বিভিন্ন দেশের শিক্ষাব্যবস্থা পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে প্রতি বছর জিইএম প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে ইউনেস্কো। ২০২০ সালের ‘ইনক্লুশন অ্যান্ড এডুকেশন: অল মিনস অল’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় পাঠদানরত শিক্ষকদের মধ্যে প্রশিক্ষিত রয়েছে মাত্র ৫০ শতাংশ। অর্থাৎ দেশের প্রাথমিক শিক্ষকদের অর্ধেকই এখনো অপ্রশিক্ষিত। যদিও ভুটানে এ হার শতভাগ। প্রতিবেশী অন্যান্য দেশের মধ্যে নেপালের প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে প্রশিক্ষণের হার ৯৭ শতাংশ, মালদ্বীপে ৯০ শতাংশ, শ্রীলংকায় ৮৩ শতাংশ, পাকিস্তানে ৭৮ শতাংশ ও ভারতে এ হার ৭০ শতাংশ। এ হিসেবেও প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ।
তবে বর্তমানে প্রাথমিকের শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত করার বিষয়ে সরকার মনোযোগী হয়ে উঠেছে বলে জানালেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সোহেল আহমেদ।তিনি বলেন, প্রাথমিকের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে এখন নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। নিয়োগ পাওয়ার পর পরই হয়তো ডিপিইডি ও সি-ইন এডের মতো বছরব্যাপী প্রশিক্ষণের আওতায় সব শিক্ষককে আনা সম্ভব হয় না। তবে শিক্ষকদের জন্য বিষয়ভিত্তিক সপ্তাহব্যাপী নানা প্রশিক্ষণ কোর্সের প্রচলন রয়েছে। এমনকি কভিডের সময়েও অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ কোর্স চলমান রয়েছে। এছাড়া পিটিআইগুলোকে আরো বেশি সমৃদ্ধ করা হচ্ছে।
এদিকে ইউনেস্কোর ওই প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মাধ্যমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও দুর্বল অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে মাধ্যমিক শিক্ষকদের ৬৬ শতাংশ অপ্রশিক্ষিত। অর্থাৎ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষকই প্রশিক্ষণ ছাড়াই বিদ্যালয়ে পাঠদান করছেন। যদিও প্রতিবেশী দেশ ভুটানে এ হার শতভাগ। এছাড়া নেপালে মাধ্যমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের হার ৮৩ শতাংশ, শ্রীলংকায় ৮২ শতাংশ ও ভারতে এ হার ৭৬ শতাংশ।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুক বলেন, একটা সময় বিদ্যালয়গুলোয় পর্যাপ্ত সংখ্যক ছিল না, নিয়োগ বাড়ানোর কারণে শিক্ষক সংকট ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। এখন আমরা শিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়নে জোর দিচ্ছি। বিশেষ করে করোনা পরিস্থিতি আমাদের কাছে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের বিষয়টিকে আরো গুরুত্ববহ করে তুলেছে। বর্তমানে তথ্য-প্রযুক্তির জ্ঞান না থাকার কারণে অনেক শিক্ষক অনলাইনে ক্লাস নিতে পারছেন না। এছাড়া মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে আরেকটি বড় সমস্যা হলো—দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশই বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মধ্যে প্রশিক্ষণ গ্রহণ বিষয়েও সচেতনতা অনেক কম। কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে একজন শিক্ষককেই সব প্রশিক্ষণে পাঠায়। সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সব শিক্ষককে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে।