যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বুধবার (২৮ জুলাই) অনুষ্ঠিত 'দ্য রাইজ অব বেঙ্গল টাইগারঃ পটেনশিয়ালস অব ট্রেড এন্ড ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ' শীর্ষক সেমিনারে স্টেকহোল্ডারস মিটিং এ এই মন্তব্য করেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
এসময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম, অর্থমন্ত্রনালয়ের ইকোনমিক রিলেশন ডিভিশনের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শান্তা এসেট ম্যানেজমেন্টের ভাইস চেয়ারম্যান আরিফ খান।
বিএসইসি'র চেয়ারম্যান আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে হতে পারে আপনাদের সব থেকে ভালো অংশীদার এছাড়া আমাদের দেশে শিক্ষিত ও আধাশিক্ষিত শ্রমিক খুব সহযেই পাওয়া যায়। যা আমাদের খুব মূল্যবান সম্পদ। ব্যবসায়ের জন্য ইলেক্ট্রিসিটি, গ্যাস সহ সকল কিছুই এখন খুব সহজেই বাংলাদেশে পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া যেকোন সমস্যা সমাধানে সর্বদা আমরা তৈরি আছি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে অনেক ব্যবসা- বাণিজ্য এবং অংশীদারিত্ব ব্যবসায় রয়েছে। এসব সুযোগ থাকার কারণে আমরা অংশীদার খুজছি। এখানে বিনিয়োগ করে লাভ করা যাচ্ছে, তাই বিনিয়োগকারী খুজছি। বাংলাদেশের সরকার ব্যবসায়ের সকল খাতকে সুসংঘঠিতভাবে সাজিয়েছে। এর ফলে ব্যবসায়ের সকল পদ্ধতিগুলো খুব সহজ হয়েছে। এদিকে আমাদের রয়েছে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (বেপজা)। বেপজা সমসময় রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিনিয়োগের আমন্ত্রন জানাই। এছাড়াও রয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কতৃপক্ষ (বেজা)। বেজাও সর্বদা ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ওয়ান স্টপ সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
এসময় তিনি বলেন, আমাদের দেশে ভালো শিক্ষিত মানুষ রয়েছে। যারা ব্যবসায়ে সফলতা অর্জন করেছেন। তারা আপনাদের ব্যবসায়ে অংশীদের হতে পারবে। আমাদের দেশের বাজার অনেক বড়। প্রচুর জনসংখ্যাও রয়েছে। বাংলাদেশের বাজার ফ্রান্স, ইতালি এবং ইংল্যান্ডের কাছাকাছি। এখানকার মানুষের ক্রয়ক্ষমতা অনেক বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন সবদিক থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি রাজ্য। অর্থনৈতিক দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবথেকে শক্তিশালী একটি দেশ। তাই আজ আমরা বিনিয়োগ সচেতনতা পরিকল্পনা নিয়ে এখানে এসেছি।
এছাড়াও তিনি বলেন, এছাড়া আমাদের এক্সপোর্ট প্রোসেসিং জোন অথরিটি (বেপজা) খুবই ভালো করছে। বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) সবার সঙ্গে একসাথে মিলে বিনিয়োগকারীদের দেশে আমন্ত্রন জানাচ্ছে। আমরা এখানে এসেছি, আমাদের অবস্থান সম্পর্কে জানানোর জন্য। আমরা যে কোন দেশের সম্মুখিন হতে প্রস্তত। আপনাদের যে কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে আমরা প্রস্তত আছি। বাংলাদেশের অনেক উন্নতি হচ্ছে। এটি সরকারের জন্য একটি বড় সফলতা।
[caption id="attachment_77417" align="alignnone" width="800"] ছবি: অর্থসংবাদ[/caption]
উল্লেখ্য, দেশের অর্থনীতির সম্ভাবনা তুলে ধরে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগ আকর্ষনে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ৪ টি শহরে ১০ দিনের রোড শোর আয়োজন করে বিএসইসি। যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনীতি বিষয়ক ১০দিন ব্যাপি এই রোড শোতে বাংলাদেশের অর্থনীতির সক্ষমতা, বিনিয়োগ, বাণিজ্য, বাংলাদেশি পণ্য ও সেবা, শেয়ারবাজার এবং বন্ড মার্কেটকে তুলে ধরতে এ আয়োজন করা হয়েছে। অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তির বিবেচনায় বিশ্বে সবচেয়ে শক্তিশালী এই দেশটিতে বাংলাদেশকে তুলে ধরে বিদেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ আকর্ষণ এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য। বিশেষ করে প্রবাসীরা যাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে সে বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
সকাল সাড়ে ৯টায় নিউইয়র্কের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এই অনুষ্ঠানের উদ্ধোধন হয়। পর্যায়ক্রমে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ শহর ওয়াশিংটন ডিসিতে দ্বিতীয় সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।এরপর লসএঞ্জেলস এবং সানফ্র্যান্সিকোতে রোড শো অনুষ্ঠিত হবে। শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রকসংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক বাজারে বন্ড ছাড়ার ঘোষনা দিয়েছে বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস কোম্পানি ‘নগদ’।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) পুর্বাভাস অনুসারে করোনার মধ্যে ২৩ দেশ অর্থনৈতিকভাবে ইতিবাচক অবস্থানে থাকবে। সংস্থাটি বলছে, এরমধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশে মোট শ্রমশক্তি ৭ কোটি। এরমধ্যে সাড়ে ৫ কোটিই বয়সে তরুন।
আগামী ৩০ জুলাই লস এঞ্জেলসের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত হবে বিনিয়োগকারী সম্মেলন। সর্বশেষ ২ আগষ্ট সানফ্রান্সিসকোর হোটেল হায়াত রিজেন্সিতে অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ প্রযুক্তিখাতে বিনিয়োগ সম্মেলন। এসব সম্মেলনে বাংলাদেশের সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তা, বেসরকারি উদ্যোক্তা, অনিবাসী বাংলাদেশি এবং বিদেশি উদ্যোক্তারা অংশ নিয়েছেন। আয়োজকরা ধারনা করছেন, এর মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি নতুন করে পরিচিতি পাবে।