জুমার দিনে মহানবী (সা.)-এর ১৫ নির্দেশনা

জুমার দিনে মহানবী (সা.)-এর ১৫ নির্দেশনা

সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন জুমার দিন। আল্লাহ তাআলা এই দিনকে অন্য দিনের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। মমতা ও হৃদ্যতায় মুমিন হৃদয়ে অপার্থিব এক সুখ ফুটে ওঠে জুমাবারের দৃশ্যে। বিশ্বাস ও সমর্পণ পারস্পরিক সৌন্দর্য সম্প্রীতি ও এক অদ্ভুত ভালোবাসার দীপ্তি ছড়িয়ে পড়ে ভুবনজুড়ে।


এ দিনের বিশেষ কিছু ইবাদত আছে, নবী (সা.)-এর জীবন সেসব বিষয় ফুটে ওঠে। নিম্নে সেগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো—


১. জুমাবারের ফজরের তিলাওয়াত করা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) শুক্রবার ফজরের নামাজে সুরা আস-সিজদা এবং সুরা আল-ইনসান তিলাওয়াত করতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১০৬৮)


জুমার দিন এই সুরা তিলাওয়াত করতেন। কারণ এই সুরাতে আদম (আ.)-এর সৃষ্টির কথা, পুনরুত্থানের কথা, কিয়ামতের দিন সবাইকে সমবেত হওয়া ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আর এসব হবে জুমার দিন। সে জন্য এই সুরা পাঠ করে উম্মতকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়।


২. এদিন বেশি পরিমাণে দরুদ শরিফ পড়া।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা জুমার দিন আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ কোরো। কেননা তোমাদের পাঠকৃত দরুদ আমার সামনে পেশ করা হয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৭)


৩. ইসলামের যেসব ফরজ বিধান আছে, এর মধ্যে বেশি গুরুত্বপূর্ণ জুমার নামাজ। আরাফার দিবসের পর এদিনই সবচেয়ে বেশি মানুষ একসঙ্গে সমবেত হয়। যারা জুমার নামাজকে অলসতা কিংবা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে ছেড়ে দেয়, তাদের হৃদয়ে আল্লাহ তাআলা মোহর মেরে দেন।


৪. এই দিনে বিশেষভাবে গোসল করার তাগিদ এসেছে। সালিম (রহ.) থেকে তাঁর পিতার সূত্র থেকে বর্ণিত, তিনি নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, যে ব্যক্তি জুমার নামাজে আসে সে যেন গোসল করে আসে। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ৪৯২)


৫. অন্য দিনের চেয়ে এদিন বেশি সুগন্ধি ব্যবহার করা উত্তম। আবু সাইদ খুদরি (রা.) বলেন, আমি এ মর্মে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, জুমার দিন সুগন্ধি পাওয়া গেলে তা ব্যবহার করবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৮০)


৬. মিসওয়াক করা এবং প্রত্যুষে নামাজের জন্য জাগ্রত হওয়া।


৭. ইমাম জুমার নামাজে আসার পূর্ব পর্যন্ত নামাজ, জিকির ও তিলাওয়াতে রত থাকা।


৮. খুতবার সময় সম্পূর্ণ নিশ্চুপ থাকা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন ইমামের খুতবা দেওয়ার সময় তার সঙ্গীকে বলল, ‘চুপ থাকো’ সে একটি অনর্থক কাজ করল। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ১৪০১)


৯. সুরা কাহফ পড়া। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহফ পাঠ করবে তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তীকাল জ্যোতির্ময় হবে।’ (আত-তারগিব, হাদিস : ৭৩৫)


১০. জুমার নামাজের নির্ধারিত সুরা পাঠ করা। নুমান ইবনে বশির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) দুই ঈদের নামাজে ও জুমার নামাজে ‘সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আলা-’ ও ‘হাল আতা-কা হাদিসুল গা-শিয়াহ’ সুরাদ্বয় পাঠ করতেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৯১৩)


কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে, রাসুল (সা.) সুরা জুমুআ ও সুরা আলা তিলাওয়াত করতেন।


১১. পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর কাপড় পরিধান করা। আবু জার (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন উত্তমরূপে গোসল করে, উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে, তার উৎকৃষ্ট পোশাক পরিধান করে এবং আল্লাহ তার পরিবারের জন্য যে সুগন্ধির ব্যবস্থা করেছেন, তা শরীরে লাগায়, এরপর জুমার সালাতে এসে অনর্থক আচরণ না করে এবং দুজনের মাঝে ফাঁক করে অগ্রসর না হয়, তার এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ ক্ষমা করা হয়। (সুনানে ইবনে মাজা, হাদিস : ১০৯৭)


১২. মসজিদে সুগন্ধি লাগানো। ওমর (রা.) জুমার দিন দ্বিপ্রহরে মসজিদে সুগন্ধি লাগানোর জন্য আদেশ করেছেন।


১৩. এদিন মহান রবের পক্ষে গুনাহ মাফের বারি বর্ষিত হয়। নবী (সা.) বলেছেন, কোনো মুসলিম যদি পবিত্র হয়ে জামে মসজিদের দিকে হাঁটতে থাকে, এরপর ইমাম নামাজ শেষ করা পর্যন্ত নীরব থাকে, তাহলে এ নামাজ এই জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত তার গুনাহের কাফফারা (মোচনকারী) হয়ে যাবে, যদি ধ্বংসকারী তথা কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস ২৩৭২৯)


১৪. জুমার দিন কবরের আজাব মাফ হয়ে যায়। আবু কাতাদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) জুমার দিন ছাড়া (অন্য দিন) ঠিক দুপুরে নামাজ আদায় করা অপছন্দ করতেন। তিনি বলেছেন, জুমার দিন ছাড়া (অন্যান্য দিনে) জাহান্নামের আগুনকে উত্তপ্ত করা হয়। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১০৮৩)


জুমার দিনে বা রাতে যে মারা যাবে, তার থেকে কবরের আজাব উঠিয়ে নেওয়া হবে এটা এই হাদিস থেকে প্রমাণিত। তবে কিয়ামত পর্যন্ত আজাব দেওয়া হবে না এটা নিশ্চিত নয়।


১৫. বিশেষ সময়ে দোয়া কবুল হয়। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, জুমার দিনের মধ্যে অবশ্যই এমন একটি মুহূর্ত আছে, যখন কোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে কল্যাণ প্রার্থনা করে নিশ্চয়ই তিনি তাকে তা দান করেন। তিনি বলেন, সে মুহূর্তটি অতি স্বল্প। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৮৫৮)


বেশির ভাগের মতে, সে সময়টি আসরের পর থেকে নিয়ে মাগরিবের আগ মুহূর্ত।


অর্থসংবাদ/এসএম

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

থার্টিফার্স্ট নাইট নিয়ে যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ
রাজধানীতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আরবি ভাষা কোর্স সম্পন্ন
আল্লাহর সঙ্গে যে কথা বলেছিলেন মূসা আ.
মিশরে বায়তুল মোকাররমের ইমামকে সম্মাননা প্রদান
জুমার দিন গোসল করার সঠিক সময় কোনটি?
জান্নাতিদের যে বিশেষ দানে সন্তুষ্ট করবেন আল্লাহ
নেক আমলের কারণে দুনিয়ায় যে উপকার পাবেন
রমজান শুরুর তারিখ ঘোষণা করলো আরব আমিরাত
একসঙ্গে অনেককে সালাম দিলে উত্তর দেবেন কে?
নবীজীর রওজায় বছরে একবারের বেশি যাওয়া যাবে না