এনবিআরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ খাতকে দীর্ঘদিন ধরে 'রিডিউসড রেট'-এ আমদানির সুযোগ দিয়ে আসছে সরকার। খাতগুলো এখন অনেকটা স্বয়ংসম্পূর্ণ। রাজস্ব আদায়ের অংশ হিসেবে এসব খাতের সুবিধা কিছুটা কমিয়ে ট্যাক্স বাড়ানো হচ্ছে।
অবশ্য এলপিজি সিলিন্ডারের উৎপাদন পর্যায়ে (লোহা আর স্টিল) ভ্যাট ৭.৫% করা হলেও এই সুযোগ এক বছরের জন্য থাকতে পারে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এলপিজি সিলিন্ডারের মূল কাঁচামালের আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট বেড়ে গেলে সিলিন্ডারের দাম বেড়ে যেতে পারে, যার চাপ যেতে পারে ভোক্তার উপর।
বর্তমানে এলপিজি সিলিন্ডারের কাঁচামাল হিসেবে স্টিল শিট আর ওয়েল্ডিং ওয়্যার আমদানিতে এ খাতের উদ্যোক্তাদের কাস্টমস ডিউটি দিতে হয় ৩ শতাংশ, পাশাপাশি ভ্যাট মওকুফ রয়েছে। আর সাধারণ আমদানিকারকদের দিতে হয় ৫ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট।
অর্থাৎ এলপিজি উৎপাদনকারীরা আলোচ্য মূল দুটি কাঁচামাল আমদানিতে সাধারণ আমদানিকারকদের তুলনায় প্রায় ১৭ শতাংশ ট্যাক্স সুবিধা পেয়ে থাকে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এনবিআরের এ সংশ্লিষ্ট আদেশ থেকে (স্ট্যাটিউটরি রেগুলেটরি অর্ডার-এসআরও) আলোচ্য স্টিল শিট আর ওয়েল্ডিং ওয়্যার বাদ যেতে পারে। যার অর্থ হলো, আলোচ্য দুটি কাঁচামাল আমদানির জন্য স্বাভাবিক শুল্ক ও ভ্যাট প্রদান করতে হতে পারে।
"এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে এলপিজি সিলিন্ডারের দাম বেড়ে যাবে ভোক্তা পর্যায়ে। যদি সাত শতাংশ আমাদের সুবিধা কর্তন করা হয়, তাহলে তা সিলিন্ডারের দামে সাত শতাংশ হিট করবে", দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি এলপিজি সিলিন্ডার ম্যানুফেকচারার্স কোম্পানির সিনিয়র একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, "বর্তমানে আমাদের একেকটি সিলিন্ডার উৎপাদনে ব্যয় হয় প্রায় ২৬০০ টাকা, যা ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে ১০০০ টাকায়। এখন ট্যাক্স সুবিধা কর্তন করা হলে এই চাপ যাবে ভোক্তার উপর।"
গত কয়েক বছর ধরে বাসাবাড়িতে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে আনতে সরকার এলপিজি সিলিন্ডারকে উৎসাহিত করছে। এর অংশ হিসেবে সরকারের দেওয়া রিডিউসড ট্যাক্স রেট এর সুবিধা নিয়ে দেশে স্থানীয়ভাবে এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনে বিনিয়োগ আসতে থাকে।
২০১৫ সালের দিকে বাংলাদেশে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের জন্য প্রথম এলপিজি সিলিন্ডারের কাঁচামাল আমদানির শুল্ক কমানো হয়।
বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এ সুবিধা প্রত্যাহার করা যৌক্তিক নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরাও।
এনবিআরের কাস্টমস পলিসির সাবেক সদস্য ফরিদ উদ্দিন টিবিএসকে বলেন, "যখন কোম্পানিগুলোকে এ সুবিধা দেওয়া হয়, তখন অনেক বেশি প্রোটেকশন দেওয়া হয়েছিলো, যা ছিলো বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতিবিরুদ্ধ। সেটি যৌক্তিক ছিলো না। এখন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে আইএমএফের চাপে এ সুবিধা তুলে নেওয়াও যৌক্তিক হবে না।"
"কেননা এর ফলে সিলিন্ডারের দাম বেড়ে গেলে, তা মূল্যস্ফীতির চাপে থাকা ভোক্তার উপর নতুন করে মূল্যবৃদ্ধির চাপ তৈরি করবে। আবার এ খাতে বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাসও কমে যাবে", বলেন তিনি।
খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, একসময় দেশে এলপিজি সিলিন্ডার আমদানি করা হলেও ২০১৫ সালের পর থেকে আমদানি কমে যায়। বর্তমানে স্থানীয় কোম্পানিগুলোর উৎপাদিত সিলিন্ডারই বাজারের চাহিদা পূরণ করছে। বর্তমানে বছরে সিলিন্ডারের চাহিদা ২৪ লাখ থেকে ৩০ লাখ।
বসুন্ধরা এলপি গ্যাস, ওমেরা এলপি গ্যাস এবং এনার্জিপ্যাক ছাড়াও আরো কিছু কোম্পানি স্থানীয়ভাবে এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদন করে।