সোমবার (১৪ আগস্ট) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্টের সকল শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন। ডিএসইর নিজস্ব ভবনে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, এ দেশে সবচেয়ে বড় অভাব দেশপ্রেমের, সততার। একটা দেশের মানুষের মাঝে যদি দেশপ্রেম থাকে তাহলে নিজে থেকেই তার মাঝে সততা চলে আসবে। আজ এই স্বদেশ প্রেমের ঘাটতির কারণেই আমরা বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি।
তিনি বলেন, ছোট্ট শিশু রাসেল কি অপরাধ করেছিলো। শেখ কামাল, শেখ জামালের স্ত্রীরা কি অপরাধ করেছিলো? এই জাতির কৃতজ্ঞতা বোধের অভাব। আমরা একে অপরকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে জানিনা, একে অপরকে শ্রদ্ধা করতে জানিনা।
ড. হাফিজ বলেন, তবুও আমরা সৌভাগ্যক্রমে আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা কে পেয়েছি। বঙ্গবন্ধু আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাঝে আমি যে মিল খুঁজে পাই তা হলো দেশপ্রেম, প্রচন্ড দেশপ্রেম। বঙ্গবন্ধু আর প্রধানমন্ত্রী দুজনেরই জীবনযাপন খুবই স্বাভাবিক। তাদের দুজনেরই মনে বিন্দুমাত্র লোভ নাই।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সকল সিদ্ধান্ত দেশের মানুষ আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করছেন। দেশের মানুষ চায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আরও সামনে এগিয়ে যাক। কারণ দেশের মানুষ বিশ্বাস করেন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার যে স্বপ্ন তা বাস্তবায়ন কেবলমাত্র মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমেই বাস্তবায়ন সম্ভব।
পুঁজিবাজার সম্পর্কে তিনি বলেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে এটুকু আশ্বাস দিতে পারি আমরা, আমরা আপনাদের সেবা দিতেই এখানে বসে আছি। আমরা সবসময় আপনাদের কথা ভাবি। একদিন-দুদিনে তো আমরা আর কিছু করতে পারবো না, কিন্তু আমরা সবসময় আপনাদের জন্য আপনাদের পাশে নিয়ে কাজ করতে চাই।
তিনি আরও বলেন, আমরা এখানে এসেছি দায়িত্ব পালন করতে। এখান থেকে কি পেলাম সেটা বড় বিষয় না। অনেকগুলো কারণ আছে যার কারণে আজ পুঁজিবাজার পিছিয়ে আছে। উন্নত দেশগুলোতে পুঁজিবাজারের উপর অর্থনীতি নির্ভর করে। তাই আমি বিশ্বাস করি উন্নত দেশের মতো যে অর্থনীতির স্বপ্ন প্রধানমন্ত্রী দেখছেন সেখানে পুঁজিবাজারকে নিয়েই তিনি অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় কথা ভাবছেন।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের পর দেশের অবকাঠামো যখন ধ্বংসপ্রাপ্ত ছিলো, তখন যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশের সর্বহারা ২০ লাখ মানুষের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করার বিশাল চ্যালেঞ্জ, এর মাঝেও তিনি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা করলেন। উনার নেতৃত্বে আমরা সংবিধান পেলাম, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা পেলাম। আর দেশের আজকের যতো পরিকল্পনা সব পরিকল্পনার বীজ তখনই বুনেছিলেন বঙ্গবন্ধু।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে নমিনাল জিডিপি ২৮ শতাংশ হারে বেড়েছিলো। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর যা ৬ শতাংশে নেমে আসে। আমরা অনেক ভাগ্যবান উনার দুই কন্যা ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন। দেশে ফিরে শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করলেন, সেই থেকে আমরা আবারও অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়ন করেছি, বিদ্যুৎ খাতের চরম সংকট থেকে তিনি জাতিকে মুক্ত করলেন।
আসিফ ইব্রাহিম আরও বলেন, আমরা আগামী ১০০ বছরের ডেল্টা প্ল্যান পর্যন্ত করার চিন্তা করছি। এটা তখনই সম্ভব, যখন দেশের স্বাধীনতার পক্ষের রাজনৈতিক শক্তি দেশ শাসন করে। আমরা আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিকে তখনই সন্মান দেখাতে পারবো, যখন আমরা দূর্নীতিকে পরাস্ত করে, স্বাধীনতার চেতনাকে জাগ্রত করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো।
ডিএসইর সাবেক চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেন, আমার দেশের অনেক নেতা ছিলেন, ভবিষ্যতেও হবেন। এই নেতাদের মাঝে বঙ্গবন্ধুকে আলাদাভাবে বঙ্গবন্ধু করার কারণ উনার আগে আর কোন নেতা একা পুরো বাঙ্গালী কে কোন একটি বিষয় নিয়ে ঐক্যবদ্ধ করতে পারেন নাই। বঙ্গবন্ধুর এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই আজ আমরা স্বাধীন হতে পেরেছি।
সিএমএসএফ চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধুর দাবায়ে রাখতে পারবা না আর অঙ্গুলির যে নির্দেশ সেই অনুপ্রেরণায় আমরা। আমাদের প্রত্যেকের হৃদয়েই বঙ্গবন্ধুর জন্য একটি স্থান রয়েছে। বিদেশে আমি যখনই গিয়েছি আমি দেখেছি বাংলাদেশ শুনলেই সবাই বলতো শেখ মুজিবুর রহমানের কথা। বাংলাদেশ মানেই যেন শেখ মুজিবুর রহমান।
অর্থসূচক সম্পাদক এবং ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু এবং ১৫ আগস্ট শহীদ সকলের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, ১৯৭৫ এ যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে তারা ভেবেছিলেন ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার মধ্য দিয়েই তার স্বপ্নের অবসান ঘটবে, তার আশার অবসান ঘটবে। কিন্তু আসলে সেটি ঘটেনি। বঙ্গবন্ধু নেই। কিন্তু তাঁর যে স্বপ্ন, তার যে আদর্শ, তার যে চেতনা তা সঞ্চারিত হয়েছে বাঙালি জাতীর মধ্যেই। যার ফলেই ১৯৭১ এর যুদ্ধ বিদ্ধস্ত এই দেশ আর সমৃদ্ধির দারপ্রান্তে।
তিনি বলেন, যদি ১৯৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে দেশের অগ্রযাত্রাকে লাইনচ্যুত করা না হতো তবে দেশ আজ বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে আরও এগিয়ে যেত।
ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) প্রেসিডেন্ট রেফায়েত উল্লাহ মৃধা বলেন, দেশের অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে ভিশনারি নেতৃত্ব এবং ১৯৭১ এ অর্জিত স্বাধীনতার জন্য। জাপানিজরা গবেষণা করে দেখেছে বাংলাদেশ ভবিষ্যতের বিজনেসের হাব। তারা গবেষণা করে দেখেছেন বাংলাদেশ সামনে অনেক এগিয়ে যাবে। জাপানিজরা ইতিমধ্যে কক্সবাজার জোনে অনেক ধরণের বিনিয়োগ করেছেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান মজুমদার। এছাড়াও আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ রশীদ লালী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, ডিবিএ প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি রোজারিও প্রমূখ।