গতকাল মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ইউএনজিএর ৭৮তম অধিবেশনের সাইড লাইনে এ আয়োজন করা হয়। খবর বাসসের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বহুপাক্ষিক অর্থায়ন সংস্থাগুলোসহ আমাদের উন্নয়ন অংশীদারদের প্রতি উন্নয়নশীল বিশ্বে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্যসেবায় তাদের সহায়তার হাত প্রসারিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।’ শেখ হাসিনা বলেন, এটি এখন আমাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ এই মডেলটিকে বাকি উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য একটি সর্বোত্তম অনুশীলন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এটিকে ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় জাতিসংঘের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে তিনি যখন প্রথম বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন, তখন ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ সুবিধার উন্নয়নে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো ছিল তাদের চালু করা উদ্ভাবনী ধারণাগুলোর মধ্যে একটি। তিনি বলেন, এখন প্রায় ১৪ হাজার ৫০০ কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে, যা স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা এবং পুষ্টি সম্পর্কিত পরিষেবাগুলোর জন্য ওয়ান স্টপ সেন্টার হিসেবে কাজ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল, এগুলো এখন সারা দেশে কাজ করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আশা করি যে, এ সাইড ইভেন্ট স্বাস্থ্য এবং আমাদের সব জনগণ ও কমিউনিটির কল্যাণে অভিন্ন অঙ্গীকারের আরেকটি নিদর্শন হয়ে থাকবে।’ অনুষ্ঠানে জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া এবং সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা কভারেজ অর্জনকারী বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলের ভূয়সী প্রশংসা করেন সিন্ট মার্টেনের প্রধানমন্ত্রী সিলভেরিয়া এলফ্রিডা জ্যাকবস। সবার কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার উপায়গুলো সহজ করতে কমিউনিটি ক্লিনিকের উদ্যোগেরও প্রশংসা করেন মালদ্বীপের স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী সাফিয়া মোহাম্মদ সাঈদ।
জাতিসংঘে নিযুক্ত স্থায়ী প্রতিনিধি মুহাম্মদ আবদুল মুহিতের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) বিষয়ভিত্তিক রাষ্ট্রদূত সায়মা ওয়াজেদ। আরও ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সিনিয়র পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার এবং যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান।
এ সময় তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিকের ভূমিকা নিয়ে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারিও দেখানো হয়। এ ছাড়া এদিন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রানিল বিক্রমাসিংহ, ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেট ফ্রেডেরিকসেন, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসির সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্বাস্থ্য খাতের প্রশংসায় ডব্লিউএইচও প্রধান: এদিকে স্থানীয় সময় সোমবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান তেদরোস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস। এ সময় বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে সরকারের পদক্ষেপের প্রশংসা করেন তিনি। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা, ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের থিম্যাটিক অ্যাম্বাসাডর এবং অটিজম অ্যান্ড নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন, অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ছিলেন।
চলমান জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৈনন্দিন কার্যক্রমের বিষয়ে নিউইয়র্কে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ তথ্য জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি উদ্ভাবন। সেখান থেকে মানুষ বিনামূল্যে ৩০ ধরনেরও বেশি ওষুধ পাচ্ছেন। কমিউনিটি ক্লিনিক বাংলাদেশে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার দ্রুত কমাতে সাহায্য করেছে। সুতরাং এতে মানুষের গড় আয়ু অনেক বেড়েছে। এমন সাফল্যের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বাংলাদেশ বিশ্বের অন্য দেশের সঙ্গে বিনিময় করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন গ্যাব্রিয়েসুস।
অর্থসংবাদ/এমআই