এশিয়া কাপ কী?
এশিয়া কাপ হলো পুরুষদের একদিনের আন্তর্জাতিক ও টি২০আই ক্রিকেট প্রতিযোগিতা। এটি চালু হয় ১৯৮৪ সালে যখন এশীয় দেশগুলোর মধ্যে সুনাম প্রচার করার জন্য এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করা হয়। এটি প্রকৃতপক্ষে প্রতি দুই বছর পর পর অনুষ্ঠিত হয়।
এশিয়া কাপ কোন ফরম্যাটে হয়?
গতবছরও এশিয়া কাপে হয়েছিল; তবে মনে করে দেখতে পারেন, সেবার এশিয়া কাপ হয়েছিল টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে, সামনেও ছিল ২০ ওভারের বিশ্বকাপ। প্রতিবারই সামনের আইসিসি টুর্নামেন্ট বিবেচনায় রেখে বদলে যায় এশিয়া কাপের ফরম্যাট। ৫ অক্টোবরের ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে এবার সেটি হবে এই ফরম্যাটে।
এশিয়া কাপ কবে থেকে শুরু হয়েছে?
এশিয়া কাপ শুরু হয়েছিল ১৯৮৪ সালে। এরপর এখন অবধি ১৫বার হয়েছে এই টুর্নামেন্ট। পাকিস্তানকে হারিয়ে ২০২২ সালের সর্বশেষ আসরের চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল শ্রীলঙ্কা। সেটি ছিল তাদের ষষ্ঠ শিরোপা, সবচেয়ে বেশি সাতবারের চ্যাম্পিয়ন ভারত। পাকিস্তান দুবার এশিয়া কাপ জিতেছে। বাংলাদেশ দুবার ফাইনালে খেললেও কোনোবারই শিরোপা ছুঁয়ে দেখতে পারেনি। সর্বশেষ আসরে তারা বাদ পড়েছিল প্রথম রাউন্ড থেকে।
এশিয়া কাপে কতগুলো দল খেলবে?
এশিয়া কাপে ছয়টি দল খেলবে। আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা- এই দলগুলো টেস্ট খেলুড়ে। এর বাইরে আছে নেপাল। আপনি নিয়মিত ক্রিকেটের খোঁজ না রাখলে একটু দ্বিধাতেই পড়ে যেতে পারেন। তবে হ্যাঁ, নামটা নেপালই। এবারই তারা প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপ খেলবে।
আরও পড়ুন: এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়া সম্ভব
আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বেশ সাড়া জাগিয়েছে নেপাল। তারা এবার এশিয়া কাপ খেলছে বাছাই পর্বের বাধা টপকেই। এসিসি মেনস প্রিমিয়ার কাপ নামের ওই টুর্নামেন্টটি নেপালেই এপ্রিল ও মে মাসে হয়েছিল। ফাইনালে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ৭ উইকেটে হারিয়েছিল তারা। ২০ বছর বয়সী রোহিত পাওডেলের নেতৃত্বে খেলা নেপাল আইসিসি ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের ১৫ নম্বর দল।
এশিয়া কাপ কীভাবে হবে?
ছয় দল ভাগ হবে দুটি গ্রুপে। গ্রুপ ‘এ’ তে থাকবে ভারত, নেপাল ও পাকিস্তান। গ্রুপ ‘বি’তে বাংলাদেশের সঙ্গী আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। প্রতিটি গ্রুপ থেকে সেরা দুটি দল উঠে হবে সুপার ফোর। এরপর চার দলের সবাই একে-অপরের মুখোমুখি হবে। সেরা দুই দল যাবে ফাইনালে।
এশিয়া কাপ এবারের আসর কবে?
৩০ আগস্ট। এদিন মুলতানে পাকিস্তানের বিপক্ষে লড়বে নেপাল। বাংলাদেশের ম্যাচ এর পরের দিন পাল্লেকেলেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। দ্বিতীয় ম্যাচ ৩ সেপ্টেম্বর, লাহোরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। বাংলাদেশ যদি এশিয়া কাপের সুপার ফোরে যায়- সেক্ষেত্রে পরের তিনটি ম্যাচ হবে ৬, ৯ ও ১৫ সেপ্টেম্বর। ফাইনাল হবে সেপ্টেম্বরের ১৭ তারিখ। শিরোপা নির্ধারণীসহ মোট ১৩টি ম্যাচ হবে এবার।
এশিয়া কাপ কখন, কোথায় দেখবেন?
১৩ ম্যাচের সবগুলোই বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে তিনটায় শুরু হবে। টি-স্পোর্টস ও গাজী টিভিতে দেখা যাবে খেলা, স্টার স্পোর্টস নেটওয়ার্কেও চাইলে দেখতে পারবেন। বাংলাদেশে টফি অ্যাপেও খেলা দেখা যাবে।
এশিয়া কাপের আয়োজক কে?
এটি নিয়ে অনেক জলঘোলা হয়েছে। এমনিতে স্বাগতিক দেশ পাকিস্তানই, কিন্তু রাজনৈতিক বৈরিতার কারণে সেখানে খেলতে যেতে কিছুতেই রাজি হয়নি ভারত। শেষ অবধি ‘হাইব্রিড মডেল’-এ রাজি হয়েছে সবাই। অর্থাৎ পাকিস্তানে যেন ভারতের কোনো ম্যাচ না পড়ে, সেটি নিশ্চিত করেই বানানো হয়েছে সূচি।
এজন্য আগে থেকেই সুপার ফোরে উঠলে পাকিস্তানকে ‘এ-১’ ও ভারতকে ‘এ-২’ ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ ‘বি-২’ আর শ্রীলঙ্কা হয়েছে ‘বি-১’। এমনিতে পাকিস্তানের দুটি শহর লাহোর ও মুলতানে খেলা হবে চারটি ম্যাচ। ফাইনালসহ বাকি নয় ম্যাচ হবে শ্রীলঙ্কার কলম্বো ও পাল্লেকেলেতে।
এশিয়া কাপের সেরা ম্যাচ কোনটি?
ভারত-পাকিস্তান তো অবশ্যই। দু দেশের দ্বিপক্ষীয় সিরিজ এখন আর না হওয়ায় আইসিসি ও এসিসির টুর্নামেগুলোই ভরসা তাদের মুখোমুখি লড়াই দেখার। এর বাইরে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের ম্যাচও বেশ উত্তাপ ছড়িয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রীলঙ্কা ও ভারতের লড়াইও সাম্প্রতিক সময়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা ও রোমাঞ্চের জন্ম দিয়েছে।
আরও পড়ুন: আবহাওয়ার খবর জানবেন যেভাবে
এশিয়া কাপের আবহাওয়ার খবর
পূর্ভাবাস বলছে, একটু আদ্রতা থাকবে শ্রীলঙ্কায়। এখানে বৃষ্টিও কিছুটা ঝামেলা বাধাতে পারে। যদিও সেটি বড় কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। মুলতান ও লাহোরে বৃষ্টির কোনো পূর্ভাবাস নেই।
এশিয়া কাপে বাংলাদেশের সম্ভাবনা কেমন?
প্রশ্নটা কঠিন। এশিয়া কাপ মানেই বাংলাদেশের জন্য হৃদয় ভাঙার গল্প। ২০১২ সালের সেই কান্না হয়তো আপনার স্মৃতিতেও তরতাজা। তবে এবার বাংলাদেশ যাচ্ছে বেশ বড় স্বপ্ন নিয়ে। গত কয়েক বছর ওয়ানডেতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স, সুপার লিগের তৃতীয় সেরা দল হওয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাদের মাটিতে, ভারতকে ঘরের মাঠে সিরিজ হারানো; এসব থাকছে প্রেরণা হিসেবে।
তবে টুর্নামেন্টের বাড়তি একটা চাপ থাকে, সেটি সামলে ওঠাই বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ইনজুরি, অসুস্থতাও বড় দুশ্চিন্তার নাম। ‘সেরা ক্রিকেট’ খেলার তাড়না ও ‘ম্যাচ বাই ম্যাচ’ আগানোর কথা বলেছেন ক্রিকেটাররা। তাসকিন আহমেদ বলছেন, ‘এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। ’
অর্থসংবাদ/এমআই