বুধবার (১১ মার্চ) রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শক্রমে আইন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব শেখ গোলাম মাহবুব স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আইন মন্ত্রণালয়।
অন্যদিকে, একই প্রজ্ঞাপনে কুড়িগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ মুন্সি রফিউল আলমকে ঢাকার (জেলা ও দায়রা জজ) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এ বদলি করা হয়েছে।
এর আগে গত ৩ মার্চ পিরোজপুরের সাংসদ এ কে এম আউয়াল দম্পতির জামিন নামঞ্জুরকে কেন্দ্র করে জেলা ও দায়রা জজ মো. আব্দুল মান্নানকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে (তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার) আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়। আর যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ নাহিদ নাসরিনকে ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজের দায়িত্ব দেয়া হয়।
ওইদিন পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মঞ্জুর মোর্শেদ সাংবাদিকদের জানান, মঙ্গলবার (৩ মার্চ) সকালে পিরোজপুরের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল তিনটি মামলায় এবং তার স্ত্রী লায়লা পারভিন একটি মামলায় পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন। দুপুরে শুনানি শেষে বিচারক মো. আবদুল মান্নান জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। কারাগারে পাঠানো আদেশের পর আউয়াল ও লায়লা পারভীনের আইনজীবী আদালতে তাদের অসুস্থতার চিকিৎসা প্রতিবেদনসহ হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা ও ডিভিশন দেয়ার আবেদন করেন।
বিকেল পৌনে তিনটার দিকে বিচারক ডিভিশনসহ হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। এর কিছুক্ষণ পর জেলা ও দায়রা জজ মো. আবদুল মান্নানকে বদলির চিঠি পাঠানো হয়। এরপর তিনি যুগ্ম ও জেলা জজ নাহিদ নাসরিনের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। বিকেল পৌনে চারটার দিকে আউয়াল ও লায়লা পারভিনের আইনজীবীরা ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ নাহিদ নাসরিনের কাছে পুনরায় জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিকেল চারটার দিকে বিচারক আসামিদের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন।
গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের বরিশাল সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আলী আকবর বাদী হয়ে আউয়ালের বিরুদ্ধে খাসজমিতে ভবন নির্মাণ, অর্পিত সম্পত্তি ও পুকুর দখলের অভিযোগে তিনটি মামলা করেন।
একটি মামলায় আউয়ালের সঙ্গে তার স্ত্রী পিরোজপুর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী লায়লা পারভীনকেও আসামি করা হয়েছে।
গত ৭ জানুয়ারি আউয়াল ও লায়লা পারভিন হাইকোর্ট থেকে আট সপ্তাহের অন্তর্বর্তী জামিন লাভ করেন। পরে ওই জামিনের মেয়াদ শেষ হলে তারা পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন।
এর আগে দুপুরে আউয়ালকে কারাগারে পাঠানোর আদেশের পর পিরোজপুর হুলারহাট সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটে। শহরের সার্কিট হাউস এলাকায় সড়কে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ করা হয়। পরে পিরোজপুর-পাড়েরহাট সড়কের কয়েকটি স্থানে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করা হয়। এছাড়া শহরের গোপাল কৃষ্ণ টাউন ক্লাব সড়কে প্রতিবাদ মিছিল করে আউয়ালের অনুসারীরা।
দুদকের বরিশাল সমন্বিত জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, তিনটি মামলার মধ্যে প্রথম মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে এ কে এম এ আউয়াল ও তার স্ত্রী লায়লা পারভীন প্রভাব খাটিয়ে নাজিরপুর উপজেলার বুইছাকাঠি মৌজায় দশমিক ০৩ একর খাসজমি বেনামে বন্দোবস্ত নেন। পরে ওই জমিতে দ্বিতল ভবন নির্মাণ করে ভাড়া দেন। এ ঘটনায় আউয়াল ও তার স্ত্রী লায়লা পারভীনকে আসামি করা হয়। অপর দুই মামলায় শুধু আউয়ালকে আসামি করা হয়।
ওই দুই মামলায় বলা হয়েছে, পিরোজপুর পৌরসভার খুমুরিয়া মৌজায় রাজার পুকুর নামে পরিচিত হিন্দুদের ও অর্পিত সম্পত্তির ৪৪ শতাংশ জমি দখল করে চারপাশে দেয়াল নির্মাণ করেন আউয়াল। এছাড়া নেছারাবাদ উপজেলার স্বরূপকাঠি মৌজায় দশমিক ০৫ একর অর্পিত সম্পত্তি বন্দোবস্ত নিয়ে শর্ত ভঙ্গ করে আউয়াল ফাউন্ডেশনের নামে দ্বিতল ভবন করেন আউয়াল।