বাংলাদেশের মানুষকে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চিকিৎসা গবেষণাতেও বিএসএমএমইউ নেতৃত্ব দেবে। কেননা নিজস্ব গবেষণা ব্যতীত পরীক্ষিত, গ্রহণযোগ্য ও দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা দুরূহ ব্যাপার।
শনিবার (২৮ অক্টোবর) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা দিবস উপলক্ষ্যে দেওয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। ৫ম বারের মত ‘গবেষণা দিবস’ উদযাপন করতে যাচ্ছে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়টি। দিবসটি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়টির সকল শিক্ষক, চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের মৌলিক অবকাঠামো পুনর্গঠনের পাশাপাশি দেশের মানুষের সুস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা গবেষণাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। যার মূল লক্ষ্য ছিল দেশের মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গবেষণার বুনিয়াদ সৃষ্টি করা।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পাশাপাশি গবেষণা ও শিক্ষা কর্মকান্ডকে অগ্রাধিকার দিয়ে নানা কর্মসূচি গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করে চলছে। ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে গবেষণার জন্য ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়, যা পরবর্তীতে ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। তাছাড়া, চলতি অর্থবছরেও তরুণদের গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
সরকার দেশের সকল মানুষের জন্য গণমুখী স্বাস্থ্যব্যবস্থা চালু করেছে। হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি, সাধারণ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা এবং বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা বহুগুণে বৃদ্ধি করা হয়েছে। তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা বিস্তৃত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করে চিকিৎসা শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপক সম্প্রসারণ করা হয়েছে। সরকার প্রতিটি বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। এরমধ্যেই রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনায় মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য হলো দেশে রোগীরা যাতে স্বল্পমূল্যে সর্বাধুনিক চিকিৎসাসেবা পায় এবং চিকিৎসার জন্য রোগীদেরকে বিদেশে যেতে না হয়। এতে চিকিৎসাসেবা খাতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা বেগবান করার জন্য ইমেরিটাস অধ্যাপক নিয়োগ করা হয়েছে। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে গবেষণাকে গুরুত্ব দিয়ে গবেষণা খাতে ৩২ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আবাসিক চিকিৎসকদের গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করতে ‘উপাচার্য গবেষণা পুরস্কার’ সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদন করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, গত বছর জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ২৪ জন গবেষক, শিক্ষক ও চিকিৎসককে পিএইচডি কোর্সে এনরোলমেন্ট করা হয়। এ বছরও ৩০ জন গবেষক, শিক্ষক ও চিকিৎসককে পিএইচডি কোর্সে এনরোলমেন্ট করা হয়েছে। তাছাড়া, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও চিকিৎসকদের গবেষণার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা পরিচালনা এবং জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য এআইআইএমএস, ব্রাউন ও শিকাগো এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ‘গবেষণা দিবস ২০২৩’ উদযাপন খুবই সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত গবেষক, চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট সকলে তাদের শ্রম, মেধা ও উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগিয়ে চিকিৎসা ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক মানদন্ডে উন্নীত করতে সচেষ্ট হবেন। সমন্বিত উন্নয়নের অগ্রযাত্রার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম জাতি গঠনে সমর্থ হবে। এসময় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ‘গবেষণা দিবস-২০২৩’ উপলক্ষে আয়োজিত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
অর্থসংবাদ/এসএম
