এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) কর্তৃক লালমাটিয়া হাউজিং সোসাইটি স্কুল ও কলেজ অডিটোরিয়ামে “টেকসই ও সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা” শীর্ষক একটি কমিউনিটি কনসালটেশনের আয়োজন করা হয়। এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে বর্জ্য হতে জৈবসার তৈরির এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে সুফল বয়ে আনবে। বর্জ্য মুক্ত সমাজ গঠনে জিরো ওয়েস্ট নীতি ও পদ্ধতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এসডো কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সহায়তায় লালমাটিয়া বি ও সি কে কাজ করে চলছে এসডো । এরই মধ্যে এসডো লালমাটিয়া এলাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বর্তমান চিত্র নিয়ে মাঠ জরিপ, স্মল গ্রুপ ডিসকাশন ও জুম মিটিং পরিচালনা করেছে। ঢাকা ছাড়াও রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ২৫ নং ওয়ার্ডে এবং গঙ্গাচড়া উপজেলার বেতগাড়ি গ্রামে এসডো এই প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই প্রকল্পের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো স্থানীয় জনগণকে জিরো ওয়েস্ট নীতির আওতায় আনা। এই মডেল কমিউনিটি অন্যান্য কমিউনিটিকেও উদ্বুদ্ধ করবে। একটি বর্জ্য মুক্ত শহর গঠনে পথ দেখাবে এটি। জিরো ওয়েস্টের এই মডেল কমিউনিটির আদলে দক্ষিণ এশিয়ার অঞ্চলগুলোতেও এমন বর্জ্য মুক্ত সমাজ গঠন করা যাবে।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ হাসান নূর ইসলাম রাস্টন।
তিনি বলেন “অস্থায়ী বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র হতে বর্জ্য ভাগাড়ে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত সিটি কর্পোরশন সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। বাসাবাড়ি হতে বর্জ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা এখনও উন্নত করা সম্ভব হয়নি। তাই এসডো কর্তৃক গৃহিত এই প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষজনকে তাদের নিজ বাসাবাড়ি থেকেই বর্জ্য পৃথকীকরণে উদ্বুদ্ধ করার এই চেষ্টা সত্যিই প্রশংসনীয়। এই প্রকল্পে সিটি কর্পোরেশন প্রত্যক্ষ ভাবে সহায়তা প্রদান করবে।
বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে প্রতিদিন ৩৫ হাজার টন বর্জ্য উৎপন্ন হয় যার অধিকাংশই সংগ্রহ করা হয় না। ধারণা করা যাচ্ছে এভাবে চলতে থাকলে ২০২৫ সালে তা দৈনিক ৪৭ হাজার টনে গিয়ে দাঁড়াবে। সে বছরের শেষে প্রায় ১ কোটি ৭১ লাখ ৫৫ হাজার টন বর্জ্য ভাগাড়ে পতিত হবে। এই পাহাড়সম বর্জ্য শুধু যে দুর্গন্ধই ছড়াচ্ছে তা নয়, এটি মাটি, পানি ও বায়ুর সাথে মিশে পরিবেশ তথা মানবদেহের উপরও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। এই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্য এসডো “বিল্ডিং জিরো ওয়েস্ট কমিউনিটিস ফর এ পলিউশন-ফ্রি এনভায়রনমেন্ট ইন বাংলাদেশ” শীর্ষক উদ্ভাবনী এবং কার্যকরী একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো পরিবেশগত স্বাস্থ্য ঝুঁকি রোধের লক্ষ্যে ‘বর্জ্য মুক্ত সমাজ’ গড়ে তোলা।
লালমাটিয়া হাউজিং সোসাইটি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আকমল হোসেন বলেন, এটি একটি পাইলট প্রকল্প। এই মডেল প্রকল্প সফল হলে দেশের যে কোনো প্রান্তে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা (পরিকল্পনা) হাসিনা তাসমিন মৌটুসি এই প্রকল্পের প্রসংশা জানিয়ে বলেন, লালমাটিয়া এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় এই প্রকল্পটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটি কার্যকরি ভূমিকা পালন করবে।
এসডোর মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন এ আলোচনা পর্বের সঞ্চালনা করেন এবং অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের প্রশ্নের উত্তর দেন। অনুষ্ঠানের অংশগ্রহণকারী সকলে এসডোর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান। এছাড়া এই প্রকল্প বাস্তবায়নে আরও কিছু পরামর্শ প্রদান করেন। যার মধ্যে- গৃহ পরিচারিকাদের বর্জ্য পৃথকীকরণ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান করা, বর্জ্য পৃথকীকরণ, কম্পোস্টিং এর পদ্ধতিগুলো প্রদর্শন করা ও এলাকার মসজিদগুলোর মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরি করা।
উপস্থিত সকলেই সুন্দর ভবিষ্যতের লক্ষ্যে বর্জ্য মুক্ত সমাজ গঠনে তাদের সমর্থন জানান এবং একত্রে কাজ করার জন্য অঙ্গিকারবদ্ধ হন।
এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এসডোকে সহযোগিতা করছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, রংপুর সিটি কর্পোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তর, গায়া ও পিএসএফ।