এক ঘণ্টা সময়ের ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষায় জাহিদ পেয়েছেন ৭৯ দশমিক ৭৫। তার মেরিট স্কোর ২৭৯ দশমিক ৭৫। তার ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ।
জাহিদ হাসান সাধারণ এক কৃষক পরিবারের সন্তান। কৃষক বাবাসহ পরিবারের সবার মুখ উজ্জ্বল করেছেন তিনি। ছোটবেলা থেকে জাহিদের মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। নিজের চেষ্টা, পরিবারের সদস্যদের এবং ছোট মামা মোঃ মানিক সৈয়াল ও খালা নয়নতারাসহ শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় অদম্য মেধাবী এ শিক্ষার্থী নিজেকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। কোনো বাধাই দমিয়ে রাখতে পারেনি প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বেড়ে উঠা জাহিদের শিক্ষাজীবনের পথ চলাকে। অদম্য সেই জাহিদ এবার কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
জাহিদ হাসান শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়নের পাইকবাড়ি গ্রামের এক অতি সাধারণ পরিবারের সন্তান। বাবা মো. ইয়াছিন বকাউল পেশায় একজন সাধারণ কৃষক, পাশাপাশি দর্জি কাজ করেন ও মা হাছিনা গৃহিনী। দুই ভাইয়ের মধ্যে জাহিদ বড়। ছোটবেলা থেকেই তিনি অদম্য মেধাবী ছিলেন।
জাহিদ হাসান আব্বাস আলী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর আব্বাস আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সালে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।২০২০ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাশ করেন।পরে চাঁদপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হয়ে ২০২২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায়ও জিপিএ-৫ পান তিনি। এ ছাড়া জাহিদ শিক্ষাজীবনে বৃত্তিসহ বিভিন্ন মেধা নির্বাচনি পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জন করেন।
এদিকে ভেদরগঞ্জ উপজেলা থেকে একমাত্র কুমিল্লা মেডিকেলে চান্স পাওয়া শিক্ষার্থী জাহিদের পরিবার, তার নিজ গ্রামসহ উপজেলায় বইছে আনন্দের বন্যা। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে উপজেলার একমাত্র শিক্ষার্থী হিসেবে জাহিদ চান্স পাওয়ায় পুরো উপজেলার মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিনন্দন জানাচ্ছেন তাকে।
জাহিদ বলেন, কুমিল্লা মেডিকেলে চান্স পাওয়ায় প্রথমেই মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার। আর সেই লক্ষ্যে আমি লেখাপড়া চালিয়ে গিয়েছি। সরকারি মেডিকেলে চান্স পেয়ে সত্যিই খুব ভালো লাগছে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, আমি যাতে একজন আদর্শবান ডাক্তার হয়ে নিজ গ্রামসহ আমাদের উপজেলার দরিদ্র-অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারি।
তিনি আরও বলেন, আমি সাধারণ কৃষক পরিবারের একজন সন্তান হওয়ায় নিজে লেখাপড়ার পাশাপাশি মাঠে বাবার কৃষি কাজেও সহযোগিতা করতাম। আমার এই ভালো ফলাফলের পেছনে মা-বাবা, মামা,খালা ও শিক্ষকদের অবদান অপরিসীম।
ছেলের এই সাফল্যে আনন্দে কেঁদেই ফেলেন জাহিদের মা-বাবা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ছেলের সাফল্যে খুব আনন্দ হচ্ছে। আল্লাহ আমাদের পুরস্কৃত করেছেন। আমাদের ছেলে যাতে ভালো ডাক্তার হয়ে গরিব ও অসহায় মানুষের সেবা করতে পারে, সে জন্য সবার দোয়া কামনা করছি।
জাহিদের প্রতিবেশী সাজাহান পাইক বলেন, ছোটবেলা থেকেই জাহিদ লেখাপড়ায় ছিল অদম্য মেধাবী। অবশেষে আমাদের পরিবারের সবার প্রচেষ্টা, শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা ও সর্বোপরি জাহিদের নিজ প্রচেষ্টায় সে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে।
আব্বাস আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাউসার আহমেদ বলেন, জাহিদ খুবই মেধাবী ছাত্র। সে জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষায় আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। তার কৃতিত্বে আমরা গর্বিত।
কুমিল্লা মেডিকেলে চান্স পাওয়ায় জাহিদকে অভিনন্দন জানিয়ে ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, জাহিদ তার লালিত স্বপ্ন পূরণের মাধ্যমে একজন গর্বিত ডাক্তার হয়ে যেন দেশের সাধারণ মানুষের সেবা করতে পারেন সেই প্রত্যাশা রাখছি। এবং অতি শিঘ্রই জাহিদকে উপজেলা প্রশাসন থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে ।