তিনি বলেন, মহিলাদের প্রধান দু’টি ক্যান্সারের স্থান অর্থাৎ স্তন ও জরায়ুর সুস্থতা নিয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। আমাদের নারীদের বুঝতে হবে স্তন কিংবা জরায়ু একজন নারীর জন্য লজ্জা বা সংকোচের কোন বিষয় নয়। যে অঙ্গে মা তার সন্তানকে ধারণ করেণ, সেই জরায়ু, কিংবা জন্মের পর যে অঙ্গ থেকে সন্তানকে পুষ্টি যোগান, সেই স্তন বরং একজন মায়ের জন্য অহংকারের বিষয়। এর সুস্থাতা নিয়ে নারীকে কথা বলার সাহস যোগাতে হবে।
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, কমিউনিটি অনকোলোজি সেন্টার ট্রাস্টের সম্পাদক মুসাররাত জাহান সৌরভ. জননীর জন্য পদযাত্রার প্রধান সমন্বয়কারী, ক্যান্সার এন্ড এনসিডি এওয়ারনেস প্রোগ্রামের কো-চেয়ারম্যান ডাঃ মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন এবং সিরাক-বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এস এম সৈকত।
এদিকে আন্তর্জাতিক সংস্থাা ‘ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার’-আইএআরসির পরিসংখ্যান অনুযায়ী সারাবিশ্বে প্রতি বছর ৫লাখ ৬৯ হাজার ৮৪৭ নারী এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। মৃত্যুবরণ করে ৩ লাখ ১১ হাজার ৩৬৫ জন। আইএআরসি’র হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে মহিলা ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের পরেই দ্বিতীয় স্থাানে রয়েছে জরায়ুমুখের ক্যান্সার। আইএআরসি’র এই হিসাব অনুযায়ী প্রতিবছর জরায়ুমুখের ক্যান্সারে বাংলাদেশে ৮ হাজার ৬৮ জন নারী আক্রান্ত হয়। মহিলাদের ক্যান্সারের প্রায় ১২ দশমিক ৩ শতাংশ। মারা যায় ৫ হাজার ২১৪ জন।
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউটের সর্বশেষ প্রকাশিত ২০১৪ সালের হাসপাতাল- ভিত্তিক ক্যান্সার নিবন্ধন প্রতিবেদন অনুযায়ী মহিলাদের ক্যান্সারের মধ্যে জরায়ুমুখের ক্যান্সারের স্থান দ্বিতীয় (১৭.৯%), স্তন ক্যান্সার শীর্ষে (২৭.৪%)। নারী- পুরুষ নির্বিশেষে এর অবস্থান চার নম্বরে (৮%)। সহজভাবে বলা যায়, প্রতি পাঁচজন নারী ক্যান্সার রোগীর একজন জরায়ুমুখের ক্যান্সারে ভুগছেন।
কমিউনিটি অনকোলজি সেন্টার ট্রাস্টের সম্পাদক মুসাররাত জাহান সৌরভ বলেন, আমাদের সামাজিক ধর্মীয় বিষয় মাথায় রেখে প্রাণঘাতী এই রোগটি নিয়ে আলোচনা করাটাও অনেক ক্ষেত্রে দু:সাধ্য। অনেকে ভিতরে ভিতরে রোগটি পুষতে থাকেন। লক্ষণ প্রকাশ পেলেও পরিবারের সদস্যদের কাছেও গোপন রাখেন। শেষ পর্যায়ে যখন চিকিৎসার জন্য আসেন, তখন আর করার কিছু থাকে না। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
জননীর জন্য পদযাত্রার প্রধান সমন্বয়কারী এবং ক্যান্সার এন্ড এনসিডি এওয়ারনেস প্রোগ্রাম এর কো-চেয়ারম্যান ডাঃ মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, প্রতিটি পুরুষের দায়িত্ব জননীর কিংবা তার সন্তানের জরায়ুর সুস্থতা নিশ্চিত করা। প্রতি বছর দেশে ৮ হাজার নারী নতুন করে জরায়ুমুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। আর মারা যায় প্রায় ৫ হাজারের বেশি। আশার কথা, এই রোগ অনেকাংশে প্রতিরোধযোগ্য। নিয়মিত পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় হলে অল্প চিকিৎসাতেই নিরাময় সম্ভব।
সিরাক-বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এস এম সৈকত বলেন, আমাদের তরুণদের এই বিষয়ে জানার প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের পাঠ্যপুস্তক এবং পরিবারে কোথাও জরায়ুমুখ ক্যান্সারের মত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে আলোচনা করা হয় না। সিরাক-বাংলাদেশ এই মহান উদ্যোগের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করছে এবং ভবিষ্যতেও এমন প্রোগ্রামের অংশ হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
আলোচনা সভায় সারাদেশ থেকে একঝাঁক তরুণ-তরুণী অংশগ্রহণ করে এবং তাদের জানা-অজানা ও মতামত জ্ঞাপন করেন। উক্ত আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সিরাক-বাংলাদেশের ডাইরেক্টর প্রোগ্রাম - শাহিনা ইয়াসমিন, সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার- তাসনিয়া আহমেদ, রোকনুল রাব্বি, প্রোগ্রাম অফিসার নুসরাত শারমিন রেশমা প্রমুখ।