গত বৃহস্পতিবার গুগল সিইও সুন্দর পিচাই বলেন, তারা বিপুলসংখ্যক ব্যবহারকারীর জন্য আরো যুগোপযোগী সেবা সরবরাহে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মানুষের চাহিদার আলোকে সেবা সরবরাহের কারণে আজকের অবস্থানে পৌঁছেছে গুগল। তবে এখন নানা কারণে আমাদের তীব্র প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে।
সুন্দর পিচাই এমন এক সময় মন্তব্য করলেন, যখন খোদ মার্কিন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে একটি অ্যান্টিট্রাস্ট মামলা করেছে। গুগলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটি বাজার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিশ্বাসী নয়। যে কারণে নিজেদের আধিপত্যের সুবিধা নিয়ে তুলনামূলক ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাজার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পিছিয়ে রাখছে প্রতিষ্ঠানটি। এর ফলে বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞাপনদাতা এবং শত শতকোটি গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
১ ট্রিলিয়ন ডলার বাজার মূল্যের প্রযুক্তি জায়ান্ট গুগল এক দশকের বেশি সময় ধরে অবৈধভাবে বাজার আধিপত্যের সুবিধা নিয়ে আসছে, যা অ্যান্টিট্রাস্ট আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। যে কারণে অ্যান্টিট্রাস্ট আইনের লঙ্ঘন ঠেকানোর জন্য গুগলকে বিভক্ত হয়ে সেবাদানে বাধ্য করার প্রয়োজন হতে পারে বলে সম্প্রতি অ্যান্টিট্রাস্ট আইন লঙ্ঘনবিষয়ক দায়ের করা একটি মামলায় এমনটাই দাবি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাম্প্রতিক মার্কিন বিচার বিভাগের মামলা আইকনিক ইন্টারনেট কোম্পানি গুগলকে বিভক্তের প্রক্রিয়া কয়েক ধাপ এগিয়ে নেবে। বিশ্বব্যাপী কয়েকশ কোটি মানুষ ইন্টারনেট সেবার জন্য গুগলের ওপর নির্ভরশীল। এ সংখ্যা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। ইন্টারনেট দুনিয়ায় একচ্ছত্র আধিপত্যের সুবিধা নিচ্ছে গুগল। এ নিয়ে টানা কয়েক বছর ধরে তীব্র সমালোচিত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। গুগলকে ভেঙে একাধিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করতে কয়েক বছর সময় লেগে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
রয়টার্সের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, গুগলের আধিপত্য কমাতে চাইছে মার্কিন সরকার। যে কারণে প্রতিষ্ঠানটিকে বিভক্ত হয়ে সেবা দিতে বাধ্য করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েব ব্রাউজার ক্রোম এবং বিজ্ঞাপন ব্যবসা বিভাগ বিক্রিতে চাপ দেয়া হতে পারে। বৈশ্বিক ডিজিটাল বিজ্ঞাপন খাতে একচ্ছত্র আধিপত্য কমাতে তাই গুগলকে বিভক্তের উপায় খুঁজছে মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো।
বৈশ্বিক প্রযুক্তি খাতে একচেটিয়া ব্যবসা অনুশীলনের জন্য টানা কয়েক বছর ধরে তীব্র সমালোচিত হচ্ছে গুগল, অ্যাপল, ফেসবুক ও ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজন ইনকরপোরেশনের মতো বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলো। এই তো কদিন আগেই সিনেট কমার্স কমিটির শুনানিতে উপস্থিত হয়ে তির্যক সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছিলেন গুগল, ফেসবুক ও টুইটারের সিইও। বিভিন্ন কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনেক দেশে অ্যান্টিট্রাস্ট ইস্যুকে কেন্দ্র করে তদন্ত চলছে। এসব প্রযুক্তি জায়ান্টের বিরুদ্ধে ভুয়া সংবাদ ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতার অভিযোগ ক্রমে বাড়ছে। অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন কৌশলে চাপে ফেলে তুলনামূলক ছোট প্রতিদ্বন্দ্বীদের অধিগ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের ব্যবসা সাম্রাজ্যের বিস্তার করার।
গুগলের বিরুদ্ধে মার্কিন বিচার বিভাগের দায়ের করা পৃথক অ্যান্টিট্রাস্ট মামলার ফোকাস থাকবে প্রতিষ্ঠানটির বৈশ্বিক অনুসন্ধান খাতে একচ্ছত্র আধিপত্যের বিষয়টিতে। অর্থাৎ অনুসন্ধান খাতে নিজেদের একক আধিপত্য ধরে রাখতে গুগল কোন ধরনের অন্যায্য সুবিধা নিয়ে আসছে, তা খতিয়ে দেখা। বৈশ্বিক অনুসন্ধান খাতে গুগল নিজেদের সেবাগুলোকে এগিয়ে রাখছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর মাধ্যমে তুলনামূলক ছোট প্রতিদ্বন্দ্বীদের ব্যবসার দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে প্রতিষ্ঠানটি। পরবর্তী ধাপে প্রতিষ্ঠানটির ডিজিটাল বিজ্ঞাপন খাতে একচেটিয়া ব্যবসা অনুশীলনের বিষয়ে তদন্ত করা হবে। পাশাপাশি গুগলকে ওয়েব ব্রাউজার ক্রোম বিভাগ এবং ডিজিটাল ব্যবসা বিভাগের একটি অংশ বিক্রিতে বাধ্য করতে পারেন মার্কিন নিয়ন্ত্রকরা।
বৈশ্বিক ওয়েব ব্রাউজার বাজারে একক আধিপত্য বিস্তার করেছে গুগল ক্রোম। এখন সামগ্রিকভাবে বাজারটির ৬৬ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে ক্রোম ব্রাউজার। এছাড়া মোবাইল ব্রাউজার বাজারের ৬৪ শতাংশ ক্রোমের দখলে রয়েছে। যে কারণে মনে করা হচ্ছে, ক্রোমের ওপর ভর করে ১৬ হাজার ২৩০ কোটি ডলারের বৈশ্বিক ডিজিটাল বিজ্ঞাপন বাজার থেকে অন্যায্য সুবিধা নিচ্ছে গুগল।
গুগল অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম, অনুসন্ধান ও অনলাইন নানা সেবার পাশাপাশি হার্ডওয়্যার খাতে ব্যবসা জোরদারে চেষ্টা চালাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে গত বছরের নভেম্বরে ২১০ কোটি ডলারে পরিধেয় প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা ফিটবিট অধিগ্রহণে চুক্তিবদ্ধ হয়।