শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এ নিয়ে গবেষকদের যুক্তি বেশ শক্ত। মূলত তাঁদের গবেষণা মানুষকে মাটি ও কাদাসংলগ্ন হওয়ার তাগিদ দিচ্ছে। তাঁরা বলছেন, শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য প্যাক-কাদার প্রভাব বেশ ইতিবাচক। এর মাধ্যমে শিশুরা কিছু 'বন্ধু অণুজীব' দ্বারা আক্রান্ত হয়। এ অণুজীব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে প্রশিক্ষণ দিতে থাকে। এভাবে এগুলো বেশ কয়েকটি রোগের বিরুদ্ধে লড়াকু করে গড়ে তোলে। এসব রোগের মধ্যে অ্যালার্জি, অ্যাজমা, হতাশা ও অবসাদ উল্লেখযোগ্য।
এরই মধ্যে মনস্তত্ত্ববিদরা একমত হয়েছেন, শিশুদের জন্য ঘরের বাইরে খেলাধুলার জুড়ি নেই। এতে মস্তিস্ক প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখা ও এর সান্নিধ্যে যাওয়ার সুযোগ পায়। প্রাকৃতিক পরিবেশে মন ও মস্তিস্ক ভালো বোধ করে। এটা মনের ক্লান্তি দূর করতে ভূমিকা রাখে। ২০০৯ সালে এক গবেষণার তথ্যানুযায়ী, যে শিশুরা মনোযোগ সংকট-সংশ্নিষ্ট জটিলতায় ভুগছে, তাদের প্রতিদিন অন্তত ২০ মিনিট পার্কে হাঁটার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ওই পার্কে অবশ্যই ঘাস, গাছ ও বাতাস থাকতে হবে।
ইতালির পেলারমো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ও শিশু মনস্তত্ত্ববিদ ফ্রান্সেসকো ভিট্রানো বলেন, ঘরের ভেতরে ভিডিও গেম আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ না রেখে শিশুরা যেন প্রকৃতির কাছে যায়। প্যাক-কাদার মধ্যে খেলাধুলা শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে সহায়ক। অনেক শিশুর চিকিৎসায় তিনি এ পদ্ধতিও ব্যবহার করেছেন। তিনি মনে করেন, প্যাক-কাদায় খেলার মাধ্যমে শিশুরা ক্রমেই তার শরীরের নানা সংকেত সম্পর্কে অবগত হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের মানব উন্নয়ন ও পরিবার বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এলিজাবেথ গেরশফের নেতৃত্বে এক গবেষণায় দেখা যায়, ঘরের বাইরে প্রাকৃতিক পরিবেশে খেলাধুলা করা শিশুদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এতে শিশুদের শারীরিক সক্ষমতা বাড়ে; স্থূলতা দূর হয়। সবকিছুর পর গবেষকরা মনে করছেন, প্যাক-কাদার মধ্যে 'গোপন কিছু' তো আছেই!
কী সেই গোপন কিছু? এটা হলো মানুষের সেই 'পুরোনো বন্ধু'। এ বিষয়ে প্রথম ধারণা পাওয়া যায় ১৯৮০ সালের দিকে। এই পুরোনো বন্ধুরা হচ্ছে কাদার অণুজীব। প্রাগ-ঐতিহাসিক কাল থেকে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে এসব অণুজীব প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। এগুলোর বেশিরভাগই ক্ষতিকারক নয়। এই অণুজীব মানুষের রোগ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাকে কোনো বিষয়ে অতিরঞ্জিত আচরণ থেকে বিরত থাকারও প্রশিক্ষণ দেয়। একাধিক গবেষণায় এর প্রমাণও পাওয়া গেছে।
তবে কাদামাটিতে খেলাধুলার অর্থ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকা বা হাত-মুখ না ধুয়ে খাওয়া-দাওয়া করাকে বোঝাচ্ছেন না গবেষকরা। পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অবশ্যই বাধ্যতামূলক। বিবিসি অবলম্বনে।