বঙ্গবাজারের পোড়া টাকা বদলে দিতে যা বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক

বঙ্গবাজারের পোড়া টাকা বদলে দিতে যা বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্যান্য ব্যাংকের শাখায় ছেঁড়া-ফাটা নোট পরিবর্তনের সুযোগ আছে। কোনো ব্যক্তি ছেঁড়া-ফাটা নোট নিয়ে গেলে টাকার ৫১ থেকে ৭৫ শতাংশ অবশিষ্ট থাকলে ৫০ শতাংশ টাকার মালিক ফিরে পান, আর ৭৬ থেকে ৯০ শতাংশ অবশিষ্ট থাকলে পান ৭৫ শতাংশ। ৯০ শতাংশের বেশি থাকলে পুরো টাকাই পেয়ে থাকেন টাকার মালিক। কিন্তু টাকা পুড়ে গেলে কী করবেন?

পোড়া টাকার ক্ষেত্রে টাকার মালিক ব্যাংকমুখী হলে সঙ্গে সঙ্গেই টাকা পাবেন না। এক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত টাকার তথ্য-প্রমাণসহ বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর আবেদন করতে হবে। আবেদনের পরই বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় আসতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

টাকা পুড়লে সেই পোড়া টাকার মূল্য উদ্ধারের জন্য যে কাজগুলি করতে হবে, তার একটি লিস্ট দেওয়া হলো-

১। বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর একটি আবেদন করতে হবে।
২। পোড়ার কারণ ও পরিমাণসহ থানায় জিডি করে তার মূল কপি নিতে হবে।
৩। পোড়ার কারণ ও পরিমাণসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধির প্রত্যায়ন পত্র নিতে হবে।
৪। জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি ও মূল কপি লাগবে।
৫। পেপার ক্লিপিং লাগবে।

অর্থাৎ আপনার টাকা পুড়লে প্রথমেই আপনি সেই পোড়া টাকা সংগ্রহ করে ফেলুন। পোড়া টাকা সংগ্রহের পর যদি দেখেন নোটের ৫১% এর কম অবশিষ্ট আছে, তাহলে সেই নোট বাতিল। যদি কোনো নোটের ৫১% এর বেশী ঠিক থাকে, তাহলেই কেবল সেই নোটগুলি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কিছু অর্থ উদ্ধার করা সম্ভব। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিও অফিসে গেলে আপনাকে একটি তারিখ দেবে, সেদিন আপনাকে আপনার পোড়া টাকা ও উপরের উল্লেখিত কাগজ নিয়ে হাজির হতে হবে।

সপ্তাহে একদিন (সোমবার) পোড়া টাকা চেক করা হয় বলে আপনি তারিখ পাবেন কমপক্ষে ৬ থেকে ১২ মাস পরের কোনো সোমবারের।

তারিখ পাওয়ার পর পোড়া টাকা উদ্ধারে আপনার প্রথম কাজ হচ্ছে থানায় জিডি করে তার মূল কপি সংগ্রহ করা। এরপর আপনি চলে যাবেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কাছে। পোড়ার কারণ ও পরিমাণসহ উল্লেখ করে তার কাছ থেকে একটি প্রত্যায়ন পত্র সংগ্রহ করবেন। জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি করুন। সংবাদ পত্রের ক্লিপিং যদি থাকে, তাও সংগ্রহ করুন। এবার একটি আবেদন পত্র লিখে সমস্ত কাগজ একটি ফাইলে বন্দি করে অপেক্ষায় থাকুন আপনার তারিখ আসা পর্যন্ত। তবে উপর লেভেলের কেউ থাকলে আপনি তারিখের ঝামেলা এড়িয়ে যেতে পারবেন।

পোড়া টাকা নিয়ে সিও অফিসে যাবার আগে আপনি পোড়া টাকার পোড়া অংশটুকু বা ছাই টুকু এবং আগুনের তাপে কালো হয়ে যাওয়া অংশটুকু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ফেলে দিন। এতে আপনার কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষায় বসে থাকা কমে যাবে।

নির্দিষ্ট তারিখে সকাল ১১টার মধ্যে পোড়া টাকা ও কাগজ নিয়ে পৌঁছে যান সিও অফিসে। দু’জন লোক আসবেন আপনার টাকা নিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পোড়া অংশ ছিঁড়তে। আপনি যদি বাড়িতে এই কাজটি করে নিয়ে যান, তাহলে এই বিরক্তিকর সময়টুকু বেঁচে যাবে। এবার তারা স্ক্যানার মেশিনে একটি একটি করে নোট ফেলে স্ক্যানিং করে রিডিং নিয়ে সেই প্রিন্টেড রিডিং এর কাগজ প্রতিটি নোটের সঙ্গে স্টেপল করে সেটে দিতে শুরু করবেন। একটি একটি করে সবগুলি নোটে এই কাজ করা হবে। স্ক্যানিং মেশিনে দেখা হয় পোড়া নোটটির কত অংশ ভালো আছে। ৫১% ভালো না থাকলে সেই নোটটি বাতিল হয়ে যাবে।

৫১% ভালো থাকা টিকে যাওয়া নোটগুলিকে এবার জাল নোট চেকিং মেশিনের নিচে দেয়া হবে কোনো জাল টাকা আছে কিনা তা দেখার জন্য। কোন জাল নোট থাকলে সেটিও বাদ হয়ে যাবে এখানে।

এবার অবশিষ্ট টাকাগুলিকে ৩টি ভাগে ভাগ করা হবে। প্রথম ভাগে থাকবে ৫১% থেকে ৭৫% টিকে থাকা নোট গুলি। এই নোট গুলির জন্য আপনার ৫০% কেটে রেখে ৫০% টাকা আপনাকে দেয়া হবে। অর্থাৎ ১০০০ টাকার নোট থাকলে আপনাকে দেয়া হবে ৫০০ টাকা।

দ্বিতীয় ভাগে থাকবে ৭৬% থেকে ৯০% টিকে থাকা নোটগুলি। এই নোটগুলির জন্য আপনার ২৫% কেটে রেখে ৭৫% টাকা আপনাকে দেয়া হবে। অর্থাৎ ১০০০ টাকার নোট থাকলে আপনাকে দেয়া হবে ৭৫০ টাকা।

তৃতীয় ভাগে থাকবে ৯১% থেকে ৯৯% টিকে থাকা নোটগুলি। এই নোটগুলির জন্য আপনার কোনো টাকাই কাটা যাবে না। অর্থাৎ, ১০০০ টাকার নোট থাকলে আপনাকে দেয়া হবে ১০০০ টাকাই।

এবার আপনার টাকাগুলির সম্পূর্ণ বিবরণ কয়েকটি আলাদা আলাদা ফরমে লেখা হবে। সবগুলিই অফিসিয়াল কাজ। আপনাকে শুধু দু’টি পাতায় আপনার নাম ঠিকানা ও স্বাক্ষর দিতে হবে।

এরপর ক্যাশ কাউন্টার ডিপার্টমেন্ট থেকে একজন ব্যক্তি এসে আপনার তিন ভাগ করা টিকে যাওয়া টাকাগুলি গুনবেন। আগের দুই ব্যক্তির গোনা হিসেবের সঙ্গে নিজের হিসাব মেলাবেন। হিসাব মিলে গেলে একটি প্যাকেটে টাকাগুলি রেখে প্যাকেটের উপরে আগের দুই ব্যক্তির লেখা হিসেবের নিচে নিজের হিসাব বুঝে পেয়েছেন সেটি লিখবেন।

এবার আপনার পোড়া টাকা ও কাগজ নিয়ে তারা চলে যাবে সিও স্যারের খাস কামরায়। সেখানে আবার সমস্ত কিছু চেক করবেন এবং সব কিছু সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে মর্মে বুঝে পেয়ে টাকার প্যাকেটটি সিলগালা করে দেবেন।

প্রথম দু’জনের একজন ব্যক্তি এবার আপনার টাকার সিল করা প্যাকেট ও হাতে লিখিত সেই ফরমের কাগজগুলি নিয়ে আপনাকেসহ চলে আসবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন ৩০ তলা ভবনের নিচতলার কাউন্টারের সামনে। সেখানে একজন আপনার প্যাকেটটি বুঝে নিয়ে ফরমের মধ্যে নিজের হিসেব লিখে নিয়ে সেই অংশটি আপনাকে ছিঁড়ে দিয়ে দেবে। এখানে লেখা থাকবে আপনি মোট কত টাকা ফেরত পাচ্ছেন।

পরদিন আপনি ১২টার দিকে আবার চলে যাবেন এই ৩০ তলা দালানের ৩য় তালার পোড়া টাকা দাবি আদায় অংশে। সেখানে গিয়ে আপনাকে গতকাল দেয়া হিসাবের অংশটি দেখাতে হবে। সেটি দেখে আপনার দাবি পরিশোধের অনুমতি দেয়া হলে সেটি নিয়ে নিচের কাউন্টারে গেলে আপনার হিসেব অনুযায়ী দাবিকৃত টাকা পরিশোধ করা হবে চকচকে নতুন নোটে।

বি.দ্র. ২০০-৪০০ টাকার জন্য এই ঝামেলা পোহাবেন কিনা বিবেচনা করুন। তবে আপনি যদি সাহস করে চলেই যান, তাহলে ঐদিন আপনার কাছে কোনো কাগজ না থাকলেও বড় কোনো পার্টির সঙ্গে আপনার এই অল্প টাকা মিলিয়ে দিয়ে আপনাকে ওরা সাহায্য করবেন। ব্যাংকে লোক থাকলে বা ফোন করার মতো লোক থাকলে আপনার তারিখ ছাড়াই কাজ হওয়ার সুযোগ আছে।



আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

নতুন সুদহার নির্ধারণ করল বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাগেজ রুলের অপব্যবহারে ধ্বংস হচ্ছে জুয়েলারি শিল্প
বছর ঘুরলেও প্রবাসী আয়ে গতি ফিরেনি
বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার
গ্রাহক সংখ্যায় দেশসেরা প্রতিষ্ঠান নগদ
বছরজুড়ে আলোচনায় খেলাপি ঋণ, সুদহার ও বিনিময়হার
প্রথম দিনেই ২ লাখের বেশি পণ্যের অর্ডার পেলো ইভ্যালি
তিন মাসের মধ্যে সব দেনা পরিশোধ শুরু করবো
পোশাকশিল্পকে রাজনৈতিক হাতিয়ার না বানানোর অনুরোধ
এক মাসের ব্যবধানে আলুর দাম বেড়েছে ৪৪ শতাংশ