৌধুরী রাব্বি আর নবাগত জাকির হাসান থেকে ৪ জনকে বেছে নেয়া হবে।
যেহেতু তামিম ইকবাল নেই, তাই তার বদলে বিকল্প ওপেনার হিসেবে জাকির হাসানকে স্কোয়াডে নেয়া হয়েছে। এখন তার মাথায় টেস্ট ক্যাপ উঠবে কিনা, তিনি একাদশে সুযোগ পাবেন কিনা; সেটাই দেখার।
তবে জানা গেছে, জাকির আছেন বিশেষ বিবেচনায়। ভারতীয় ‘এ’ দলের বিপক্ষে এই গত সপ্তাহে কক্সবাজারের শেখ কামাল স্টেডিয়ামে ১৭৩ রানের আত্মবিশ্বাসী ও ম্যাচ বাঁচানো ইনিংস খেলেছেন এ বাঁহাতি।
দ্বিতীয় চারদিনের ম্যাচেও প্রথম ইনিংসে জাকিরের ব্যাট থেকে এসেছে ৪০+ ইনিংস। তাই তামিমের জায়গায় জাকিরকে খেলানোর সম্ভাবনা বেশি। এর বাইরে মাহমুদুল হাসান জয় এবং নাজমুল হোসেন শান্তর সম্ভাবনা বাকিদের চেয়ে এগিয়ে।
মুমিনুলের অবস্থা বেশ খারাপ। টেস্টে একসময় যার ব্যাট থেকে নিয়মিত রানের ফলগুধারা বইতো, সেই মুমিনুলের এখন টানা অফফর্ম। শেষ ১১ ইনিংসে ৪টি ‘শূন্য’। আর ১০ বার দুই অংকে পৌঁছাতে পারেননি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজের শেষ ম্যাচে ১১ জনেই জায়গা পাননি মুমিনুল। তারপর ‘এ’ দলের হয়ে আর জাতীয় লিগেও রান নেই। কাজেই মুমিনুলের খেলা নিয়েও আছে সংশয়।
তবে খেলাটা যেহেতু চট্টগ্রামে, তাই আলাদা করে ভাবতেই হবে। মুমিনুলের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বেশি ৭টি সেঞ্চুরি এই জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। সেই বিবেচনায়ই কেবল সুযোগ পেতে পারেন মুমিনুল। অন্যথায় তাকে ড্রেসিংরুম আর ডাগআউটে বসেই কাটাতে হবে। সেখানে আরেক বাঁহাতি নাজমুল শান্তর অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনাই বেশি।
বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ
মাহমুদুল হাসান জয়, জাকির হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত , মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, লিটন দাস, নুরুল হাসান সোহান, মেহেদি হাসান মিরাজ, খালেদ আহমেদ, এবাদত হোসেন, তাসকিন আহমেদ/শরিফুল ইসলাম/তাইজুল ইসলাম।
অর্থসংবাদ/কেএ