প্রতিবেদন বলা হয়েছে, গত শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বাধীন উত্তর প্রদেশ সরকারের মন্ত্রিসভা স্যামসাং ডিসপ্লে নয়ডা প্রাইভেট লিমিটেডকে বিশেষ আর্থিক প্রণোদনা দেয়ার বিষয়টিতে অনুমোদন দিয়েছে। এর পরই চীন থেকে ডিসপ্লে কারখানা উত্তর প্রদেশে স্থানান্তরে বড় অংকের বিনিয়োগ পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছে স্যামসাং।
বিবৃতিতে উত্তর প্রদেশ সরকারের এক মুখপাত্র বলেন, ভারতে এটিই প্রথম কোনো হাইটেক প্রজেক্ট, যা চীন থেকে ভারতে স্থানান্তর করতে যাচ্ছে স্যামসাং। এ রকম প্রজেক্ট থাকা বিশ্বের তৃতীয় দেশ হতে চলেছে ভারত, যা সরাসরি ৫১০ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। পাশাপাশি কারখানাটিতে পরোক্ষভাবে কয়েক হাজার মানুষের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
ভারতে এশিয়ার সবচেয়ে বৃহৎ স্মার্টফোন উৎপাদন কারখানা পরিচালনা করছে স্যামসাং। ২০১৮ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আনুষ্ঠানিকভাবে কারখানাটির কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। ওই সময় কারখানাটিতে ৪ হাজার ৯১৫ কোটি রুপি বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছিল।
স্যামসাং গত আগস্টে স্মার্টফোন উৎপাদন কার্যক্রমের বৃহৎ একটি অংশ ভিয়েতনাম এবং অন্যান্য দেশ থেকে ভারতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল। ওই সময় দেশটিতে আগামী পাঁচ বছরে ৪ হাজার কোটি ডলার মূল্যের (৩ লাখ কোটি রুপি) স্মার্টফোন উৎপাদনের চূড়ান্ত পরিকল্পনা প্রকাশ করেছিল প্রতিষ্ঠানটি।
ইলেকট্রনিকস জায়ান্ট স্যামসাং ডিভাইস উৎপাদন লাইনে বৈচিত্র্য আনতে কাজ করছে। ভারতে ডিভাইস উৎপাদনের লক্ষ্যে কার্যক্রম ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। ভারত সরকারের পিএলআই স্কিম সুবিধার আওতায় এখন ভিয়েতনাম ও অন্যান্য দেশের স্মার্টফোন উৎপাদন কার্যক্রমও ভারতে সরিয়ে নিতে চাইছে প্রতিষ্ঠানটি।
গত আগস্টে ভারত সরকারের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, অ্যাপল কয়েক বছর ধরে ভারতে চুক্তিভিত্তিক ডিভাইস নির্মাতাদের মাধ্যমে আইফোনের সাশ্রয়ী মডেলগুলো উৎপাদন করে এলেও এখন হাই-এন্ড আইফোনের উৎপাদন শুরু করেছে। স্যামসাং এরই মধ্যে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ভারতে ৪ হাজার কোটি ডলারের স্মার্টফোন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার নথিপত্র ভারত সরকারের কাছে জমা দিয়েছে। এসব ডিভাইসের মধ্যে ২০০ ডলার মূল্যের ডিভাইস থাকবে মোট ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের এবং এ মূল্য সেগমেন্টের বেশির ভাগ ডিভাইস বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হবে।
ভারতের নয়ডায় নিজেদের সবচেয়ে বৃহৎ স্মার্টফোন উৎপাদন কারখানা পরিচালনা করছে স্যামসাং। এ কারখানা থেকে উৎপাদিত ডিভাইসও বাইরের দেশে রফতানি করছে প্রতিষ্ঠানটি। স্যামসাং চীনে নিজেদের ডিভাইস উৎপাদন কার্যক্রম শতভাগ গুটিয়ে নিয়েছে। বর্তমানে ভিয়েতনামে নিজেদের ৫০ শতাংশ স্মার্টফোন উৎপাদনের কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। দক্ষিণ কোরিয়ায় চড়া মজুরির কারণে বাইরের দেশে ডিভাইস উৎপাদন জোরদার করছে প্রতিষ্ঠানটি। ব্রাজিল ও ইন্দোনেশিয়ায়ও প্রতিষ্ঠানটির স্মার্টফোন উৎপাদন কার্যক্রম রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ স্মার্টফোন বাজার, যা স্যামসাংয়ের জন্য বড় বাজার। ভারতের ক্রমবর্ধমান স্মার্টফোন বাজারে গত প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) শাওমিকে হটিয়ে শীর্ষ অবস্থান পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বার্ষিক মোট উৎপাদিত ডিভাইসের বৃহৎ একটি অংশ ভারতে বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি। যে কারণে ভারতকে ডিভাইস উৎপাদন ও রফতানি হাব হিসেবে দেখছে স্যামসাং।
টানা কয়েক বছর ধরে প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদনে চীননির্ভরতা কমাতে কাজ করছে স্যামসাং। বর্তমানে টিভি, মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট ও স্মার্ট ঘড়িতে ব্যবহূত ৭০ শতাংশের কিছু বেশি ডিসপ্লে দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম এবং চীনের কারখানায় উৎপাদন করছে প্রতিষ্ঠানটি।