এদিকে ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথে বাণিজ্যিক ট্রেন পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সংস্থাটির অপারেশন শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঢাকা-খুলনা রুটের সুন্দরবন এক্সপ্রেস, ঢাকা-যশোর রুটের বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি পদ্মা সেতু হয়ে চালানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বর্তমানে এগুলো ঢাকা থেকে টঙ্গী, জয়দেবপুর, বঙ্গবন্ধু সেতু, ঈশ্বরদী, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ হয়ে চলাচল করছে। ট্রেন দুটির নতুন রুট হবে কমলাপুর থেকে গেণ্ডারিয়া-কেরানীগঞ্জ-সিরাজদীখান-শ্রীনগর-মাওয়া-পদ্মা সেতু-ভাঙ্গা-রাজবাড়ী হয়ে খুলনা এবং যশোর। একইভাবে রাজশাহী থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত চলাচল করা মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনটি পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা পর্যন্ত চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে রেল। যদিও কবে নাগাদ বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হবে তা এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারেননি রেলওয়ের কর্মকর্তারা। কেবল ইঙ্গিত দিয়েছেন, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে অথবা নভেম্বরের শুরুর দিকে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হতে পারে।
ট্রেনে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত যাতায়াতে শোভন চেয়ারে ৩৫০ টাকা ও এসি চেয়ারে ৬৬৭ টাকা, এসি সিটে ৮০৫ টাকা ও এসি বার্থের জন্য ১ হাজার ২০২ টাকা ভাড়া নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে রেলওয়ে। এ পথের দূরত্ব ৭৭ কিলোমিটার। অন্যদিকে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু পার হয়ে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পদ্মা স্টেশনে যেতে শোভন চেয়ারে ৩৩০ টাকা, এসি চেয়ারে ৬৩৩ টাকা, এসি সিটে ৭৫৯ ও এসি বার্থ আসনের জন্য ভাড়া নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে ১ হাজার ১৩৯ টাকা।
তিন অংশে ভাগ করে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রথম অংশ ঢাকা-মাওয়ার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৮ কিলোমিটার। এ অংশে কেরানীগঞ্জে একটি নতুন স্টেশন তৈরি হচ্ছে। দ্বিতীয় অংশ মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৩ কিলোমিটার। এ অংশে নতুন স্টেশন ভবন রয়েছে পাঁচটি, যার দুটি আজ উদ্বোধন হচ্ছে।
প্রকল্পের শেষ অংশ ভাঙ্গা থেকে যশোর। এ অংশের দৈর্ঘ্য প্রায় ৮৩ কিলোমিটার। স্টেশনের সংখ্যা ১৪টি। প্রকল্পের মেয়াদ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত পুরো রেলপথটি চালুর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। মাঠপর্যায়ে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৩ মে একনেকে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা। সরকারের অগ্রাধিকার তালিকাভুকক্ত (ফাস্ট ট্র্যাক) প্রকল্পটির বর্তমানে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা।
নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর সংযোগ রেলপথটিতে কী পরিমাণ যাত্রী ও মালামাল পরিবহন হতে পারে, তার একটি বিশ্লেষণ এরই মধ্যে তৈরি করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি)। স্বল্পমেয়াদি বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ২০৩০ সাল নাগাদ রেলপথটির ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে প্রতিদিন ১৩ জোড়া ট্রেন চলবে। একইভাবে ভাঙ্গা-কাশিয়ানী অংশে প্রতিদিন সাত জোড়া ও কাশিয়ানী-যশোর অংশে চলবে পাঁচ জোড়া ট্রেন। এ সময়ের মধ্যে ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে বছরে ৪০ লাখ, ভাঙ্গা-কাশিয়ানী অংশে ১৭ লাখ ও কাশিয়ানী-যশোর অংশে সাড়ে ১৩ লাখ যাত্রী পরিবহন করা হবে। ‘ওয়ান-ডিরেকশন’ বা একমুখী চলাচলের ওপর ভিত্তি করে এ প্রাক্কলন তৈরি করেছে সিআরইসি।
অর্থসংবাদ/এমআই