প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নেয়া ওয়ালটন হাইটেক পার্কের শেয়ার আজ বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) থেকে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয়েছে।
এন গ্রুপের আওতায় লেনদেন শুরু হওয়া ওয়ালটন হাইটেক পার্কের ট্রেডিং কোড ‘waltonhil’ এবং কোম্পানি কোড ১৩২৪৮। আজ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন শুরুর দাম নির্ধারিত ছিল ২৫২ টাকা।
তবে প্রথমেই ৩৭৩ টাকা করে ২ হাজার ১১০টি শেয়ার কেনার প্রস্তাব আসে। এ দামে কেউ শেয়ার বিক্রি করতে রাজি হননি। এরপর দফায় দফায় দাম বেড়ে এক পর্যায়ে দিনের সর্বোচ্চ দাম ৩৭৮ টাকা করে ১ কোটি ১৫ লাখ ৭৩ হাজার ২টি শেয়ার কেনার প্রস্তাব আসে।
অথচ প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে কোম্পানিটি মাত্র ২৯ লাখ ২৮ হাজার ৩৪৩টি সাধারণ শেয়ার ইস্যু করেছে। অর্থাৎ বাজারে কোম্পানিটির যে শেয়ার আছে তার প্রায় তিনগুণ বেশি শেয়ার কেনার প্রস্তাব এসেছে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে।
ওয়ালটনের শেয়ার কিনতে এমন হুমড়ি খেয়ে পড়লেও আইপিও বিজয়ীরা কেউ শেয়ার বিক্রি করতে চাচ্ছেন না। ফলে ক্রেতা থাকলেও ওয়ালটনের শেয়ারের বিক্রেতা নেই।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনা অনুযায়ী, লেনদেনের প্রথমদিন কোনো কোম্পানির শেয়ার দাম ৫০ শতাংশের ওপরে বাড়তে পারবে না। এ কারণে ওয়ালটনের শেয়ার দাম আজ আর বাড়ার সুযোগ নেই। আগামীকালও কোম্পানিটির শেয়ার দাম ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারবে।
গত ২৩ জুন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশন সভায় কোম্পানিটিকে আইপিওতে শেয়ার ছাড়ার অনুমোদন দেয়া হয়।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনের ফলে বুক-বিল্ডিং পদ্ধতিতে ২৯ লাখ ২৮ হাজার ৩৪৩টি সাধারণ শেয়ার প্রাথমিক পণপ্রস্তাবের মাধ্যমে ইস্যু করছে ওয়ালটন। এর মধ্যে ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ৩৬৭টি সাধারণ শেয়ার যোগ্য বিনিয়োগকারীরা বিডিংয়ে তাদের প্রস্তাব করা দামে কিনছেন।
বাকি ১৫ লাখ ৪৮ হাজার ৯৭৬টি সাধারণ শেয়ার ২৫২ টাকা মূল্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীর (অনিবাসী বাংলাদেশিসহ) নিকট বিক্রির জন্য আইপিও আবেদন সংগ্রহ করা হয়। ৯ আগস্ট থেকে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ার পেতে আইপিওতে আবেদন করেন বিনিয়োগকারীরা।
অর্থাৎ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য নির্ধারিত ছিল ৩৯ কোটি ৩ লাখ টাকার শেয়ার। এই শেয়ার পেতে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৩৭৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকার আবেদন পড়ে। এ হিসাবে আইপিওতে আবেদন বেশি পড়ে ৯ দশমিক ৫৯ গুন। যে কারণে আইপিও বিজয়ী নির্ধারণে লটারি করতে হয়।
ব্যবসা সম্প্রসারণ, ব্যাংক ঋণ পরিশোধ এবং প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের খরচ মেটাতে পুঁজিবাজার থেকে ১০০ কোটি টাকা উত্তোলনের জন্য গত ৭ জানুয়ারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজকে বিডিংয়ে অংশ নেয়ার অনুমোদন দেয়।
এ অনুমোদনের ফলে কাট-অফ প্রাইস নির্ধারণে গত ২ মার্চ বিকেল ৫টা থেকে ৫ মার্চ বিকাল ৫টা পর্যন্ত যোগ্য বিনিয়োগকারীরা বিডিংয়ে অংশ নেন। এ সময়ের মধ্যে বিডিংয়ে অংশ নেন ২৩৩ জন। এসব বিনিয়োগকারী সর্বনিম্ন ১২ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৭৬৫ টাকা করে ওয়ালেটনের শেয়ার কেনার জন্য প্রস্তাব দেন।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক যোগ্য বিনিয়োগকারী ওয়ালটনের প্রতিটি শেয়ারের জন্য ২১০ টাকা দাম প্রস্তাব করেন। এই দামে ১৪ জন বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক বিনিয়োগকারী দাম প্রস্তাব করেন ১৫০ টাকা করে। এই দামে ১০ জন বিনিয়োগকারী কোম্পানিটির শেয়ার কেনার আগ্রহ দেখান।
তবে বিডিংয়ে বরাদ্দকৃত ৬০ কোটি ৯৬ লাখ টাকার শেয়ারের জন্য ৩১৫ টাকার ওপরে বিডিং হয়। ফলে কাট-অফ প্রাইস হিসাবে ৩১৫ টাকা নির্ধারিত হয়েছে। ৩১৫ টাকা বা তার বেশি দামে ওয়ালটনের শেয়ার কেনার আগ্রহ দেখান ৬৭ জন যোগ্য বিনিয়োগকারী।
বিএসইসি জানিয়েছে, ২০১৯ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বৎসরের আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির পুনঃমূল্যায়ন সঞ্চিতিসহ শেয়ার প্রতি নীটসম্পদ মূল্য ২৪৩ টাকা ১৬ পয়সা এবং পুনঃমূল্যায়ন সঞ্চিতি ছাড়া নীট সম্পদ মূল্য ১৩৮ টাকা ৫৩ পয়সা। আর বিগত ৫টি অর্থবছরের ভারিত গড় হারে শেয়ার প্রতি আয় ২৮ টাকা ৪২ পয়সা।