সূত্র মতে, গত কয়েক বছর ধরেই ফু-ওয়াং ফুড লিমিটেড কর ফাঁকি দিচ্ছে। একাধিকবার কর পরিশোধের নির্দেশনা দেয়া হলেও সরকারের সেই আদেশ মানছে না কোম্পানিটি। এমন অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির বকেয়া করের সমপরিমাণ অর্থ জব্দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৬-১৭ করবর্ষ থেকে ২০২১-২২ পর্যন্ত মোট ৬ বছর ফু-ওয়াং ফুড কর পরিশোধ করেনি। এই ছয় বছরে কোম্পানিটির বকেয়া করের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৮২ লাখ ৭৬ হাজার ৩৮৭ টাকা। এর মধ্যে ২০২১৬-১৭ করবর্ষে ৭৪ লাখ ৪৩ হাজার ১৮৪ টাকা, ২০১৭-১৮ করবর্ষে ১১ লাখ ৬৪ হাজার ৪০২ টাকা, ২০১৮-১৯ করবর্ষে ৪৬ লাখ ৫৪ হাজার ২৮২ টাকা, ২০১৯-২০ করবর্ষে ৬৫ লাখ ৭১ হাজার ৮২০ টাকা, ২০২০-২১ করবর্ষে সুদসহ ১ কোটি ৭১ লাখ ৪৭ হাজার ৯৩ টাকা এবং ২০২১-২২ করবর্ষে সুদসহ ১ কোটি ১২ লাখ ৯৫ হাজার ৬০৬ টাকা বকেয়া রয়েছে কোম্পানিটির।
সূত্র জনায়,ফু-ওয়াং ফুডের পরিচালিত ব্যাংক হিসাব থেকে বকেয়া করের সমপরিমাণ অর্থ কর কার্যালয়ে জমা দিতে বলা হয়েছে। গত ৯ অক্টোবর অঞ্চল-১৫’র উপ কর কমিশনার মো. রুহুল আমিন এ আদেশ দেন। নির্দেশনা সংক্রান্ত একটি চিঠি বেসরকারি ওই ব্যাংকের বনানী শাখা প্রধান বরাবর পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, যেহেতু করদাতা কোম্পানী ফু-ওয়াং ফুড লিমিটেড এর আয়কর বাবদ মোট ৪,৮২,৭৬,৩৮৭/- (চার কোটি বিরাশি লক্ষ ছিয়াত্তর হাজার তিনশত সাতাশি টাকা মাত্র) এখনো পরিশোধ করা হয় নাই, সেহেতু আমি আয়কর আইন, ২০২৩ এর ২২১ ধারা বলে দাবি করিতেছি যে, আপনি অবিলম্বে উক্ত খেলাপ কারীকে আপনার প্রদেয় অর্থ হইতে অথবা এখন কোন অর্থ আপনার প্রদেয় না হইয়া থাকিলে অর্থ প্রদেয় হওয়া মাত্র অথবা খেলাপকারী অর্থ আপনার অধিকারে আসিবামাত্র উক্ত অংকের টাকা আমাকে প্রদান করিবেন। যদি উক্ত খেলাপকারীকে আপনার প্রদেয়, অথবা প্রদেয় হইতে পারে এমন অথবা কম হয় তাহা হইলে আপনি উক্ত সমুদয় অর্থ আমাকে প্রদান করিবেন।
এতে আরও বলা হয়, এই নোটিশ প্রতিপালনার্থে কোন অর্থ প্রদান উক্ত খেলাপকারী করদাতার কর্তৃত্বাধীনে করা হইয়াছে বলিয়া গণ্য করা হইবে এবং টাকা প্রাপ্তির পর আমার দেওয়া রশিদে যে পরিমান টাকার উল্লেখ থাকিবে তাহার নিকট আপনার দায় সেই পরিমানে যথাযথভাবে শোধ হইয়া যাইবে। যদি আমার এই নোটিশ প্রাপ্তির পরেও আপনি উক্ত খেলাপকারীকে আপনার কোন দায় পরিশোধ করেন তাহা হইলে আপনার পরিশোধকৃত দায়ের পরিমান কারীর আয়করণসুদ বাবদ দায়ের পরিমান, এই দুইয়ের মধ্যে যেটি কম সেই পরিমানে আপনি আমার নিকট ব্যক্তিগতভাবে দায়বদ্ধ হইবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফু-ওয়াং ফুডের পরিচালক মিয়া মামুন অর্থসংবাদকে বলেন, আগের মালিকের ট্যাক্স ও ভ্যাট নিয়ে ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকার সমস্যা ছিল। তাদের এতো টাকা তো আমি দিতে পারবো না- এটা এনবিআরকে বলেছি। তবে এনবিআর আমার কথা উইথড্র করেছে। আগের মালিক যা করে গেছে সেটি নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা করবো। তারা ট্যাক্স ও ভ্যাট দেয়নি, এখন আমরা মামলা করে কিছু কমানোর চেষ্টা করবো।
উল্লেখ্য, ফু-ওয়াং ফুডসহ দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত দুই কোম্পানির মালিকানায় এসেছে কথিত জাপানি প্রতিষ্ঠান মিনোরি বাংলাদেশ। এই প্রতিষ্ঠানটি দুই কোম্পানির মালিকানায় যুক্ত হওয়ার পর থেকেই কোম্পানিগুলোর শেয়ার নিয়ে কারসাজির অভিযোগ উঠে। মূলত বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে মিয়া মামুন সিন্ডিকেট দুই কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধিতে কারসাজি করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যেই এনবিআর ফু-ওয়াং ফুডের অর্থ জব্দের নির্দেশ দিয়েছে। এছাড়াও আরেক কোম্পানি এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজের সব সম্পদ নিলামে বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ব বেসিক ব্যাংক লিমিটেড।
অর্থসংবাদ/ওয়ালিদ