রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারে আনার বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করতে রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
বৈঠকে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম খায়রুল হোসেন, অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার, আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের মূল অর্থনৈতিক এলাকা কোথাও কোনো খারাপ সংকেত দিচ্ছে না। আমাদের একটি খাত এখনো নেগেটিভ আছে। তবে একটি খাত দিয়ে সামষ্টিক অর্থনীতি বিবেচনা করা যাবে না। প্রত্যেক দেশেই সব খাত যে সমভাবে চলবে এমনটি নয়। সারাবিশ্বের অর্থনীতির বিবেচনায় আমাদের অর্থনীতির অবস্থা ভালো।
তিনি বলেন, ‘একটা জায়গা নিয়ে সবসময় আমরা চিন্তাগ্রস্ত, সেটি হচ্ছে পুঁজিবাজার। পুঁজিবাজার হচ্ছে অর্থনীতির রিফ্লেকশন, অর্থনীতির যে ফান্ডামেন্টাল সে ফান্ডামেন্টালের ওপর সবসময় অবস্থান করে পুঁজিবাজার। কিন্তু আমাদের দেশের পুঁজিবাজার কেন যেন অর্থনীতির সাথে অ্যালায়েন নয়। অর্থনীতির যে গতিশীলতা তার সাথে পুঁজিবাজার যায় না।’
তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজার এ রকম হওয়ার কারণগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করলাম। আমরা লক্ষ্য করলাম যে বাজারে কিছুটা মিসম্যাচ রয়েছে। বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের পরিমাণ কম। যারা বিনিয়োগ করে নিজ উদ্যোগে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কম হলে কিছু সময় বাজারে বিশৃঙ্খলা থাকে। এ কারণে বাজার কমে গেলে খারাপ ইঙ্গিত বহন করে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেখলাম যে, আমাদের পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এ জন্য সরকারে যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলো পুঁজিবাজারে আসা উচিত সেগুলোকে আমরা পুঁজিবাজারে নিয়ে আসবো।’
কামাল বলেন, ‘সরকারি যেসব ব্যাংক রয়েছে তার মধ্যে একটির শেয়ার বাড়ানোসহ পাঁচটি ব্যাংক আমরা পুঁজিবাজারে নিয়ে আসবো। এর মধ্যে বাজারে তালিকাভুক্ত রূপালী ব্যাংকের শেয়ার বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করবো। পাশাপাশি আমরা নতুনভাবে শেয়ারবাজারে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডকে (বিডিবিএল) নিয়ে আসবো। এরপর অগ্রণী, জনতা এবং সর্বশেষ সোনালী ব্যাংককে নিয়ে আসবো।’
‘আমরা এ বিষয়ে একটি কমিটিও করেছি। কমিটিতে পাঁচটি ব্যাংকের প্রতিনিধি থাকবে এবং এটিকে দেখাশোনা করবে আইসিবি।’
কবে নাগাদ এসব ব্যাংক বাজারে আসবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা অক্টোবরের পরে যাবো না। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর মাধ্যেই আমরা এগুলো করে ফেলবো। এ বছরের মাঝেই আমরা ভালো কাজ যা আছে করবো।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সোনালী ব্যাংককেও আমরা নিয়ে আসবো। এটায় একটু সময় লাগবে। ইভেন্চ্যুয়ালি আমরা তাদেরও নিয়ে আসবো। বাকি চারটা আমরা সেপ্টেম্বরের মধ্যে তালিকাভুক্ত করে ফেলবো। এ কাজগুলো হয়তো দুই পর্যায়ে হতে পারে। সেপ্টেম্বরের মাঝেই কাজগুলো করতে চাই।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো বর্তমানে লাভজনক অবস্থায় রয়েছে। তারাই সরকারকে টাকা দিচ্ছে। তাই এখন আর রিফাইন্যানন্সিং এর দরকার পড়ছে না। প্রত্যেকটা ব্যাংকই লাভজনক।’
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা এ মুহূর্তে অবকাঠামো খাতে যে পরিমাণ বিনিয়োগ করেছি। এখন অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে চাই। অর্থনীতি যেখানে ওঠানামা করে সেগুলোতে আমরা হাত দেব। এজন্য আমাদের ব্যাংক-বীমা খাত দেখতে হবে। এগুলো ঠিক করতে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক যে সমস্যাগুলো ছিল সেগুলো দূর করা হচ্ছে। আইনি কাঠামোতে সমস্যাগুলো দূর করছি।’
‘এনবিআর ও ব্যাংকিং খাত দেখার জন্য আদালতে আমরা দুটো ডেডিগেটেড বেঞ্চ পেয়েছি। ফলে আমাদের মামলার সংখ্যা কমে যাবে। অপরাধী অপরাধ করলে মামলা করতে হবে এবং সেটার রায় দ্রুত হবে। এতে অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে পাওয়ার সেক্টর থেকে লাভজনক সাতটি প্রতিষ্ঠানকে পুঁজিবাজারে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সাতটির মধ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান নতুনভাবে আনা হবে বাকি দুটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের পরিমাণ বাড়ানো হবে।’
কামাল বলেন, ‘বাজার শক্তিশালী করতে সরকার সহায়ক ভূমিকা রাখবে। তবে বাজার বাজারের মতো থাকবে। বাজার নিয়ন্ত্রণ সরকার করে না। আমরা যদি কোনো সহায়ক ভূমিকা রাখি এর উপকার পাবে জনগণ। বাজারে একটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে আসতে পারি এটা যাবে জনগণের কাছে। পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজারে এলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আকৃষ্ট হবে।’