বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) ঢাকার ইন্টার কন্টিনেন্টাল হোটেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম অ্যাগ্রিমেন্টের (টিকফা) আওতায় গঠিত টিকফা ফোরামের পঞ্চম বৈঠকে সচিব এসব কথা বলেন।
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে ২৫ সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব প্রদান করেন বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ১৮ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব প্রদান করেন ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভের (ইউএসটিআর) দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ ক্রিস্টোফার উইলসন।
এর আগে গত চারটি টিকফা বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করা হলেও এবার করা হয়নি। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরামের সভায় আগত মার্কিন প্রতিনিধিদলকে মার্চ ও মুজিববর্ষের আন্তরিক শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা বৃদ্ধি টিকফার উদ্দেশ্য হলেও এ ক্ষেত্রে আশানুরূপ অগ্রগতি অর্জিত হয়নি। বাংলাদেশের বেসরকারি খাত পঞ্চম টিকফা সভার অগ্রগতির বিষয়ে আমরা অত্যন্ত আশাবাদী। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এ সভাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে সভায় মন্তব্য করা হয়।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অনুষ্ঠিত পঞ্চম টিকফা বৈঠকে তৈরি পোশাকসহ বাংলাদেশি পণ্যের যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে উচ্চ শুল্কহার হ্রাস, জিএসপি সুবিধা পুনঃপ্রবর্তন, বাংলাদেশে মার্কিন বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বাণিজ্য সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা কামনা করেন সচিব। সভায় বাংলাদেশে বিদ্যমান বিনিয়োগ পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা হয়।
সচিব তার বক্তব্যের শুরুতে উল্লেখ করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি দুদেশের মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্কের কথা উল্লেখ করে টিকফার পঞ্চম সভার মাধ্যমে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ভবিষ্যতে অধিকতর সমৃদ্ধ হবে মর্মে আশা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বৃহত্তম রফতানি বাজার এবং অন্যতম বিনিয়োগ ও উন্নয়ন সহযোগী। তিনি বাংলাদেশে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে উল্লেখ করেন।
বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আর্থ-সামাজিক খাতে উন্নয়ন, জাতীয় পরিকল্পনা ‘ভিশন ২০২১’ ও ‘ভিশন ২০৪১’ এবং ২০২৪ সালে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের বিষয় উল্লেখ করে সামগ্রিক সহযোগিতার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্জিত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে তিনি সরকারের রফতানিবান্ধব বাণিজ্য নীতি, বাজারনির্ভর অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও বেসরকারি অংশীজনের অংশগ্রহণকে বিশেষভাবে উপস্থাপন করেন।
বাংলাদেশ টিকফার বর্তমান বৈঠকে জিএসপি সুবিধা বিবেচনার দাবি করলে ইউএসটিআরের প্রতিনিধিদলের নেতা রাজনৈতিক, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিধি-বিধানের বিষয়ে উল্লেখ করেন। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রদত্ত জিএসপি অনুরূপ ইবিএ সুবিধা পেয়ে আসছে বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রকে বিষয়টি পুনঃবিবেচনার আহ্বান জানায়। ইউএস প্রতিনিধিদলের নেতা বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার আশ্বাস দেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে থেকে মেধাস্বত্ব (আইপিআর), ডিজিটাল ট্রেড (ক্রস বর্ডার ডেটা ফ্লো), টেকনোলজি ট্রান্সফার বিষয়ে বাংলাদেশে বিদ্যমান বিধি-বিধান ও বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়।
সভায় বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতি উন্নয়নের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। শ্রম আইনের আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নীতিমালার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করে ২০১৮ সালে সংশোধিত লেবার আইনের প্রবিধানসমূহ অবহিত করা হয়। শ্রমিক স্বার্থ সংরক্ষণে কোর্ট স্থাপন, লেবার ইন্সপেকশন বিষয়ে অবহিত করা হয়। শ্রমিক স্বার্থ সংরক্ষণে বাংলাদেশের গৃহীত কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অনুষ্ঠিত পঞ্চম টিকফা সভায় দুদেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা অধিকতর বৃদ্ধি করার বিষয়ে আলোচনা করা হয়। বাণিজ্য ও কাস্টমস সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ‘ক্যাপাসিটি বিল্ডিং’-এ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সহায়তার আশ্বাস দেয়। সর্বশেষ এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণে এবং এসডিজি (জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সম্মুখে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলার লক্ষ্যে টিকফার মাধ্যমে বাংলাদেশ বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা কামনা করে।