কেননা সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের (এসসিজি) ভিক্টর ট্রাম্পার স্ট্যান্ডে ঠিকই জোরে হাঁক দেয়ার ভঙ্গি করে বসে আছেন অস্ট্রেলিয়ার ঐতিহাসিক দর্শক স্টিফেন হারল্ড গাস্কোইগ্নে। যিনি অধিক পরিচিত ‘ইয়াব্বা’ নামে। অবশ্য জীবিত অবস্থায় নয়, ইয়াব্বার মূর্তি একমাত্র দর্শক হিসেবে গ্যালারিতে বসে দেখছেন অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড সিরিজের প্রথম ওয়ানডে।
১৯ মার্চ ১৮৭৮ সালে জন্মগ্রহণ করা ইয়াব্বা পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন ১৯৪২ সালের ৮ জানুয়ারি। নিজের জীবদ্দশায় তিনি ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার সবধরনের খেলাধুলার একনিষ্ঠ ভক্ত। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের হিল এরিয়াতে বসে সব ম্যাচ দেখতেন ইয়াব্বা। তার সবচেয়ে প্রিয় কাজ ছিলো, যেকোনো বিষয়ে খেলোয়াড়দের প্রশ্নবাণে জর্জরিত করা এবং নানান মজাদার স্লেজিং করা।
তৎকালীন সময়ে ক্রিকেট ম্যাচ হতো বর্তমান সময়ের টেনিসের মতো। প্রায় সব দর্শকই থাকতেন বেশ চুপচাপ। যার ফলে হিল এরিয়ায় বসে ইয়াব্বার চিল্লিয়ে বলা সব কথাই স্পষ্টত শুনতে পেতেন খেলোয়াড় ও আম্পায়াররা। দারুণ বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন সব স্লেজিংয়ের কারণে ক্রিকেটারদের কাছে অতি পরিচিত হয়ে যান ইয়াব্বা। যা তাকে আজও অমর করে রেখেছে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে।
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ইয়াব্বার বিখ্যাত হিল এরিয়াতে বসানো হয় চেয়ার। তখন তার সম্মানে ঐ স্ট্যান্ডের নাম রাখা হয় ‘ইয়াব্বাস হিল’। পরে ২০০৭ সালে ইয়াব্বাস হিল ও ডগ ওয়াল্টার্স স্ট্যান্ড ভেঙে দুটিকে একত্রে করে বানানো হয় ভিক্টর ট্রাম্পার স্ট্যান্ড। ফলে কিছুদিনের জন্য এসসিজি থেকে হারিয়ে যায় ইয়াব্বার স্মৃতি।
তবে ২০০৮ সালের ৭ ডিসেম্বরেই ইয়াব্বাকে ফিরিয়ে আনা হয় এসসিজিতে। এবার তার নামে গ্যালারি নয়, অসাধারণ এক ভাষ্কর্যের মাধ্যমে আস্ত ইয়াব্বাকেই বসিয়ে দেয়া হয় এসসিজির ভিক্টর ট্রাম্পার স্ট্যান্ডে। ঠিক যেখানে বসে তিনি জীবদ্দশায় দেখতেন সব ম্যাচ। সেদিনের পর থেকে ক্যাথি উইজম্যানের করা সে ভাষ্কর্যের মাধ্যমে এসসিজিতে হওয়া সব ম্যাচেই উপস্থিত দেখা যায় ইয়াব্বাকে।
যার ব্যত্যয় ঘটেনি দর্শকশুন্য অবস্থায় আয়োজিত অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচেও। পুরো মাঠের সব গ্যালারি যখন ফাঁকা, তখন দূর থেকে ইয়াব্বার ভাষ্কর্য দেখে যে কারো মনে হতেই পারে যে হয়তো গত শতকের কোনো ম্যাচ মাঠে বসে দেখছেন স্টিফেন হারল্ড গাস্কোইগ্নে ওরফে ইয়াব্বা।