শেষ পর্যন্ত পুরস্কারটা গেছে তাঁরই কাছে। অবশ্য যেমন খেলেছেন, তাতে আনহেল দি মারিয়া আজ পুরস্কারটা না পেলে হয়তো অবিচারই হতো!
মারাকানায় নেইমারের ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারিয়ে কোপা আমেরিকার শিরোপা জিতেছে মেসির আর্জেন্টিনা, তাতে মেসি-নেইমারকেও ছাপিয়ে উজ্জ্বল দি মারিয়া। ২১ মিনিটে তাঁর দারুণ চিপই শেষ পর্যন্ত ম্যাচে ব্যবধান গড়ে দিয়েছে, আক্রমণের পাশাপাশি রক্ষণে নেমেও বারবার সাহায্য করেছেন দি মারিয়া।
ফাইনালটা তাই শেষ পর্যন্ত দি মারিয়ারই ফাইনাল হয়ে থাকল। তবে ম্যাচ শেষে আর্জেন্টাইন উইঙ্গার বলছেন, এমনটা যে হবে, সেটা নাকি ম্যাচের আগেই বলেছিলেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক লিওনেল মেসি!
দি মারিয়া বেশ দুর্ভাগাই বটে! ক্যারিয়ারে এর আগে আর্জেন্টিনার হয়ে বেশ কয়েকটি ফাইনালে তাঁকে খেলতে দেয়নি চোট। এই মারাকানাতেই ২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালের স্মৃতি তো এখনো আর্জেন্টাইন সমর্থকদের মনে তরতাজা। জার্মানির বিপক্ষে সেদিন ১-০ গোলে হেরেছিল আর্জেন্টিনা, টুর্নামেন্টজুড়ে দারুণ খেলা দি মারিয়ার সেদিন ফাইনাল খেলা হয়নি।
মাঝে ২০১৫ কোপা আমেরিকার ফাইনালে খেলেছেন বটে, কিন্তু চোট পেয়ে ২৯ মিনিটেই মাঠ ছাড়তে হয় তাঁকে। সেবার চিলির কাছে হেরেছিল আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনার হয়ে ফাইনালে আবার দি মারিয়াকে চোট খেলতে দেয়নি এর পরের বছর, ২০১৬ কোপা আমেরিকার ফাইনালে। সেবারও হেরেছে আর্জেন্টিনা।
অবশেষে এসে দি মারিয়ার দুঃখ ঘুচল। ফাইনালে খেলেছেন, গোল করে দলকেও জিতিয়েছেন। যেমনটা করেছিলেন ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকের ফাইনালে। মজার ব্যাপার, নাইজেরিয়ার বিপক্ষে সেদিন ফাইনালেও দি মারিয়া গোলটা করেছিলেন দারুণ চিপ করে, সেদিনও ১-০ গোলে জিতেছিল আর্জেন্টিনা। আজ ব্রাজিলের বিপক্ষেও তা-ই। সিনিয়র ফুটবলে তো নয়ই, আজকের আগে আর্জেন্টিনার আন্তর্দেশীয় ফুটবল অঙ্গনে সাফল্য বলতেও ছিল ওই ২০০৮ অলিম্পিকে সোনাই!
ফাইনালের পর তাই দি মারিয়ার অনুভূতি, ‘কত স্বপ্ন দেখেছি এমন একটা শিরোপা নিয়ে! এই শিরোপাটার জন্য কত লড়াই-ই না করেছি! (আজকের গোলের সময়ে) রদ্রিগো নিখুঁত পাস দিয়েছে আমাকে। আমি সেটাকে অলিম্পিকে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের মতো করে জালে জড়িয়েছি।‘
নাইজেরিয়ার বিপক্ষে সেদিন দি মারিয়াকে গোলের পথে পাসটা বাড়িয়েছিলেন মেসি। আজ আন্তর্জাতিক ফুটবলেও মেসির শিরোপার আক্ষেপ ঘুচিয়ে দিলেন দি মারিয়া। ম্যাচে নামার আগে দুজনের কথা হয়েছে? এমন প্রশ্নে দি মারিয়ার উত্তর, ‘এটা (যে আলাপ হয়েছে) এটা আমি কখনো ভুলব না। মেসি আমাকে বলেছে ‘‘তোমাকে ধন্যবাদ’’, আমি ওকে বলেছি, ‘’না, তোমাকে ধন্যবাদ।’’ ও আমাকে বলেছিল এটা আমার ফাইনাল হবে। যে ফাইনালগুলোতে আমি খেলতে পারিনি সেটার জবাব হবে। এমন কিছু হতে হলে আজই হওয়ার দরকার ছিল, সেটাই হয়েছে।‘
জয়টা তাঁর স্ত্রী, সন্তান, বাবা-মা ও চলার পথে সমর্থন জানানো সবাইকে উৎসর্গ করেছেন দি মারিয়া। পরে বললেন, ‘শিগগিরই বিশ্বকাপ আসছে।’ যদিও এ দিয়ে তিনি সামনে বিশ্বকাপের ম্যাচ আসছে, সেখান থেকে দল বিশ্বকাপে যাবে - সেটা বুঝিয়েছেন নাকি কোপা আমেরিকার পর আর্জেন্টিনার এই দল বিশ্বকাপও জিততে যাচ্ছে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, তা নিশ্চিত নয়।