‘নারীর অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিতে বাধা দূরীকরণে যে সংস্কার তা ধীর হয়ে গেছে অনেক অঞ্চলে এবং অসমও’—এমন মত জানিয়ে ‘উইমেন, বিজনেস অ্যান্ড দ্য ল ২০২১’ শীর্ষক এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক। এতে আরো বলা হয়, নারী-পুরুষ লিঙ্গসমতা প্রতিষ্ঠায় অগ্রগতি করছে বিশ্বের দেশগুলো। কিন্তু বিশ্বজুড়ে নারীরা এখনো আইনগত বাধার মুখে পড়ছে, যা তাদের অর্থনৈতিক সুযোগকে সীমিত করছে। করোনা মহামারি এ ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
গবেষণাটি পরিচালিত হয় ২০১৯ সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর ২০২০ পর্যন্ত। ১৯০ দেশের ওপর পরিচালিত এই জরিপে দেখা যায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নারীর সমতা প্রতিষ্ঠায় খুব একটা পরিবর্তন ঘটেনি। এখনো পুরুষ যতটুকু আইনগত অধিকার পায় নারী গড়ে পায় তার তিন-চতুর্থাংশ।
আটটি সূচকের আলোকে ৩৫টি প্রশ্নের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদনে মূল্যায়ন করা হয়। মোট নম্বর ছিল ১০০। এর মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ৪৯.৪। আগের বছরও বাংলাদেশের সূচক একই ছিল। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মধ্যে শুধু আফগানিস্তানের ওপরে বাংলাদেশ। এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তানের স্কোর ৫৫.৬, শ্রীলঙ্কার ৬৫.৬, ভুটান ৭১.৯, মালদ্বীপ ৭৩.৮, ভারত ৭৪.৪, নেপাল ৮০.৬ ও আফগানিস্তান পেয়েছে ৩৮.১ পয়েন্ট। অর্থাৎ দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে নেপাল।
চলাচলের স্বাধীনতা, কর্মক্ষেত্রের সমতা, মজুরি, বিবাহ, পিতৃত্ব-মাতৃত্ব, উদ্যোগ, সম্পদ ও পেনশন এই আটটি সূচকের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। এতে দেখা যায় চলাচলের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নারীরা শতভাগ স্বাধীন। এ ক্ষেত্রে ১০০ নম্বরের মধ্যে বাংলাদেশের স্কোর ১০০। কর্মক্ষেত্রের সমতায় বাংলাদেশ পেয়েছে ৫০, মজুরির ক্ষেত্রে ২৫, বিবাহে ৬০, মাতৃত্বে ২০, উদ্যোগে ৭৫, সম্পদে ৪০ ও পেনশনে ২৫। যেসব দেশ নারীর অধিকার শতভাগ প্রতিষ্ঠা করে ১০০ স্কোর করেছে এমন দেশের সংখ্যা গত প্রতিবেদনে ছয়টি থাকলেও এবার বেড়ে হয়েছে ১০টি। যেসব দেশে নারী-পুরুষের অধিকার সমান সেসব দেশ হচ্ছে বেলজিয়াম, কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, লাটভিয়া, লুক্সেমবার্গ, পর্তুগাল ও সুইডেন।
এক বিবৃতিতে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড মলপাস বলেন, ‘অনেক দেশে উন্নতি সত্ত্বেও কিছু দেশে তার উল্টোটাও ঘটছে। যেমন পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া নারীর চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি।’ তিনি বলেন, ‘নারী ও পুরুষের যে অসুবিধা রয়েছে তা আরো খারাপ করে দিয়েছে করোনা মহামারি। যেমন তাদের স্কুল বা চাকরিতে উপস্থিত হওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। ক্রমবর্ধমান গৃহ নির্যাতনের শিকার হচ্ছে নারীরা।’