যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ শহর লসএঞ্জেলসে শুক্রবার (৩০ জুলাই) বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে রোড শোতে বক্তারা এসব কথা বলেন।
লস এঞ্জেলসে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত রোড শো’র মূল বিষয়বস্তু রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার : পটেনশিয়াল ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট । অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম, রফতানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম, ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসনীম এ খান, সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাশরুর আরেফিন এবং আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম সারওয়ার।
অনুষ্ঠানে প্রবাসীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিভিন্ন জটিলতা নিরসন হলে প্রবাসীরা ৫০ কোাটি ডলার বিনিয়োগে প্রস্তুত। এ সময়ে বিমান বন্দরে অভিবাসী বাংলাদেশিদের (এনআরবি) জন্য আলাদা গেট দাবি করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে স্থিতিশীল বাংলাদেশ। এ অবস্থায় বাংলাদেশে বিনিয়োগ লাভজনক।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাবনা তুলে ধরে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগ আর্কষণে যুক্তরাষ্ট্রের ৪টি গুরুত্বপূর্ণ শহরে ১০দিনের রোড শোর আয়োজন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে নিউইর্য়ক, ওয়াশিংটন ও লস এঞ্জেলসে রোড শো শেষ হয়েছে। আগামী ২ আগষ্ট সানফ্রানসিসকো অনুষ্ঠিত হবে এই কর্মসূচী। শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রকসংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর আয়োজন করেছে। অর্থনৈতিকভাবে বিশ্বে সবচেয়ে প্রভাবশালী এই দেশটিতে বাংলাদেশকে তুলে ধরে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ এই আয়োজনের উদ্দেশ্য। বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশিরা যাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে সে বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে সালমান এফ রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্যতম অংশীদার। আমরা দেশটির সহায়তা নয়, বিনিয়োগ চাই। তিনি বলেন, ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে যৌথ উদ্যোগের কোম্পানি একেবারে সহজ। তিনি বলেন, প্রবাসীদের বিনিয়োগে এগিয়ে আসা উচিত। আর প্রবাসীদের সব ধরনের জটিলতা কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিমান বন্দরে এনআরবিদের গেটের ব্যাপারে সালমান এফ রহমান বলেন, বিষয়টি অত্যান্ত যৌক্তিক। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে, এ ব্যাপারে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। তিনি বলেন, চতুর্থ ও পঞ্চম শিল্পখাত মাথায় রেখে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। শিল্পখাতে বিভিন্ন কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, শিল্পভখাতের সেবা গ্রাহকের দোড় গোড়ায় পৌছে গেছে।
প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির সক্ষমতা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। অভ্যন্তরীণ বিশাল বাজার রয়েছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। কমমূল্যে শ্রমিক, বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং অন্যান্য সেবা মিলছে। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক দিক থেকে বিশ্বের প্রথম অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র। সে কারণে রফতানিতে বিভিন্ন দেশে উচ্চ শুল্ক দিতে হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ এক্ষেত্রে সুবিধা পাচ্ছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগ করলে চীন, ভারত, ইউরোপ ও জাপানের বাজার থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধা নিতে পারবে। অনুষ্ঠানে অ্যালায়েন্স ক্যাপিটাল এসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার আসাদুল ইসলাম রিপনের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশের শেয়ারবাজার অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। ইক্যুইটি মার্কেটের পাশাপাশি বন্ড,স্মলক্যাপ এবং অন্যান্য পণ্য আসছে। অর্থাৎ পণ্যের বহুমুখীকরণ হচ্ছে।
তিনি বলেন, সামগ্রিকভাবে মূল্যায়ন করলে আগামী বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাবনা বিশাল। কিন্তু আমাদের অর্থনীতি যে অর্জন ও সম্ভাবনা রয়েছে, উন্নত দেশগুলোর বিনিয়োগকারীদের কাছে তা তুলে ধরা হয়নি। যে কারণে আমাদের ওইভাবে বিদেশি বিনিয়োগ আসেনি। এ কারণে বিদেশি বিনিয়োগ আর্কষণের জন্য আমরা এ ধরনের রোড শোর উদ্যোগ নিয়েছি। কেউ কেউ বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে রোড শো কেন। আমাদের জবাব হচ্ছে সহায়তা নয়, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ চাই।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বিশ্বব্যাংকের পুর্বাভাস অনুসারে ২০৫০ সালে বিশ্বের ২৩তম অর্থনীতির দেশ হবে বাংলাদেশ। সংস্থাটির তথ্য অনুসারে দক্ষিণ এশিয়ায় দ্রুত বর্ধণশীল অর্থনীতির দেশ হলো বাংলাদেশ। একই পুর্বাভাস দিয়েছে আরেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হংকং সাংহাই ব্যাংকিং কর্পোরেশন (এইচএসবিসি)। গত দশ বছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ। আর মোট জিডিপিতে শিল্পখাতের অবদান ৩১ শতাংশ। প্রবৃদ্ধিকে সাপোর্ট দিতে ২০২০ সালে বাংলাদেশের অবকাঠামোখাতে ৪০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। ২০১১ সালে বাংলাদেশের মাথা পিছু আয় ছিল ৮৬০ মার্কিন ডলার। বর্তমানে তা ২ হাজার ২২৭ ডলারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৭ বিলিয়ন ডলারে পৌছেছে। করোনার মধ্যেও ২০২০ সালে প্রবাসী আয়ে (রেমিট্যান্স) ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) পুর্বাভাস অনুসারে করোনার মধ্যে ২৩ দেশ অর্থনৈতিকভাবে ইতিবাচক অবস্থানে থাকবে। সংস্থাটি বলছে, এরমধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশে মোট শ্রমশক্তি ৭ কোটি। এর মধ্যে সাড়ে ৫ কোটিই বয়সে তরুন। ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি অত্যান্ত সম্ভাবনাময়।