‘বিভিন্ন দেশে পাচার হওয়া অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব থাকা বাংলাদেশীদের তালিকা প্রসঙ্গে’ শিরোনামে গত ২২ অক্টোবর পাঠানো চিঠিতে ইনভেস্টমেন্ট কোটায় যেসব বাংলাদেশী নাগরিক পৃথিবীর অন্যান্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছে, তাদের সম্পর্কে তথ্য বা তালিকা দূতাবাসের মাধ্যমে অথবা অন্য কোনো উপায়ে পাওয়া যাবে কিনা তা জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে।
অর্থ পাচারের বিভিন্ন মাধ্যমের কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে লেখা চিঠিতে বলা হয়, আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে মিস-ইনভয়েসিং, হুন্ডি, বাল্ক ক্যাশ ট্রান্সফার ইত্যাদির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ বিভিন্ন দেশে পাচার হয়। এতে বাংলাদেশের প্রত্যাশিত উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার জন্য যে পরিমাণ দেশীয় বিনিয়োগ করা প্রয়োজন, তা নিশ্চিত করতে হলে অর্থ পাচার রোধ করা একান্ত প্রয়োজন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নাগরিকদের একাংশ এদেশ থেকে অর্থ পাচার করে বিদেশে বিনিয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। বহুল আলোচিত পানামা পেপারস, প্যারাডাইস পেপারস ইত্যাদি কেলেঙ্কারিতে বিভিন্ন বাংলাদেশী নাগরিকের নামও উঠে এসেছে। এ ধারা রোধ করা সম্ভব না হলে অর্থনৈতিক গতিশীলতা ভবিষ্যতে থমকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশী নাগরিকদের বিদেশে অর্থ পাচারের মাধ্যমে নাগরিকত্ব গ্রহণের প্রবণতা রোধ করা প্রয়োজন। এজন্য সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ নিয়ে পাচারকৃত সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনার বিকল্প নেই। এটি একদিকে অপরাধীদের সাজা নিশ্চিত করবে, অন্যদিকে দেশীয় সম্পদ ফেরত আনার পাশাপাশি অন্যদের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে, যা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবেও কাজ করবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পাশাপাশি রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সক্রিয় অংশগ্রহণ ব্যতীত এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব নয়।
দুর্নীতি দমনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, দুর্নীতি দমনবিষয়ক আন্তর্জাতিক সহায়তা গ্রহণের ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। মন্ত্রণালয় প্রাথমিক পর্যায়ে বিভিন্ন দেশে পাচারকৃত সম্পদ বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব গ্রহণকারী বাংলাদেশীদের তথ্য কূটনৈতিক চ্যানেলে সংগ্রহ করে দুদকে সরবরাহ করলে কমিশন দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগী হতে পারবে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই)। গত মার্চে জিএফআইয়ের করা এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি ও রফতানির মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে বছরে ৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়। এছাড়া বিভিন্ন মাধ্যমে অর্থ পাচারের বিষয়টি সামনে এসেছে। অর্থ পাচার রোধে সরকারের একাধিক সংস্থা কাজ করছে। তবে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়াটি খুবই জটিল ও সময়সাপেক্ষ। বাংলাদেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার নজিরও রয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর পাচার করা অর্থ ফেরত এসেছে। ২০১২ ও ২০১৩ সালে তিন দফায় সিঙ্গাপুরের একটি ব্যাংকে থাকা ২১ কোটি টাকারও বেশি অর্থ ফেরত আনা হয়েছে।