গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভারত রফতানি বন্ধ করলে দেশের বাজারে হু হু করে দাম বেড়ে পেঁয়াজের কেজি রেকর্ড ২৫০ টাকা পর্যন্ত উঠে। এ কারণেই অজানা শঙ্কায় ক্রেতারা বাড়তি পেঁয়াজ কিনেছেন। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের কথাতে তেমন আভাসই পাওয়া গেছে।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, গত শুক্রবার থেকে পেঁয়াজের দাম বাড়া শুরু হয়। এরপর শনি ও রোববার দুই দিনেই খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। প্রথম দফায় শুক্রবার কেজিতে পেঁয়াজের দাম বাড়ে ১০ টাকা। শনিবার বাড়ে ১৫ টাকা এবং রোববার কেজিতে আরও ৫ টাকা বাড়ে। তবে সোমবার নতুন করে পেঁয়াজের দাম বাড়েনি।
ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবারের আগে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজের কেজি ছিল ৪০-৪৫ টাকা। যা শুক্রবার বেড়ে ৫০-৫৫ টাকা হয়। শনিবার ও রোববার দাম বেড়ে তা এখন ৬৫-৭৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি শুক্রবারের আগে ছিল ২৫-৩০ টাকার মধ্যে। এখন তা ৬০ টাকা হয়েছে।
রোববারও (৬ সেপ্টেম্বর) পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। গতকাল যারা পেঁয়াজ এনেছে তারা ৬৫ টাকা কেজি বিক্রি করছে। আর বাছাই করা পেঁয়াজের কেজি বিক্রি করছে ৭০-৭৫ টাকা। দাম বাড়ার খবরে শনিবার ও রোববার পেঁয়াজ কেনার এক প্রকার হিড়িক পড়ে।
হুট করে দাম বাড়ায় মানুষ ভয় পেয়েছে। কারণ গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করায় দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছিল। এ কারণেই হয়তো আবার যেন গত বছরের পরিস্থিতির মুখে পড়তে না হয়, সে জন্য অনেকে বাড়তি পেঁয়াজ কিনেছেন।
গত বছর যেভাবে পেঁয়াজের দাম বাড়া শুরু হয়েছিল এবারের লক্ষণও সেরকম। খুব দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে আবার পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বাড়তে পারে। ইতিমধ্যে কেজিতে ৩০ টাকা বেড়েছে।
অবশ্য কিছুটা স্বস্তির খবর দিয়েছেন বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দীন। রোববার তিনি বলেছেন, আমরা পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন। গতবারের মতো এবার পরিস্থিতি সৃষ্টির কোনো আশঙ্কা নেই। এবার আমরা খুব সতর্ক। এছাড়া আগামী সপ্তাহ থেকে নতুন পেঁয়াজ না ওঠা পর্যন্ত খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করবে টিসিবি। আশা করি যেটুকু বেড়েছে দু-একদিনের মধ্যে সেটুকু কমে যাবে। টিসিবিসহ দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুত রয়েছে।
ফিরে দেখা অতীত
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভারত রফতানি বন্ধ করলে দেশের বাজারে হু হু করে বেড়ে পেঁয়াজের কেজি ২৫০ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। এরপর পেঁয়াজের দাম কমাতে নানামুখী প্রচেষ্টা চালায় সরকার। মিয়ানমার, মিসর থেকে আমদানি করা হয় পেঁয়াজ। এতে কিছুটা দাম কমে। এরপরও পেঁয়াজের ঝাঁজ ছিল বেশ চড়া। একশ টাকার নিচে পেঁয়াজ মিল ছিল না। ফলে বাধ্য হয়ে বাড়তি দামে পেঁয়াজ কিনতে হয় ক্রেতাদের। কম দামে নিম্ন আয়ের মানুষকে পেঁয়াজ দিতে ট্রাকে বিক্রি শুরু করে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। টিসিবির পেঁয়াজ কেনা নিয়ে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।
এর মধ্যে গত বছরের নভেম্বর থেকে বাজারে আসতে শুরু করে নতুন দেশি পেঁয়াজ। যার প্রভাবে ক্রেতাদের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলে। ডিসেম্বরেই নতুন পেঁয়াজের কেজি একশ টাকার নিচে নামে যায়। এরপর চলতি বছরের মার্চের শুরুতে রফতানি নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয় ভারত। যার প্রভাবে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম কমে ৪০ টাকায় নামে।
কিন্তু মহামারি করোনার প্রকোপে মার্চের শেষ দিকে পেঁয়াজের দাম আবার কিছুটা বাড়ে। দাম বাড়ায় বাড়তি পেঁয়াজ কেনা শুরু করেন ক্রেতরা। এতে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৮০ টাকায় ওঠে। পরিস্থিতি সামাল দিতে মাঠে নামে ভোক্তা অধিদফতর ও র্যাব। পেঁয়াজের বাজারে চলে একের পর এক অভিযান।
এর মধ্যেই বাজারে বাড়তে থাকে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ। সঙ্গে আসতে থাকে ভারতের পেঁয়াজ। এতে আবারও দফায় দফায় দাম কমে পেঁয়াজের কেজি ৩০ টাকায় নেমে আসে। তবে ঈদের আগে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৪০ টাকায় উঠে। গত মাসেও আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ২০-২৫ টাকার মধ্যে ছিল। আর দেশি পেঁয়াজ ছিল ৪০-৪৫ টাকার মধ্যে।