কাদা কিংবা ধুলার মধ্যে খেলা শরীরের জন্যে উপকারী

কাদা কিংবা ধুলার মধ্যে খেলা শরীরের জন্যে উপকারী
খুব কম মানুষই পাওয়া যাবে, যাঁরা শৈশবে কাদামাটিতে খেলেননি বা গায়ে মাখেননি। এ জন্য অবশ্য মা-বাবার বকাও কম শুনতে হয়নি। প্যাক-কাদা গায়ে মাখলে নানা রোগ হবে- এমন আশঙ্কা থেকেই শিশুদের এসব থেকে বারণ করা হতো। তবে মানুষের দীর্ঘদিনের এমন ধারণা পাল্টে দিলেন গবেষকরা। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা যায়, প্যাক-কাদাই নাকি শিশুদের জন্য ভালো। এতে শারীরিক ও মানসিকভাবে উপকৃত হয় শিশুরা। বাড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।

শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এ নিয়ে গবেষকদের যুক্তি বেশ শক্ত। মূলত তাঁদের গবেষণা মানুষকে মাটি ও কাদাসংলগ্ন হওয়ার তাগিদ দিচ্ছে। তাঁরা বলছেন, শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য প্যাক-কাদার প্রভাব বেশ ইতিবাচক। এর মাধ্যমে শিশুরা কিছু 'বন্ধু অণুজীব' দ্বারা আক্রান্ত হয়। এ অণুজীব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে প্রশিক্ষণ দিতে থাকে। এভাবে এগুলো বেশ কয়েকটি রোগের বিরুদ্ধে লড়াকু করে গড়ে তোলে। এসব রোগের মধ্যে অ্যালার্জি, অ্যাজমা, হতাশা ও অবসাদ উল্লেখযোগ্য।

এরই মধ্যে মনস্তত্ত্ববিদরা একমত হয়েছেন, শিশুদের জন্য ঘরের বাইরে খেলাধুলার জুড়ি নেই। এতে মস্তিস্ক প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখা ও এর সান্নিধ্যে যাওয়ার সুযোগ পায়। প্রাকৃতিক পরিবেশে মন ও মস্তিস্ক ভালো বোধ করে। এটা মনের ক্লান্তি দূর করতে ভূমিকা রাখে। ২০০৯ সালে এক গবেষণার তথ্যানুযায়ী, যে শিশুরা মনোযোগ সংকট-সংশ্নিষ্ট জটিলতায় ভুগছে, তাদের প্রতিদিন অন্তত ২০ মিনিট পার্কে হাঁটার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ওই পার্কে অবশ্যই ঘাস, গাছ ও বাতাস থাকতে হবে।

ইতালির পেলারমো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ও শিশু মনস্তত্ত্ববিদ ফ্রান্সেসকো ভিট্রানো বলেন, ঘরের ভেতরে ভিডিও গেম আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ না রেখে শিশুরা যেন প্রকৃতির কাছে যায়। প্যাক-কাদার মধ্যে খেলাধুলা শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে সহায়ক। অনেক শিশুর চিকিৎসায় তিনি এ পদ্ধতিও ব্যবহার করেছেন। তিনি মনে করেন, প্যাক-কাদায় খেলার মাধ্যমে শিশুরা ক্রমেই তার শরীরের নানা সংকেত সম্পর্কে অবগত হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের মানব উন্নয়ন ও পরিবার বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এলিজাবেথ গেরশফের নেতৃত্বে এক গবেষণায় দেখা যায়, ঘরের বাইরে প্রাকৃতিক পরিবেশে খেলাধুলা করা শিশুদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এতে শিশুদের শারীরিক সক্ষমতা বাড়ে; স্থূলতা দূর হয়। সবকিছুর পর গবেষকরা মনে করছেন, প্যাক-কাদার মধ্যে 'গোপন কিছু' তো আছেই!

কী সেই গোপন কিছু? এটা হলো মানুষের সেই 'পুরোনো বন্ধু'। এ বিষয়ে প্রথম ধারণা পাওয়া যায় ১৯৮০ সালের দিকে। এই পুরোনো বন্ধুরা হচ্ছে কাদার অণুজীব। প্রাগ-ঐতিহাসিক কাল থেকে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে এসব অণুজীব প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। এগুলোর বেশিরভাগই ক্ষতিকারক নয়। এই অণুজীব মানুষের রোগ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাকে কোনো বিষয়ে অতিরঞ্জিত আচরণ থেকে বিরত থাকারও প্রশিক্ষণ দেয়। একাধিক গবেষণায় এর প্রমাণও পাওয়া গেছে।

তবে কাদামাটিতে খেলাধুলার অর্থ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকা বা হাত-মুখ না ধুয়ে খাওয়া-দাওয়া করাকে বোঝাচ্ছেন না গবেষকরা। পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অবশ্যই বাধ্যতামূলক। বিবিসি অবলম্বনে।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

পা-বিহীন টিকটিকিসহ শতাধিক নতুন প্রজাতির আবিষ্কারের বছর ২০২৩
গলাব্যথা সারাতে কেন লবণ-পানি পান করবেন
থার্টিফার্স্টে মেট্রোরেলের আশপাশে ফানুস না ওড়ানোর অনুরোধ
মাশরাফির দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড ভাঙলেন সোহান
ঢাবির অধীনে এডুকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তির সুযোগ
আজ পীরগঞ্জ যাচ্ছেন শেখ হাসিনা
প্রকৃতি ও সংস্কৃতির সমন্বয়ে পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ গড়তে হবে
দুই বাংলাদেশির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করলো সৌদি
প্রথম দিনেই ‘সালার’ আয় ১৭৫ কোটি
টানা তিন বছর মুনাফা না থাকলে ব্যাংকাস্যুরেন্স সেবা নয়