বেতন কমানোর এ উদ্যোগ বন্ধের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা করে সম্প্রতি বিএসইসির চেয়ারম্যানের কাছে এ সংক্রান্ত চিঠি দেয়া হয়েছে। এতে অতি দ্রুত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্মীদের জন্য কমিশন কর্তৃক প্রণীত গ্রহণযোগ্য সার্ভিস রুল কার্যকর এবং নির্দিষ্ট বেতন কাঠামো ভিত্তি প্রণয়নের দাবি জানানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারের মূল চালিকাশক্তি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বিভিন্ন সুবিধাদি থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে দিন দিন কর্মস্পৃহা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে কর্মীরা বিভিন্ন স্পর্শকাতর বিষয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে পারছে না। এতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ গুণগত মান অর্জনে পিছিয়ে পড়ছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন পরবর্তী পর্যায়ে বিভিন্ন সময় বোর্ড এবং ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্তে বেতন-ভাতাদি, সার্ভিস রুল, অন্যান্য প্রাপ্য সুযোগ সুবিধা দফায় দফায় কমানো হয়েছে, যা ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইনের ১৮(ছ) ধারার ব্যতয়।
‘প্রধানমন্ত্রী সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন কয়েক দফা বৃদ্ধি করেছেন, সেই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও তাদের বেতন বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বিভিন্ন সময়ে কর্মীদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির পরিবর্তে বন্ধ করেছে। যা ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইনের ১৮(ছ) ধারার পরিপন্থী বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্মীদের যেসব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করেছে তার একটি চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে চিঠিতে। এর মধ্যে রয়েছে-
>> ২০১৮-১৯ অর্থবছরের পারফরমেন্স ইনক্রিমেন্ট বাতিল।
>> ২০১৯-২০ অর্থবছরের ইনক্রিমেন্ট, পারফরমেন্স ইনক্রিমেন্ট স্থগিত।
>> অর্জিত ছুটি বাতিল (কর্মীদের জমানো অর্জিত ছুটি)।
>> অর্জিত ছুটির টাকা বাতিল। গুটিকয়েক কর্মকর্তাকে টাকা প্রদান এবং বিনা নোটিশে ছুটির টাকা প্রদান না করা।
>> যাতায়াত ভাতা বাবদ মূল বেতনের ২০ শতাংশ কর্তন।
>> খাদ্য ভাতা বন্ধ। মাসিক এক লাখ টাকা ক্যান্টিন বাবদ এবং জুনিয়র কর্মীদের কর্মস্থলের বাহিরে কাজের কারণে যে খাদ্য ভাতা প্রদান করা।
>> প্রফিট বোনাস ৫ শতাংশ বন্ধের প্রক্রিয়া চলমান।
>> এলএফএ (লিভ ফেয়ার অ্যাসিসটেন্ট) বাবদ বেতনের ১০ শতাংশ কর্তন।
এসব সুবিধা বন্ধ হওয়ায় কর্মীদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, বিগত কমিশন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের জন্য একটি সার্ভিস রুল প্রণয়ন করে, তা বাস্তবায়নে স্টক এক্সচেঞ্জকে কয়েক দফায় চিঠি ও শোকজ দিলেও বোর্ড কিংবা ম্যানেজমেন্ট তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়নি। যা কমিশনের আদেশকে অমান্যের শামিল। বেতন ও সুযোগ সুবিধা কমানোর ফলে স্টক এক্সচেঞ্জ কর্মীদের জীবনযাত্রার ভার বহন করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, মহামারি করোনাকালীন সময়ে যেখানে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন সবার প্রতি মানবিক হওয়ার এবং কারও কোনো প্রাপ্য অধিকার, ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত না করতে, সেখানে স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ অন্যায়ভাবে একের পর এক সুযোগ সুবিধা কমিয়ে দিয়েছে এবং এখন মূল বেতনের ৩০ শতাংশ কমিয়ে দিচ্ছে, যা কিনা চলতি মাস থেকে কার্যকর করবে।
চিঠিতে বিএসইসির চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ কামনা করে বলা হয়েছে, অতি দ্রুত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্মীদের জন্য কমিশন কর্তৃক প্রণীত গ্রহণযোগ্য সার্ভিস রুল কার্যকর এবং একটি নির্দিষ্ট বেতন কাঠামো ভিত্তি প্রণয়ন করে স্টক এক্সচেঞ্জ কর্মীদের ওপর হওয়া অন্যায় অবিচার থেকে মুক্ত করুন।