শুক্রবার (৯ জুলাই) দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় দুই প্রদেশের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে কমপক্ষে তালেবানের ১০৯ সদস্য নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ২৫ জন। আফগান সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
এদিকে ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা ইরনা এসব সংঘর্ষের খবর জানিয়ে বলেছে, কোনো কোনো স্থানে আফগান সৈন্যরা তালেবানের অগ্রাভিযান প্রতিহত করেছে এবং কোনো কোনো জেলা তালেবানের দখলে চলে গেছে।
কান্দাহার প্রদেশের সেনা কমান্ডার মোহাম্মাদ সাদেক ঈসা জানিয়েছেন, কান্দাহার শহরে তালেবানের সঙ্গে তাদের তীব্র সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় আফগান বিমান বাহিনীর হামলায় ৭০ জন তালেবান নিহত হয়েছে।
গজনি শহরের আশপাশে শনিবার দিনভর সংঘর্ষ হয়েছে এবং গজনি সিটি কর্পোরেশনের একজন কাউন্সিলর বলেছেন, তালেবানের সদস্যরা ঘরবাড়িতে ঢুকে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে তাদেরকে সরকারি সেনাদের বিরুদ্ধে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। তিনি আরও বলেন, গজনি প্রদেশের মালেস্তান, নাহুর ও জাগুরি জেলায় তালেবানের কয়েক দফা হামলা প্রতিহত করেছে সরকারি সেনারা।
বাগদিস প্রদেশের গভর্নর হিসামউদ্দিন শামস জানিয়েছেন, শুক্রবার রাত থেকে প্রদেশের ‘কালা নু’ শহরে আবারও হামলা চালিয়েছে তালেবান। রাতভর সংঘর্ষের পর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়ে তারা পিছু হটে গেছে।
এই গভর্নর বলেন, বাগদিসের প্রাদেশিক পরিষদের দুই সদস্য ফরিদ আখিজি ও খানজান জাফর সরকার পক্ষ ত্যাগ করে তালেবানে যোগ দিয়েছেন। এই দুই কর্মকর্তা এর আগে গোপনে তালেবানকে সহযোগিতা করেছেন এবং সরকারি বাহিনীকে পশ্চাদপসরণে উৎসাহ দিয়েছেন বলেও হিসামউদ্দিন শামস অভিযোগ করেন।
এর আগে আফগান ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ অভিযোগ করেছিলেন, বাগদিস থেকে নির্বাচিত আফগান সংসদ সদস্য আমিরশাহ নায়েবজাদা সরকারি সৈন্যদেরকে তালেবানের কাছে আত্মসমর্পন করতে উৎসাহ দিচ্ছেন। এই অভিযোগের জের ধরে আফগান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নায়েবজাদার দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
আফগানিস্তানের ইরান সীমান্তবর্তী পশ্চিমাঞ্চলীয় হেরাত প্রদেশেও শনিবার সংঘর্ষ অব্যাহত ছিল। শুক্রবার তালেবান হেরাত প্রদেশের সঙ্গে ইরানের সীমান্তবর্তী স্থলবন্দর ‘ইসলাম কালা’ দখল করার পর শনিবার এই প্রদেশের আরো কয়েকটি জেলা বিনা সংঘর্ষে তালেবানের দখলে চলে গেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় তালেবানের হাতে হেরাত প্রদেশের কারখ, কাহসান, গোলরান, কাশকে কোহনে, কাশকে রোবাত সাঙ্গিন, শিনদাঁদ, আদরাসকান ও পাশতুন জারগুন জেলার পতন হয়েছে।
এদিকে, আফগানিস্তানের সাবেক মুজাহিদ কমান্ডার ইসমাইল খান তালেবানের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, শুধু হেরাত নয় আফগানিস্তানের গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল তালেবানের দখলমুক্ত করার জন্য তিনি গণবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই করবেন। প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির নেতৃত্বাধীন আফগান সরকার ইসমাইল খানের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরে তালেবানের বরাত দিয়ে কোনো কোনো পশ্চিমা গণমাধ্যম খবর দিয়েছে, আফগানিস্তানের শতকরা ৮৫ ভাগ এলাকা তালেবান দখল করে নিয়েছে। তবে আফগান সরকার এই খবরের সত্যতা প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, তালেবান যদি এতো বিশাল অঞ্চল দখল করত তাহলে তাদের নেতারা এখনো পাকিস্তানে অবস্থান করতেন না।
আফগানিস্তানে ২০ বছরের দখলদারিত্বের অবসান ঘটিয়ে যখন মার্কিন সেনারা দেশটি থেকে চলে যাচ্ছে তখন আফগানিস্তানে তালেবানের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর সংঘর্ষের খবর আসছে।