এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) গত মঙ্গলবার চিঠি দিয়েছে ইউএফএস। চিঠিতে বলা হয়, ইউএফএসের আওতাধীন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৪টি মিউচুয়াল ফান্ডের ২৩৫ কোটি টাকা আগামী তিন মাসের মধ্যে তিন কিস্তিতে পরিশোধ করার অনুমোদন চাই। তিনটি কিস্তির মধ্যে প্রথম কিস্তি দেওয়া হবে চলতি এপ্রিলে। এ মাসে ৫০ কোটি টাকা পরিশোধ করা হবে। এরপর মে মাসে ৭৫ কোটি ও বাকি টাকা জুনের মধ্যে পরিশোধ করা হবে।
এ সংক্রান্ত একটি চিঠি সৈয়দ হামজা আলমগীরের বাবা সৈয়দ আলমগীর ফারুক ও মা ইসরাত আলমগীর কমিশনের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে দেখা করে দিয়েছেন। এরপর লিখিত প্রতিশ্রুতি চাওয়া হলে তারা বোর্ড মিটিং করে রেজুলেশনসহ কমিশনে চিঠি দেয়। চিঠি বিষয়টি কাছে স্বীকার করেন আলমগীর ফারুক।
জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর ফারুক বৃহস্পতিবার বলেন, আপনারা ডকুমেন্ট পেলে আমার কিছু বলার নেই। তবে এতটুকু বলতে পারি যা লিখেছি, সেটা ভেবে চিন্তে। বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। পুলিশ তদন্ত করছে। ফলে তদান্তাধীন বিষয় এর বেশি বলা ঠিক হবে না।
এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৫ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট।
উল্লেখ্য, জালিয়াতির মাধ্যমে পুঁজিবাজারে ৪ মিউচুয়াল ফান্ড থেকে ২৩৫ কোটি ১২ লাখ টাকা সরিয়ে নিয়েছে ইউএফএস। এরমধ্যে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ হামজা আলমগীরের নেতৃত্বে ১৭০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা সরাসরি আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে। এই টাকা নিয়ে গত ১৩ অক্টোবর তিনি দুবাই পালিয়েছেন। এ বিষয়ে গত ১ জানুয়ারি প্রতিবেদন প্রকাশ হলে নড়ে চড়ে বসে সংশ্লিষ্ট সংস্থা। স্বপ্রণোদিত হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বিএসইসির প্রতি রুল জারি করেন সর্বোচ্চ আদালত।
সর্বশেষ বিএসইসির তদন্ত রিপোর্টে ঘটনার সত্যতা মিলেছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি বেশ কিছু পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এসব পদক্ষেপের মধ্যে ইউএফএসের লাইসেন্স বাতিল, কোম্পানির এমডিসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা, অডিট কোম্পানি নিষিদ্ধ করা এবং সরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বিএসইসির তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ৫টি মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনা করছে ইউএফএস। এসব তহবিলের আকার ৪৪০ কোটি টাকা। ইউএফএসের ফান্ডগুলোর মধ্যে আইবিবিএল ২০০ কোটি টাকা, ব্যাংক এশিয়া ১০০ কোটি, পপুলার লাইফ ৮০ কোটি, পদ্মালাইফ ৫০ কোটি ও প্রগতি লাইফ ইউনিট ফান্ডের ১০ কোটি টাকার তহবিল পরিচালনা করছে এই প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও সানলাইফ ইউনিট ফান্ডের ১০ কোটি ও ইউএফএস ইউনিট ফান্ডের ১০ কোটি টাকার তহবিল প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এর মধ্যে ১৭০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হামজা আলমগীরের নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেট। এ ক্ষেত্রে নিজের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছে ৫৮ কোটি ৯০ লাখ, এফডিআর থেকে তুলে নিয়েছে ৪৭ কোটি ৯২ লাখ এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে থাকা ৬৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে। এর মধ্যে জড়িত রয়েছেন কোম্পানির প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা মমিনুল হক, ম্যানেজার সাকিব আল ফারুক ও প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান রাজিব। এই চার কোম্পানির মাধ্যমে শুধু কাটালি টেক্সটাইলের শেয়ার কিনেছে প্রতিষ্ঠানটি।