জনসমাগমে ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়ে বলে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা এসেছিল আগেই।
আক্রান্তের সংখ্যা ত্রিশ ছাড়িয়ে যাওয়ার পর সোমবার সরকার ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সব অফিস-আদালতে ছুটি ঘোষণা করে।
এরপর রাত থেকেই ঢাকার বাস ও লঞ্চ টার্মিনাল এবং রেলস্টেশনে বাড়তে শুরু করে গ্রামমুখো মানুষের ভিড়। মঙ্গলবার সকালেও রাজধানীর বিভিন্ন টার্মিনালে গিয়ে বহু মানুষকে ঢাকা ছাড়ার চেষ্টায় যানবাহনের অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়।
সকালে যারা কমলাপুর স্টেশনে গিয়েছিলেন, তারা জানতে পারেন, লোকাল ও মেইল ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এরপর একের পর এক সব পথে যোগাযোগ বন্ধের ঘোষণা আসতে থাকে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মঙ্গলবার এক ভিডিও বার্তায় বলেন, আগামী ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল সারাদেশে সব গণপরিবহন ‘লকডাউন করার’ সিদ্ধান্ত হয়েছে। ট্রাক, কভার্ডভ্যান, ঔষধ, জরুরি সেবা, জ্বালানি, পচনশীল পণ্য পরিবহণ- এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে। তবে পণ্যবাহী যানবাহনে কোনো যাত্রী পরিবহন করা যাবে না।
বিআইডব্লিউটিএ সারা দেশে সব ধরনের যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল মঙ্গলবার থেকেই বন্ধ ঘোষণা করে।
এ সংস্থার পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, “পন্টুনে আজ যতগুলি লঞ্চ ভিড়ে রয়েছে, সেগুলো ছাড়ার পরে এ আদেশ কার্যকর হবে।”
আর বুধবার থেকে অভ্যন্তরীণ রুটের কোনো ফ্লাইটও চলবে না জানিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, ”আপাতত ৪ এপ্রিল পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, সন্ধ্যা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে; তবে পণ্যবাহী ট্রেন চলবে। কিছু ট্রেন এখনও পথে রয়েছে। সেগুলো ঢাকাসহ গন্তব্যে এসে আবার ছাড়ার নির্ধারিত প্রান্তে চলে যাবে। সন্ধ্যার পর শিডিউল অনুযায়ী ট্রেন চলবে না।”
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের হিসাবে বিশ্বের ১৬৯ দেশে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ১৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে; আক্রান্ত হয়েছে প্রায় চার লাখ মানুষ।
আর বাংলাদেশে সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত ৩৯ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যাদের চারজন ইতোমধ্যে মারা গেছেন।
বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এই দেশে অতি সংক্রামক এই ব্যাধি বাংলাদেশে ব্যাপক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়লে কী পরিণতি ঘটবে- তা নিয়ে সবার মধ্যে রয়েছে উদ্বেগ-আতঙ্ক।