এদিকে দেশব্যাপী জাতীয় বীমা দিবস পালন করা হচ্ছে আগামী ১ মার্চ। এ উপলক্ষে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তত্ত্বাবধানে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের সার্বিক সহযোগিতায় রয়েছে আইডিআরএ, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ) ও বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরাম (বিআইএফ)। আইডিআরএ অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক হলেও এর অতিথি তালিকায় নাম নেই সংস্থাটির চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেনের।
বীমা দিবসের আলোচনা সভার নিমন্ত্রণপত্রে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন। সভাপতিত্ব করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। স্বাগত বক্তব্য দেবেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম। বিআইএর প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেনও অতিথি হিসেবে সভায় বক্তব্য রাখবেন।
এর আগে আসন্ন বীমা দিবসের অনুষ্ঠানের জন্য ড. মোশাররফের বক্তব্যের খসড়া মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল আইডিআরএ। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, খসড়াটি মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হলে তার অনুমোদন মেলেনি। এ কারণেই ড. মোশাররফ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে পারবেন না এবং তার নামও অতিথি তালিকায় নেই।
আরও জানা গেছে, আইডিআরএ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ একটি তদন্ত কমিটি করেছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এবিএম রুহুল আজাদকে। সদস্য হিসেবে রয়েছেন একই বিভাগের যুগ্ম সচিব মৃত্যুঞ্জয় সাহা ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) মহাব্যবস্থাপক মো. জাকির হোসেন চৌধুরী।
এবারের বীমা দিবসের অনুষ্ঠানের অতিথি তালিকায় আইডিআরএ চেয়ারম্যানের নাম না থাকার বিষয়টি অনেকেরই নজরে এসেছে। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরনের অনুষ্ঠানের অতিথি হিসেবে আইডিআরএ চেয়ারম্যান পদাধিকারবলেই উপস্থিত থাকেন এবং বক্তব্য রাখেন। গত বছর বীমা দিবসের অনুষ্ঠানেও তত্কালীন চেয়ারম্যান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকেছেন ও বক্তব্য রেখেছেন।
তবে এবারের অনুষ্ঠানে অতিথি তালিকায় নাম না থাকায় সংস্থাটির বর্তমান চেয়ারম্যান অনুষ্ঠানের মঞ্চেও উপস্থিত থাকতে পারবেন না। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইডিআরএর বর্তমান চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গুরুতর এ অভিযোগের কারণেই বীমা দিবসে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে বক্তা ও অতিথি হিসেবে আইডিআরএ চেয়ারম্যানকে রাখা হয়নি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি অনুযায়ী স্বচ্ছতার স্বার্থেই এ ধরনের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদযোগ্য বলে অভিমত খাতসংশ্লিষ্টদের।
উল্লেখ্য, আইডিআরএ চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেনের ঘুষ দাবির বিষয়টি সামনে আসে এ বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি। এদিন ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে ৫০ লাখ টাকা উেকাচ দাবিসংক্রান্ত কথোপকথনের রেকর্ডসহ সংবাদ সম্মেলন করে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। এতে অভিযোগ তোলা হয়, ডেল্টা লাইফের অনিষ্পন্ন বিভিন্ন ইস্যু সমাধানের জন্য কোম্পানিটির যুগ্ম নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট (জেইভিপি) আব্দুল আউয়াল আইডিআরএ চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করতে গেলে তিনি তার কাছে প্রাথমিকভাবে ২ কোটি, পরবর্তী সময়ে ১ কোটি এবং সর্বশেষ ৫০ লাখ টাকা উেকাচ দাবি করেন। এ-সংক্রান্ত কথোপকথনের রেকর্ডসহ গত ডিসেম্বরে দুদকে লিখিত অভিযোগ করে ডেল্টা লাইফ কর্তৃপক্ষ। দুদকের কাছে জমা দেয়া ডেল্টা লাইফের কর্মকর্তা আব্দুল আউয়ালের সঙ্গে আইডিআরএ চেয়ারম্যানের ১৯ মিনিট ৪০ সেকেন্ড ও ৮ মিনিট ৩ সেকেন্ডের দুটি অডিও ক্লিপের বক্তব্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ডেল্টা লাইফের বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের বিষয়গুলো সমাধানের জন্য তারা আলোচনা করছেন। আলোচনার এক পর্যায়ে শোনা যায়, আব্দুল আউয়ালকে আইডিআরএ চেয়ারম্যান দাবীকৃত অর্থের বিষয়টি নিয়ে ডেল্টা লাইফের উদ্যোক্তা মনজুরুর রহমানের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ করছেন।
অডিও রেকর্ডিংয়ের ভাষ্যমতে, ড. মোশাররফ দাবীকৃত এ অর্থ আইডিআরএর কাছে ডেল্টা লাইফের বিরুদ্ধে অভিযোগকারীদের দেয়ার জন্য নিতে চাইছেন।
অন্যদিকে ঘুষ দেয়ার প্রস্তাবসহ মিথ্যা অপবাদ দেয়া ও কূটকৌশলের মাধ্যমে মানহানি করার প্রচেষ্টার কারণে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক চেয়ারম্যান মনজুরুর রহমান, সাবেক সিইও আদিবা রহমান এবং কোম্পানির আরো চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ২৫ কোটি টাকার মানহানি মামলা করেছেন আইডিআরএ চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন।