মৃত ব্যক্তি কিভাবে ঋণ নিয়েছেন তা খতিয়ে দেখতে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত রূপালী ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের বিষয়ে তদন্ত কমিটি করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিজনেস নিউজ পোর্টাল অর্থসংবাদে প্রকাশিত একটি সংবাদের সূত্র ধরে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিএসইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত রূপালী ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের মৃত পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিন খানের নামে ব্যাংক বহির্ভূত একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়া হয়। নাজিম উদ্দিন খানের মৃত্যুর তিন বছর পর তাঁর শেয়ার বন্ধক রেখে (Pledge) এ ঋণ নেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে গত ২০ মে অর্থসংবাদ ‘মৃত ব্যক্তিকে পরিচালক দেখিয়ে নেওয়া হলো ঋণ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করে। এর প্রেক্ষিতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা রূপালী ইন্স্যুরেন্স এবং ডিএসইর সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠান ইবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
জানা গেছে, বিএসইসির যুগ্ম-পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ গোলাম মাওলা, উপপরিচালক মো. নানু ভূঞা ও সহকারী পরিচালক মো. মাহমুদুর রহমানকে তদন্ত কমিটির সদস্য করা হয়েছে। আর সংস্থাটির ইন্সপেকশন, ইনকোয়ারি ও ইনভেস্টিগেশন সেকশনের অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফারুক হোসেন তদন্ত কার্যক্রম দেখভাল করবেন।
বিএসইসির পরিচালক মো. আবুল হাসান সাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়, গত ২০ মে অনলাইন নিউজ পোর্টাল অর্থসংবাদে “মৃত ব্যক্তিকে বিমা কোম্পানির পরিচালক দেখিয়ে নেয়া হলো ঋণ ” মর্মে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সূত্রানুযায়ী ১৮ মে, ২০১২ তারিখে মৃত্যুবরণকৃত মো. নাজিম উদ্দিন খান কে ১১ (এগারো) বছর ধরে রূপালী ইনস্যুরেন্স কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদনে কোম্পানিটির একজন উদ্যোক্তা পরিচালক হিসাবে উপস্থাপন এবং তার বিও হিসাবে সংরক্ষিত রূপালী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার বন্ধক রেখে উত্তরা ফাইনান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে ঋণ গ্রহণের বিষয়ে অনুসন্ধান করা প্রয়োজন।
অফিস আদেশে তদন্ত কমিটিকে চারটি বিষয় খতিয়ে দেখতে বলেছে বিএসইসি। জানা গেছে- মৃত নাজিম উদ্দিন খানের শেয়ার বন্ধক রেখে উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে সার্বিক অনিয়ম অনুসন্ধান করবে তদন্ত কমিটি। মৃত্যুর পরও নাজিম উদ্দিন খানকে রূপালী ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক দেখানোর পেছনে বিমা কোম্পানিটির যেসব কর্মকর্তা জড়িত তাদের চিহ্নিত করতে তদন্ত কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নাজিম উদ্দিনের শেয়ার বন্ধক রাখার ক্ষেত্রে ইবিএল সিকিউরিটিজের জড়িত কর্মকর্তাদেরও চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। এছাড়াও ঋণ অনিয়মে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়গুলোও তদন্ত কমিটি খতিয়ে দেখবে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ এর ধারা ১৭ক এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে বিএসইসির আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১৮ মে ধানমন্ডির কম্পোর্ট নার্সিং হোমে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের তৎকালীন পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিন খান। তবে তাঁর মৃত্যুর ১১ বছর পরও বার্ষিক প্রতিবেদনে তাকে কোম্পানিটির পরিচালক হিসেবে দেখিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়াও ২০১৫ সালে মৃত পরিচালকের শেয়ার বন্ধক রেখে উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়। এ ঋণ রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যানের স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ফজলুতুন নেছা গ্রহণ করেন বলে অর্থসংবাদের অনুসন্ধানে উঠে আসে।