‘অংশীদারিত্ব বাড়াতে পুঁজিবাজারে আসছে এনআরবিসি ব্যাংক’

‘অংশীদারিত্ব বাড়াতে পুঁজিবাজারে আসছে এনআরবিসি ব্যাংক’
পুঁজিবাজারে আসছে চতুর্থ প্রজন্মের এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংক। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ব্যাংকটির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) আবেদন শুরু হয়েছে। ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে প্রতিটি শেয়ারের ইস্যু মূল্য ১০ টাকায় ১২ কোটি সাধারণ শেয়ার ইস্যু করবে। এর মাধ্যমে ব্যাংকটি পুঁজিবাজার থেকে ১২০ কোটি টাকা উত্তোলন করবে। এই অর্থ দিয়ে সরকারি সিকিউরিটিজ কেনা, সেকেন্ডারি বাজারে বিনিয়োগ এবং আইপিও প্রক্রিয়ার ব্যয় নির্বাহ করা হবে। চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকের মধ্যে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকই প্রথম পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে যাচ্ছে। এছাড়াও সম্প্রতি সময়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য সবচেয়ে অল্প সময়ে বাজারে আসছে ব্যাংকটি। এ উপলক্ষে ব্যাংকের ভবিষ্যত পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অর্থসংবাদ-এর সঙ্গে কথা বলেছেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাকির সিকদার ।

[caption id="attachment_43831" align="alignnone" width="800"] ছবি: অর্থসংবাদ[/caption]

প্রশ্ন: চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকের মধ্যে এনআরবিসি ব্যাংক প্রথম পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে যাচ্ছে। এত দ্রুত সময়ে পুঁজিবাজারে আসার কারণ কি?

পারভেজ তমাল: প্রথমত আমরা দেশের মানুষের সঙ্গে ব্যাংকের অংশীদারিত্ব বাড়াতে পুঁজিবাজারে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দ্বিতীয়ত রেগুলেটরি বডির কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যেমন- নতুন ব্যাংক অনুমোদনের আগে তিন বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে আসার শর্ত দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। বেশ আগেই নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেছে। তবে একসঙ্গে অনুমোদন পাওয়া ৯টি ব্যাংকের মধ্যে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকই প্রথম পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হচ্ছে। ২০১৯ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীর ওপর ভিত্তি করে আমরা পুঁজিবাজারে আসার জন্য আবেদন করেছিলাম। করোনার কারণে অনুমোদন পেতে সময় লেগেছে। পরবর্তী সময়ে ২০২০ সালের দুই প্রান্তিকের নিরীক্ষিত বিবরণীও জমা দেওয়া হয়েছে। বিএসইসি আগের তুলনায় অনেক ফাস্ট, আর সেই ফাস্ট ট্র্যাকের আওতায় চলে এসেছে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক। আমি মনে করি, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির ফলে ব্যাংকের সঙ্গে অনেক মানুষ সম্পৃক্ত হবে। এরফলে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন বাড়াতে সহায়ক হবে। আর এ জন্য আমরা পুঁজিবাজারে আসছি।

প্রশ্ন: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলেই কি সুশাসন ও স্বচ্ছতা বাড়বে?

পারভেজ তমাল: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার মাধ্যমে দুটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদারকিতে থাকতে হবে। এখন কিছু উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডারের জবাবদিহিতার মাধ্যমে ব্যাংকটি পরিচালিত হচ্ছে। তালিকাভুক্ত হওয়ার পর বহুসংখ্যক লোকের বিনিয়োগ আসবে। যত শেয়ারহোল্ডার বাড়বে, জবাবদিহিতা তত বাড়বে। আবার বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিএসইসির মতো দুটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদারকির ফলে নিয়ন্ত্রণ বাড়বে। তাই এর ফলে সুশাসন এবং স্বচ্ছতা বাড়বে।

[caption id="attachment_43840" align="alignnone" width="800"] ছবি: অর্থসংবাদ[/caption]

প্রশ্ন: এ বছরে আপনাদের পরিকল্পনা কি?

পারভেজ তমাল: এ বছর আমাদের টার্গেট যে কোন ভাবেই হােক আমরা এক লাখ নতুন লোন তৈরি করবো। এর মাধ্যমে কম পক্ষে এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। ফলে দেশের উন্নয়নেও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ভূমিকা রাখতে পারবে। এই এক লাখ লোন ‍সিঙ্গেল ডিজিটে এবং গ্রামের মানুষকে দেওয়া হবে। যেহেতু আমাদের দেশের প্রায় ৭৫ ভাগ মানুষ গ্রামে বাস করে, সেহেতু আমাদের নজর সেদিকেই। ছোট ছোট লোনের দিকে আমরা প্রাধান্য দিব।

প্রশ্ন: আপনাদের মূলধন ৫৭১ কোটি টাকা হলেও শেয়ার ছাড়ছেন ১২০ কোটি টাকার। এর কারণ কী?

পারভেজ তমাল: তালিকাভুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে বিএসইসির কোনো শর্ত ভঙ্গ হচ্ছে না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্সের শর্তের আলোকে এখন বাজার থেকে ৫৭১ কোটি টাকা তুলতে হতো। একই সময়ে কাজ শুরু করা আরও আটটি ব্যাংক রয়েছে। আমাদের পুঁজিবাজারের আকার বিবেচনায় এত মূলধন উত্তোলন সম্ভব কিনা, তা বিবেচনায় নিতে হবে। আবার বাংলাদেশের শেয়ারহোল্ডাররা আর্থিক সক্ষমতার বিষয়টি বিবেচনা করেন, কত লভ্যাংশ দিল তার ওপর। যে কারণে আর্থিক সক্ষমতা বাড়লে ধীরে ধীরে আরও মূলধন উত্তোলন করবে এনআরবিসি ব্যাংক।

প্রশ্ন: করোনা কেন্দ্রিক আপনাদের বিশেষ কোনো সেবা রয়েছে কি?

পারভেজ তমাল: মানুষের সাহায্য বিভিন্নভাবে দরকার হয়ে থাকে। এক সময় প্রয়োজন নিঃস্বার্থ সাহায্য, আরেক সময় দরকার উপার্জনক্ষম করা। করোনার শুরুর দিকে আমাদের সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। শীতার্ত মানুষকে সহায়তাসহ এখনও বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এখন দরকার বেশি বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য কাজ করা। সে জন্য ব্যাংকের কার্যক্রম একেবারে গ্রাম পর্যায়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। এবার এনআরবিসি ব্যাংক নতুন যত ঋণ বিতরণ করবে, তার এক-তৃতীয়াংশ বিতরণ হবে কটেজ ও মাইক্রো খাতে। এর মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য যা বড় মাধ্যম। এ জন্য ব্যাংকের নেটওয়ার্ক গ্রাম পর্যায়ে নেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে এনআরবিসির চার শতাধিক উপশাখা রয়েছে। ২০২১ সালে সব মিলিয়ে এক হাজারের বেশি উপশাখা এবং ৫০০ ছোট উপশাখায় উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা হাতে নেওয়া হয়েছে। এভাবে সারাদেশে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে পারলে ব্যাংকে কর্মসংস্থান হবে। আবার ব্যাংক যে এলাকায় যাবে, সেখানে কর্মসংস্থান হবে।

[caption id="attachment_43835" align="alignnone" width="800"] ছবি: অর্থসংবাদ[/caption]

প্রশ্ন: প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্যোগে এ ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয়, প্রবাসীদের জন্য ব্যতিক্রমধর্মী কোনো সেবা রয়েছে কি?

পারভেজ তমাল: করোনার সময়ে কাজ হারিয়ে যেসব প্রবাসী দেশে ফিরছেন, তাদের বিভিন্নভাবে ঋণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আনতে ব্যাংকের পরিধি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে যেসব দেশে ২০ থেকে ২৫ হাজার লোক থাকেন, সেখান থেকে বৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠানো উৎসাহিত করতে আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি। আবার প্রবাসে বসে যেন ব্যাংকিং লেনদেন করার সুযোগ পান, সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আমরা আলোচনা করছি। এ ছাড়া প্রবাসীদের বিনিয়োগ দেশে আনতে বিএসইসির ডিজিটাল উইন্ডোর সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার চেষ্টা চলছে। এসব করা গেলে বৈধ চ্যানেলে দেশে অর্থপ্রবাহ বাড়ানো সম্ভব হবে।

 

[caption id="attachment_43843" align="alignnone" width="800"] ছবি: অর্থসংবাদ[/caption]

এনআরবিসি ব্যাংকের বর্তমান কাঠামো নিয়ে কিছু বলেন-

পারভেজ তমাল: বর্তমানে ৮৩টি শাখা, বিআরটিএ, ভূমি রেজিস্ট্রেশন অফিসের বুথসহ ৪০০টি উপশাখা এবং ৫৮৯টি এজেন্ট নিয়ে এনআরবিসি ব্যাংকের সেবা পরিচালিত হচ্ছে। গত বছর শেষে ৯ হাজার ৫৩২ কোটি টাকার আমানত ও সাত হাজার ৪৮৪ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে। গত বছর এ ব্যাংকের মাধ্যমে তিন হাজার ৫৮ কোটি টাকার আমদানি, দুই হাজার ৮০৭ কোটি টাকার রফতানি এবং ৪০৮ কোটি টাকার রেমিট্যান্স এসেছে।

উল্লেখ্য, আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে এনআরবিসি ব্যাংকের আইপিওর আবেদন। ইলেকট্রনিক সাবস্ক্রিপশন পদ্ধতির এ চাঁদা গ্রহণে আবেদন করতে ইচ্ছুক প্রত্যেক যোগ্য বিনিয়োগকারীকে চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে বিদ্যমান বাজারদরে অন্তত ১ কোটি টাকার বিনিয়োগ থাকতে হবে। অংশগ্রহণকারী যোগ্য বিনিয়োগকারীদের ৯ ফেব্রুয়ারি বেলা ২টার মধ্যে তাদের সাবস্ক্রিপশনের পুরো অর্থ ও সাবস্ক্রিপশন ফি হিসেবে ৩ হাজার টাকা জমা করতে হবে।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

বিদেশি ডেবিট কার্ডে অর্থ তোলা বন্ধ করল ইবিএল
ফু-ওয়াং সিরামিকের লভ্যাংশ অনুমোদন
এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা
ডিএসইতে মোবাইল গ্রাহক-লেনদেন দুটোই কমেছে
এসবিএসি ব্যাংকের নতুন এএমডি নূরুল আজীম
বছরজুড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পেয়েছে ৯ কোম্পানি
পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ আজ
বছরজুড়ে আলোচনায় খেলাপি ঋণ, সুদহার ও বিনিময়হার
বছরের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে ৪০ শতাংশ
রবিবার পুঁজিবাজার বন্ধ থাকলেও চলবে দাপ্তরিক কার্যক্রম