ওয়াশিংটনভিত্তিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটি এর ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক প্রতিবেদনে আরো বলেছে, বিনিয়োগকারীরা তাদের ভূরাজনৈতিক অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিদেশী প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রবাহের গতিপথ পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে। বিনিয়োগকারীরা তাদের পছন্দগুলোকে প্রাধান্য দেয়ায় বিশ্ব দীর্ঘমেয়াদে উৎপাদনের প্রায় ২ শতাংশ হারাতে পারে।
তবে অঞ্চলভেদে ক্ষতির তীব্রতা কম বেশি হবে। আইএমএফের অর্থনীতিবিদরা বুধবার এ-সম্পর্কিত ব্লগ পোস্টে বলেন, মূলধন গঠনের পরিমাণ কমে যাওয়া এবং প্রযুক্তিনির্ভর উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির ফলে উন্নত অর্থনীতি থেকে আসা বিনিয়োগ হ্রাস উন্নয়নশীল দেশ ও উদীয়মান বাজারগুলোকে সুনির্দিষ্টভাবে প্রভাবিত করবে। খণ্ডিত বিশ্ব আরো দরিদ্রতায় নিমজ্জিত হতে পারে।
জানুয়ারিতে আইএমএফের অক্টোবরের পূর্বাভাস পরিবর্তন করে চলতি বছর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দশমিক ২ শতাংশ পয়েন্ট বাড়িয়ে ২ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত করে। তবে প্রতিষ্ঠানটি সতর্ক করে দিয়ে বলেছে যে আর্থিক পরিবেশ এখনো ‘নাজুক’ অবস্থায় রয়েছে।
ওই সময় প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়, দীর্ঘদিনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক যূথবদ্ধতা সত্ত্বেও বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক বিভক্তীকরণের তীব্রতা উৎপাদন ৭ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস করতে পারে।
২০১৬ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের মতো উদ্বেগের মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, যা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অব্যাহত রয়েছে, এমন এক বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে আইএমএফের পক্ষ থেকে এ সতর্কবার্তা দেয়া হলো।
ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা মূলত বিভিন্ন দেশের মধ্যকার সম্পর্কগুলোকে পরীক্ষার মুখে ঠেলে দিচ্ছে, যা একই সঙ্গে বিশ্বায়নের সুবিধাগুলো নিয়ে নতুন করে সন্দেহের উত্থাপন করেছে। পাশাপাশি বিশ্বকে বিভক্ত করছে ক্রমবর্ধমান খণ্ডিত বাণিজ্যিক ব্লকে।
বুধবার আইএমএফের পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, যদি ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি তীব্রতর হতে থাকে এবং দেশগুলো আরো এ বিরোধে জড়িয়ে যায়, তাহলে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ জোটভুক্ত ব্লকের মধ্যে আরো বেশি কেন্দ্রীভূত হতে পারে।
এফডিআই প্রবাহের পরিবর্তন উন্নত অর্থনীতির তুলনায় উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হবে। কেননা উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলো বৈদেশিক বিনিয়োগের ওপর বেশি নির্ভরশীল। বহুপক্ষীয় এ ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি আন্তঃসীমান্ত পুঁজির বহিঃপ্রবাহ বন্ধ এবং অনিশ্চয়তা বাড়িয়ে বিশ্বের আর্থিক স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিতে পারে, যা একই সঙ্গে ব্যাংকের তহবিল ব্যয় বৃদ্ধি, মুনাফা হ্রাস ও বেসরকারি খাতে ঋণসহায়তা কমিয়ে অস্থিতিশীলতা বাড়ায়। তাছাড়া ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা একাধিক উৎসের মাধ্যমে আর্থিক স্থিতিশীলতার বিপরীতেও হুমকি তৈরি করে।
এ ধরনের ঝুঁকির পরিপ্রেক্ষিতে নীতিনির্ধারকদের সচেতন হওয়া উচিত বলে মনে করে আইএমএফের নীতিনির্ধারকরা। তাদের পক্ষ থেকে এটাও বলা হয় যে জাতীয় নিরাপত্তাজনিত কারণে আর্থিক কড়াকড়ি আরোপ বিশ্বব্যাপী সামষ্টিক আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য অপ্রত্যাশিত ফলাফল বয়ে আনতে পারে।
তাই ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা এবং অর্থনৈতিক ও আর্থিক বিভাজন কমাতে বহুপক্ষীয় প্রচেষ্টা জোরদার করা উচিত বলে মনে করে সংস্থাটি। আর্থিক ব্যবস্থায় ভূরাজনৈতিক অভিঘাতের প্রভাব প্রশমনের জন্য সংস্থাটির পক্ষ থেকে নীতিনির্ধারকদের কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। যার মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত আন্তর্জাতিক রিজার্ভ, মূলধন ও তারল্য সম্পদ নিশ্চিত করা।