বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আগামী এক বছরের মধ্যে আমরা পুঁজিবাজারে দৃশ্যমান পরিবর্তন দেওয়ার চেষ্টা করব। আর দুই বছরের মধ্যে মডার্ন ক্যাপিটাল মার্কেটের ছায়া দেখতে পাবেন। তিন বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ আধুনিক পুঁজিবাজার হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। বাজারে ত্রুটি থাকলে বিএসইসি সেটা ধরে সংশোধনের কাজ করতে পারে। বাজারে বিভিন্ন সেক্টরের শেয়ারের দাম বৃদ্ধি পাওয়া ও কমার বিষয় নিয়ে অনেকেই আমাদের ফোন করেন, ফেসবুকে লেখেন, ই-মেইল করেন, চিঠি লেখেন। জানতে চান, এই সেক্টর কেন বাড়ছে, ওই সেক্টর কেন কমছে। সত্যিকার অর্থে আমরা যদি কেনা-বেচার দিকে নজর দিতে যাই তাহলে বাজারে বিনিয়োগ করে শান্তি পাওয়া যাবে না।
ডিএসই’র চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান, শাকিল রিজভী, বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ রেজাউল করিম, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট শরীফ আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিসে্টড কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট রিয়াদ মাহমুদ এবং মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট নিহাত কবির।
অনুষ্ঠান সঞ্চালক করেন ডিএসই’র প্রধান পরিচালক কর্মকর্তা এম. সাইফুর রহমান মজুমদার। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিএসই’র প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আব্দুল মতিন পাটোয়ারী।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, বিনিয়োগকারীরা আমাদের পুঁজিবাজারের প্রাণ। তারা না থাকলে পুঁজি আসত না। তাহলে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও আসত না। আমাদের কথার উপর বিশ্বাস করে তারা টাকা পয়সা এনে বিনিয়োগ করেন। তাদের বিনিয়োগকে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখতে ও সঠিক ব্যবহারের জন্য আমাদেরকে সঠিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। লেনদেন এক হাজার কোটির আশেপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে এটাকে এবছরের মধ্যে দেড় হাজারে নিয়ে যেতে হবে। এজন্য ডিএসইর আইটি বিভাগের সমস্যা সমাধান করতে হবে। তাদের আইটির কারণে মাঝেমধ্যেই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। মাঝেমধ্যেই ওয়েবসাইট দেখা যায় না।
এফডিআরের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা পুঁজিবাজারে চলে আসবে বলে জানান বিএসইসি চেয়ারম্যান। কারণ মানুষ যখন দেখবে এফডিআরের ৫-৬ শতাংশের থেকে মিউচ্যুয়াল ফান্ডে ১০ শতাংশ রিটার্ন পাওয়া যাচ্ছে, তখন তারা এদিকে ঝুঁকবে। এতে করে সামনে বাজারে লেনদেন অনেক বেড়ে যাবে। এজন্য মিউচ্যুয়াল ফান্ডে সুশাসন আনতে হবে। এ খাতটি আগামীতে ভালোভাবে চলার জন্য কাজ শুরু করছি।
তিনি বলেন, ‘জেড’ ক্যাটাগরির সব কোম্পানির সঙ্গে আমাদের কমিশন পৃথকভাবে মিটিং করেছে। কেউ কেউ ‘জেড’ থেকে বেরিয়ে এসেছে। আগামী ৩ মাসের মধ্যে অনেকেই বেরিয়ে আসবে। যৌথভাবে আলোচনার কারণে অনেকে বেরিয়ে আসছে। তবে ৫-৬টি কোম্পানির অবস্থা বেশি ভালো ছিল না। এগুলোর জন্য আলাদা ব্যবস্থা আছে। এই কাজ শেষে ওটিসি মার্কেট নিয়ে বসব। সেখান থেকে কোম্পানিগুলোকে বের করে নিয়ে আসার জন্য চেষ্টা করব।
কোম্পানি আইন পরিবর্তন করে বাই ব্যাক আইন করবেন বলে জানিয়েছেন শিবলী রুবাইয়াত। তবে এরইমধ্যে ৫টি কোম্পানি ও ২টি ডিবেঞ্চার ডিলিস্টিং করার কথা স্টক এক্সচেঞ্জকে জানিয়ে দিয়েছেন বলে জানান তিনি। এই ডিবেঞ্চার দুটি ২০-২৫ বছরের পুরোনো। এতে বিনিয়োগকারীদের টাকা আটকে ছিল। আমরা এসে সেগুলো খুজে ৫৭ কোটি টাকা আদায়ের চেষ্টা করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, আইসিবি তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারছে না। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজমেন্টের ভেতরে বেশ কিছু ঘাটতি দেখতে পেয়েছি। এ নিয়ে আমরা খুবই চিন্তিত। এই সমস্যা কাটিয়ে আইসিবিকে দ্রুত পুনর্গঠন করা হবে। আগামী ২ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করে সরকারের কাছে সবকিছু তুলে ধরব।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আমরা দায়িত্ব নেওয়ার সময় ২৫-২৬টা আইপিও জমা ছিল। যেগুলো বিগত ১-৩ বছরের পুরোনো আইপিও। কোম্পানিগুলো বারবার অ্যাকাউন্টস জমা দিচ্ছিল। এতে করে প্রতিবার ৫-২০ লাখ টাকা খরচ হচ্ছিল। কিন্তু ওইসময়টায় আইপিও দেওয়া হয় নাই। এখন আমরা আইপিও দেই বা না দেই, সেটাতো কোম্পানিগুলোকে জানাতে হবে। এজন্য আমরা যাদের দেওয়ার, তাদের দিয়ে দিচ্ছি। আর অন্যদের বাদ দিয়ে দিচ্ছি। আমরা কোম্পানিগুলোকে আইপিওর জন্য নতুন করে অ্যাকাউন্টস জমা দেওয়াতে চাই না। তারা এরইমধ্যে ১-৫ বার অ্যাকাউন্টস জমা দিয়েছে। আমরা মোটামুটি আইপিও ক্লিয়ার করে নিয়ে আসছি। আশা করছি এক মাসের মধ্যে পুরোনো সব আইপিও আবেদন ক্লিয়ার করে ফেলব।
তিনি বলেন, আমাদেরকে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী এবং ব্যবসায়ীদের দিক বিবেচনা করতে হবে। যারা ব্যবসা করতে আসেন, তাদের যদি আইপিও দেওয়া বন্ধ করে দেই, তাহলে তারা কোথায় যাবে। তাদেরও টাকার দরকার। এই বাজারে বিনিয়োগকারী এবং ব্যবসায়ী উভয়কেই দেখতে হয়। তা না হলে এই বাজার থাকত না। কে কোথায় বিনিয়োগ করবে, সেটা আমাদের ঠিক করা ঠিক না বলে জানান বিএসইসি চেয়ারম্যান। আমাদের সব জায়গাতে ইন্টারফেয়ার করা ঠিক হবে না। এতে করে বিনিয়োগ করে মজা পাওয়া যাবে না। তবে কোন অনিয়ম পেলে আপনারা জানান। এছাড়া কোন শেয়ার বাড়ল বা কমল, তার জন্য আমাদেরকে দোষ দেওয়া ঠিক হবে না।
সভাপতির বক্তব্যে ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেন, আজকের যারা বিনিয়োগকারী তারা ব্যবসায়ের ভাষায় কাস্টমার। বিনিয়োগকারীদের সাথে ভাল ব্যবহার করতে হবে। কাস্টমারের কথা এমনভাবে মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে যাতে তারা বুঝতে পারে আপনি তাদের কথা শুনছেন। যখন মনে হবে যে কোন ভুল হয়েছে তখন কাস্টমারের কাছে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে। তাদের প্রয়োজনটা বুঝতে হবে এবং সমাধান দিতে হবে। কাস্টমার যখন দুঃখ-কষ্ট নিয়ে আসবে, তাদের দুঃখ-কষ্ট বুঝতে হবে। বাজার ভালো করার জন্য শতভাগের ৫০ ভাগই গভর্নেন্সের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। খারাপ কাজ করলে তার শাস্তি পেতে হবে। ভালো কাজ করলে তার জন্য ধন্যবাদ পেলেই বাজার ভালো হবে।
স্বাগত বক্তব্যে ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ছানাউল হক বলেন, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের উদ্যোগে বাংলাদেশেও ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ ২০২০’ উদযাপিত হচ্ছে। বিএসইসি’র এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই এবং এতে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশা করি।