ফুটপাতে বসে বই পড়েন তিনি, বই ভাড়াও দেন। সংগ্রহে রাখা প্রতিটি পুরনো বই মাত্র ১০ টাকা মূল্যে ভাড়া দেন তিনি। কিন্তু এতেও গ্রাহকদের জন্য জুড়ে দিয়েছেন বিশেষ শর্ত।
এমনই এক বইপড়ুয়া যুবকের দেখা মিলবে মুম্বাইয়ের আন্ধেরির ফুটপাতে। জীবনের দোলাচলে নিজের বাঁ হাতটি হারিয়েছেন তিনি। তবে একটি হাত নেই বলে কোনও ক্ষোভ, আফসোস নেই। বুকখোলা শার্ট, ভিতরে স্যান্ডো গেঞ্জি পরে ফুটপাথে বসে থাকতে দেখা যায় রাকেশকে। চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বই। ওই ফুটপাথে বসেই বই পড়েন তিনি।
জীবনে যার কোনোরকম বিলাসিতা নেই। বই পড়তে ভালোবাসেন। তাই সারাদিন বই পড়েই সময় কাটান। ফুটপাথে বসে বই ভাড়া দিয়ে রোজগারও করেন তিনি।
২০২০ সালে অবনীশ শরন নামের এক আইএএস কর্মকর্তা তার এক্স হ্যান্ডলে রাকেশের একটি ছবি পোস্ট করে তার সম্পর্কে লিখেছিলেন। তার পর থেকেই ঝড় ওঠে সামাজিক মাধ্যমে। অনেকেই আর্থিক সাহায্য করতে চেয়েছিলেন রাকেশকে। কিন্তু কোনোরকম সাহায্যই নেননি তিনি।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক পুরোনো সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, মানুষ ভাল ভাবে বাঁচার জন্যই তো অর্থ উপার্জন করেন। আমি যা করতে ভালোবাসি, যা আমায় বাঁচিয়ে রাখে তা সর্ব ক্ষণ আমাকে ঘিরে রয়েছে। এতেই আমার আনন্দ।
সাক্ষাৎকারে রাকেশ বলেছিলেন, খাবারের কোনও অভাব নেই। আমার কাছে আমার বই রয়েছে। মাথার উপরে ছাদও রয়েছে। আমার আবার আলাদা করে টাকা পয়সার কী দরকার?
সাক্ষাৎকারে রাকেশের বক্তব্য, যাদের কোনও আশ্রয় নেই, যাদের দিনের শেষে খাবার জোটে না, রাস্তায় রাস্তায় দিশাহীন হয়ে ঘুরে বেড়ান, তাদের সাহায্য করুন। আমার চেয়ে তারা সাহায্য পেলে বরং উপকৃত হবেন।
বই ভাড়া দিয়ে রোজগার করেন রাকেশ। নানা রকমের, নানা ভাষার বই সংগ্রহে রয়েছে তাঁর। অন্ধেরির ফুটপাথে সেই বইগুলি সাজিয়ে বসেন রাকেশ। কম দামে ওই পুরোনো বইগুলি ভাড়া দেন তিনি। কাজের ফাঁকে ফাঁকে বইও পড়েন রাকেশ।
১০ টাকার বিনিময়ে পুরোনো বই দেওয়ার সময় ক্রেতাদের কাছে শর্ত রাখেন রাকেশ। বই পড়ার পর আবার তা ফেরত দিতে হবে ঠিক যেমন অবস্থায় নেওয়া হয়েছিল সেই অবস্থাতেই।
রাকেশের দাবি, মানুষ তাদের শখ পূরণ করার জন্য টাকা খরচ করেন। কিন্তু তার জীবনের সমস্ত শখ-আহ্লাদ বইয়ের পাতার ভিতরেই লুকিয়ে রয়েছে। রাকেশের মতে কোনও টাকা খরচ না করে বিনামূল্যেই জীবনের শখ পূরণ করতে পারেন তিনি।