দেশের ব্যাংক খাত নানা অনিয়মে যখন জর্জরিত ঠিক তখন উল্টো চিত্র রূপালী ব্যাংক পিএলসির। খেলাপি ঋণ আদায়ে সফলতাসহ ব্যাংক পরিচালনায় বর্তমানে দক্ষতার পরিচয় রেখে চলেছে শেয়ারবাজারে তালিকাভূক্ত রাষ্ট্র খাতের একমাত্র ব্যাংকটি। ১৯৮৬ সালে ব্যাংকটির শেয়ার মূলধনের ৯১ শতাংশ সরকারি মালিকানায় রেখে বাকি অংশ বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে নিয়োগ ও নতুন ঋণ বিতরণের বিষয়ে মন্থরতার কারণে আর্থিক বিভিন্ন সূচকে ধারাবাহিকভাবে পিছিয়ে পড়তে থাকে ব্যাংকটি।
২০২২ সাল থেকে ব্যাংকটি ইউটার্ন নিতে শুরু করেছে। সময়োপযোগী কিছু সিদ্ধান্ত বদলে দিয়েছে রূপালী ব্যাংকের আর্থিক চিত্র। ব্যাংকটি এখন বেশি সুদের আমানত ছেড়ে কম সুদের আমানতের দিকে ছুটছে। সিএমএসএমই ঋণ বিতরণে জোর দেয়াসহ নানা সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে আর্থিক উন্নতির কারণে সব সূচকে অগ্রগতি হয়েছে রূপালী ব্যাংকের।
জানা যায়, ব্যাংকটির শ্রেণিকৃত ঋণ, মন্দ ঋণ, সন্দেহজনক ঋণ ও নিম্নমানের ঋণের পরিমাণ কমেছে। এছাড়াও রপ্তানি অর্থায়ন, ব্যবসা বৃদ্ধি, লোকসানি শাখা হ্রাস, ঋণ বিতরণ, নতুন শাখা খোলা, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি, অনলাইন ব্যাংকিং, এটিএম সার্ভিস চালু, লোকবল নিয়োগসহ প্রায় সব বিষয়ের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ব্যাংকটি যেখানে বছর শেষে ১০০ কোটি টাকা মুনাফা করতে হিমশিম খেত সেখানে এবার বছর শেষে মুনাফার পরিমাণ হবে ৬০০ কোটি টাকার বেশি। বর্তমানে যখন বেশির ভাগ ব্যাংক তারল্য সংকটের মুখে রয়েছে তখন ব্যাংকটির দক্ষ ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নেতৃত্বে ট্রেজারী ম্যানেজমেন্টে রয়েছে উল্লেখযোগ্য সফলতা।
সম্প্রতি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সর্বশেষ তৃতীয় প্রান্তিকের (জুলাই’২৩- সেপ্টেম্বর’২০২৩) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ডিএসইর ওয়েব সাইটের তথ্যে দেখা যায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যাংকটির আগের হিসাব বছরের তুলনায় তৃতীয় প্রান্তিকে ব্যাংকের ইপিএস বেড়েছে ২৬২ গুন। ২০২৩ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর তিন মাসে ব্যাংকটির সমন্বিতভাবে ইপিএস হয়েছে ১৩ পয়সা যা গত বছরের একই সময়ে ইপিএস ছিল মাইনাস ০৮ পয়সা। এককভাবে আলোচ্য তিন মাসে ইপিএস হয়েছে ০৯ পয়সা যা গত বছরের একই সময়ে ছিল মাইনাস ১৬ পয়সা।
ব্যাংকটি ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের প্রকাশিত প্রতিবেদনের ঋণাত্বক ৭০ টাকার ক্যাশ ফ্লো কাটিয়ে উঠে ১১৬.২৭ টাকা নেট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো অর্জন করেছে।
ব্যাংকটির চলতি হিসাব বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর প্রথম নয় মাসে সমন্বিতভাবে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৯৩ পয়সা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস ছিল মাত্র ২০ পয়সা। সে হিসেবে কোম্পানিটির ইপিএস বেড়েছে ৭৩ পয়সা। এককভাবে প্রতিষ্ঠানটির প্রথম নয় মাসে শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৭৬ পয়সা। গত বছর একই সময়ে যা ছিল ০১ পয়সা।
২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সমাপ্ত সময়ে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩৫.৮৯ টাকায়।
চলতি বছরের সেপ্টম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটি মুনাফা করেছে প্রায় ৫০০ কোটি। জানা গেছে, বছর শেষে মুনাফা ৬০০ কোটি ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। মোটা অংকের খেলাপী ঋণ নগদে আদায় করেছে এ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
এ ধারা অব্যাহত থাকলে এ অর্জন আরও বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর মধ্যে একটি শক্তিশালী অবস্থান করে নিয়েছে ব্যাংকটি।