ভ্যাকসিনের মাল্টিবিলিয়ন ডলারের প্রতিযোগিতা চলছে

ভ্যাকসিনের মাল্টিবিলিয়ন ডলারের প্রতিযোগিতা চলছে
চার বছর। ইতিহাসে এটিই কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দ্রুততম সময়। বেশির ভাগেরই লেগেছে ১০-১৫ বছর। কিন্তু এখন বিজ্ঞানীরা লড়াই করছেন সবচেয়ে কম সময়ের মাঝে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য। গবেষকদের কয়েক ডজন দল এখন বিশ্বব্যাপী কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন তৈরির কাজ করছে। যেখানে তারা প্রচলিত প্রযুক্তির সঙ্গে নতুন প্রযুক্তির সমন্বয় করে কাজ করছেন।

ভ্যাকসিন আবিষ্কার করে মহামারী নিয়ন্ত্রণের যে কৌশল তাতে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ইউরোপ। তবে পারিবারিক ডাক্তার দ্বারা নিজের বাহুতে ভ্যাকসিনের ডোজ গ্রহণের আগে অনেকগুলো কাজ সম্পন্ন করা বাকি আছে।

ভ্যাকসিন বিকাশের ধাপ

ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পথে যারা মানুষের শরীরের ট্রায়ালের কাজ করছে তারা আমেরিকান, ইউরোপিয়ান কিংবা চীনের দ্বারা অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা পাচ্ছে। আমেরিকান বায়োটেকনোলজি ফার্ম মডার্না বিশ্বের মাঝে প্রথম যারা ১৬ মার্চ মানুষের শরীরে ট্রায়াল শুরু করেছে, এটি তারা করেছে সার্স-কোভ-২-এর জেনেটিক সিকোয়েন্স চিহ্নিত হওয়ার পর।

এখন ছয়টি ভ্যাকসিন অনুমোদন পাওয়ার আগে মানুষের শরীরে ট্রায়ালের তৃতীয় ধাপে আছে। এই ছয়টির তিনটিই চীনের, যার মাঝে দুটি আবিষ্কারের কাজ করছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সিনোফার্ম এবং একটি করছে প্রাইভেট ফার্ম সিনোভ্যাক বায়োটেক। অন্য একটি আবিষ্কারের কাজ করছে যুক্তরাজ্য, যা উৎপাদনে যৌথভাবে কাজ করছে ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা। এছাড়া অন্য দুটি ভ্যাকসিন আবিষ্কারের কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র। মডার্নারটি বাদ দিলে অন্যটির বিকাশের কাজ করছে ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট পিফিজার।

আবিষ্কারের পর কেবল ছয় মাসের মাঝে এই ধাপে পৌঁছানো অবিশ্বাস্য। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির জেনার ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর প্রফেসর আদ্রিয়ন হিলের মতে, সাধারণ এই ধাপে যেতে অন্তত ছয় বছর লাগে।

যত দ্রুত সম্ভব ভ্যাকসিন আনার জন্য অনেক দেশ তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালের কার্যকারিতা প্রমাণের আগেই ভ্যাকসিন এগিয়ে দিচ্ছে। এরই মধ্যে চীন কাজটি করেছে। জুনের শেষে সেনাবাহিনীতে ব্যবহারের জন্য পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন অনুমোদন দিয়েছে তারা। এমন উদ্বেগ থাকা সত্ত্বেও এখন রাশিয়া একই কাজ করেছে। বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এড়িয়ে ১১ আগস্ট দেশের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন স্পুটনিক ভি নামের ভ্যাকসিন রেজিস্ট্রেশনের ঘোষণা দিয়েছেন। যেটি সাধারণের ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত বিশ্বের প্রথম করোনা ভ্যাকসিন। রাশিয়া ভ্যাকসিনের পরীক্ষার কোনো বৈজ্ঞানিক ডাটাও প্রকাশ করেনি। তাছাড়া তৃতীয় ধাপের জরুরি ট্রায়াল শুরুর আগে এই ভ্যাকসিন অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

এই ভ্যাকসিন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতিমান ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্থনি ফাউসি বলেন, আমি আশা করি যে রাশিয়া সত্যিকার অর্থেই নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করেছে যে ভ্যাকসিনটি নিরাপদ। তবে আমি মারাত্মকভাবে সন্দেহ করি যে তারা অদৌ সেটি করেছে কিনা।

তবে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইউরোপে এ ধরনের ফাস্ট-ট্রেকিং হবে না, যেখানে নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা পরীক্ষার পূর্ণ নিশ্চয়তা প্রয়োজন। অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলেছে, তারা অনেক দেশের সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যও আছে এবং অন্য সংস্থাগুলোর সঙ্গে ন্যূনতম ২ বিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিনের চুক্তি হয়েছে। সেপ্টেম্বরের শুরুতে এর ডেলিভারি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

এদিকে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসের একটি শাখা বায়োমেডিকেল অ্যাডভান্সড রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিএআরডিএ) ভ্যাকসিনের বিকাশ ও প্রস্তুতির জন্য অ্যাস্ট্রাজেনেকাসহ অন্যান্য কোম্পানিকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার প্রদান করছে। এটি নোভাভ্যাক্স, পিফিজার-বায়োটেক, জনসন অ্যান্ড জনসন, মডার্না এবং সানোফি ও জিএসকের যৌথ প্রয়াসের ডোজগুলোর জন্যও চুক্তি করেছে।

এই গতি আবার অনেক কারণগুলোর একটি যে জন্য অনেক নাগরিক ভ্যাকসিন নেয়ার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। সাম্প্রতিক একটি পুল বলছে, কেবল ৬৬ শতাংশ আমেরিকান আবিষ্কার হওয়ার পর কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন গ্রহণের জন্য রাজি আছে। তবে এমনকি যদি সবাই ভ্যাকসিনের ডোজ গ্রহণও করে তার পরও এটি শতভাগ কার্যকর হবে না।

ভ্যাকসিন প্রচেষ্টার প্রধান তিনটি কেন্দ্র যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্র সরকার ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে প্রথমে তারাই পাবে এমন পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। এটি অপারেশন ওয়ার্প স্পিডের একটি বিস্তৃত প্রচেষ্টা, যাকে তুলনা করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের চাঁদে মানুষ পাঠানোর সঙ্গে। এটি শুরু করা হয়েছে ১৫ মে থেকে, লক্ষ্য ২০২১ সালের জানুয়ারির মধ্যে ৩০০ মিলিয়ন নিরাপদ ও কার্যকর ভ্যাকসিন সরবরাহ করা।

এই মিশনটি বাছাই করেছে আটটি প্রতিশ্রুতিশীল ভ্যাকসিন প্রার্থীকে এবং তাদের সুপারচার্জড করেছে। ভ্যাকসিন প্রচেষ্টায় এরই মধ্যে ১২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করা হয়েছে। ভ্যাকসিনের বিকাশ ও সংগ্রহের জন্য ১০ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার এবং ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার প্রস্তুতকরণ ও বিতরণের জন্য।

এই চুক্তির অংশ হিসেবে আমেরিকা ভ্যাকসিনের কয়েক মিলিয়ন ডোজ উৎপাদনে বিনিয়োগ করতে সম্মত হয়েছে। ফলে কোনোটি যদি অনুমোদিত হয় তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কী পরিমাণ বিতরণ করা হবে তা নিশ্চিত করা হয়েছে।

আমেরিকা ভাইরাস দ্বারা সবচেয়ে বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ। তাই একটি ভ্যাকসিনকে নিশ্চিত করার জন্য তারা বেশি জোর দিচ্ছে।

ইউরোপ

ইউরোপিয়ান কমিশন ভ্যাকসিন গবেষণা ও আবিষ্কারে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করছে। তারা এখন পর্যন্ত ৩৫০ মিলিয়ন ইউরো খরচের ব্যাপারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। রিসার্চ ও ইনোভেশন প্রোগ্রামের অধীনে (যা ‘হরিজোন ২০২০’ নামে পরিচিত) এবং ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ভ্যাকসিন প্রচেষ্টায় সাহায্য করার জন্যও প্রস্তুত।

এই অর্থায়নের অংশ হিসেবে ইইউ ৭৫ মিলিয়ন ইউরো জার্মান বায়োটেক কোম্পানি কিউরভ্যাককে এবং ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড আরেকটি জামার্ন ফার্ম বায়োনটেককে ধার দিয়েছে। দুটি কোম্পানিই মানবদেহে ট্রায়াল শুরু করেছে।

চীন

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ যেখানে কেবল ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা ভ্যাকসিন ব্যবহারে নিজেদের অঞ্চলের মানুষকে অগ্রাধিকার দেবে, সেখানে চীন কোনো গোপনীয়তার ধার ধারেনি।

মে মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলিতে বলেন, তারা বৈশ্বিকভাবে ভ্যাকসিন দিয়ে সহায়তা করবে, তবে সেটি তারা করবে চীনে প্রয়োগ করার পর।

সিএনএন থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

পা-বিহীন টিকটিকিসহ শতাধিক নতুন প্রজাতির আবিষ্কারের বছর ২০২৩
গলাব্যথা সারাতে কেন লবণ-পানি পান করবেন
থার্টিফার্স্টে মেট্রোরেলের আশপাশে ফানুস না ওড়ানোর অনুরোধ
মাশরাফির দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড ভাঙলেন সোহান
ঢাবির অধীনে এডুকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তির সুযোগ
আজ পীরগঞ্জ যাচ্ছেন শেখ হাসিনা
প্রকৃতি ও সংস্কৃতির সমন্বয়ে পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ গড়তে হবে
দুই বাংলাদেশির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করলো সৌদি
প্রথম দিনেই ‘সালার’ আয় ১৭৫ কোটি
টানা তিন বছর মুনাফা না থাকলে ব্যাংকাস্যুরেন্স সেবা নয়