চলতি বছর হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি এক লাখ ছাড়িয়েছিল গত ২১ আগস্ট। সেদিন নতুন করে ২ হাজার ১৯৭ জন ভর্তি হওয়ায় মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ ২ হাজার ১৯১। আর জানুয়ারি থেকে তখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছিল ৪৮৫ জনের। এর মধ্যে রাজধানীর ছিলেন ৩৬৩ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গুতে রাজধানীর হাসপাতালগুলোয় ভর্তি হয়েছেন ৫৮৪ জন। আর রাজধানীর বাইরে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ২০৯ জন। একই সময়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে চারজন ঢাকার। এ নিয়ে চলতি বছর নয় মাস না পেরোতেই ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৭৫। এর মধ্যে ৬৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে। ঢাকার বাইরে মারা গেছেন ৩৪৪ জন। ২০০০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এ ভাইরাসে মোট মৃতের সংখ্যা ছিল ৮৫৩।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত মোট ৯ হাজার ৫২৬ জন চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের মধ্যে ৩ হাজার ২৮৩ ঢাকায় এবং ৬ হাজার ২৪৩ জন ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসা নিচ্ছে।
গতকাল পর্যন্ত ভর্তি রোগীর মধ্যে ঢাকায় ৮২ হাজার ৪৭১ এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৫১০ জন। হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ১ লাখ ৯০ হাজার ৪৮০ জন। ঢাকায় ৭৮ হাজার ৫৫৭ এবং ঢাকার বাইরে ১ লাখ ১১ হাজার ৯২৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে।
দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা মূলত বাড়তে শুরু করে গত জুলাইয়ে। চলতি সেপ্টেম্বরে ৭৭ হাজার ১৭৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। জানুয়ারিতে ভর্তি হয়েছিল ৫৬৬ জন। ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬, মার্চে ১১১, এপ্রিলে ১৪৩, মে মাসে ১ হাজার ৩৬, জুনে ৫ হাজার ৯৫৬, জুলাইয়ে ৪৩ হাজার ৮৫৪ এবং আগস্টে ৭১ হাজার ৯৭৬ জন ভর্তি হন। মৃতদের মধ্যে জানুয়ারিতে ৬, ফেব্রুয়ারিতে ৩, এপ্রিল ও মে মাসে দুজন করে চারজন, জুনে ৩৪, জুলাইয়ে ২০৪, আগস্টে ৩৪২ এবং সেপ্টেম্বরের ২৮ দিনে মারা গেছে ৩৮২ ডেঙ্গু রোগী। মার্চে কোনো রোগী মারা যায়নি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশে সরকারিভাবে ডেঙ্গুকে রোগ হিসেবে দেখা হয়। সে বছর আক্রান্ত সাড়ে পাঁচ হাজার ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হয়। তাদের মধ্যে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়। ২০০১ সালে আক্রান্ত আড়াই হাজার জনের মধ্যে ৪৪ জন মারা যায়। ২০০২ সালে ছয় হাজার রোগীর মধ্যে ৫৮ জন, ২০০৩ সালে ৪৮৬ জনের মধ্যে ১০, ২০০৪ সালে চার হাজারের মধ্যে ১৩, ২০০৫ সালে এক হাজারের মধ্যে চার, ২০০৬ সালে আক্রান্ত দুই হাজারের মধ্যে ১১ জন মারা যান।
২০০৭-১০ পর্যন্ত চার বছরে আড়াই হাজার ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলেও কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। ২০১১ সালে দেড় হাজারের মধ্যে ছয়জনের মৃত্যু হয়। ২০১২ সালে ৬৭১ জনের মধ্যে এক, ২০১৩ সালে প্রায় দুই হাজারের মধ্যে দুজন মারা যায়। ২০১৪ সালে ৩৭৫ জন আক্রান্ত হলেও বছরটিতে কেউ মারা যায়নি। এরপর প্রতি বছরই রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ২০১৫ সালে তিন হাজারের মধ্যে ছয়, ২০১৬ সালে ছয় হাজার জনের মধ্যে ১৪, ২০১৭ সালে তিন হাজারের মধ্যে আট, ২০১৮ সালে ১০ হাজার ১৪৮ জনের মধ্যে ২৬, ২০১৯ সালে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জনের মধ্যে ১৭৯ জন মারা যায়। ২০২০ সালে দেড় হাজার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়, মারা গেছে চারজন। আর ২০২১ সালে আক্রান্ত হয় সাড়ে ২৮ হাজার, মারা যায় ১০৫ জন। আর ২০২২ সালে ৬১ হাজার রোগীর মধ্যে ২৮১ জনের মৃত্যু হয়।
বিশ্বে ১ হাজার ৭৮০ সালে প্রথম ডেঙ্গু মহামারী দেখা দেয়। এরপর ১৯৫০ সালে থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনে এ সংক্রমণ ছড়ায়। পরে ১৯৬৩ সালে কলকাতা ও ১৯৬৪ সালে ঢাকায় সংক্রমণ ঘটায় ডেঙ্গু। সে সময় ডেঙ্গুকে ঢাকা ‘ফিভার’ নামে অভিহিত করা হয়েছিল।
অর্থসংবাদ/এমআই